সনাতন ধর্মমতে পিতৃপক্ষের অবসান এবং দেবীপক্ষের সূচনার সন্ধিক্ষণের তিথি হলো মহালয়া। মহালয়ার তিথি অনুযায়ী, পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি প্রদান করা হয়। সনাতন ধর্ম অনুসারে এই দিনটিতেই প্রয়াতদের আত্মা পিতৃলোক থেকে মর্ত্যলোকে নেমে আসে। আত্মার এই সমাবেশকেই বলা হয় মহালয়। অপরদিকে, পিতৃপক্ষের শেষ লগ্নকে তর্পণাদির জন্য একটি বিশেষ পক্ষ হিসেবেই ধরা হয়। ছবি: পল্লবী দে
হিন্দু ধর্ম অনুসারে কোনও শুভ কাজের আগে প্রয়াত পূর্বপুরুষদের জন্য তর্পণ করতে হয়, কার্যাদি-অঞ্জলি প্রদান করতে হয়। শ্রীরামচন্দ্র লঙ্কা বিজয়ের আগে এমনই করেছিলেন। সেই অনুসারে মহালয়া তিথিতে যাঁরা পিতৃ-মাতৃহীন তাঁরা পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে অঞ্জলি প্রদান করেন। ছবি: পল্লবী দে
মহালয়াতে যাঁরা গঙ্গায় অঞ্জলি প্রদান করেন, তাঁরা শুধু পূর্বপুরুষদের নয়, পৃথিবীর সামগ্রিক ভালোর জন্য প্রার্থনা ও অঞ্জলি প্রদান করেন। যাঁদের পুত্র নেই, যাঁদের কেউ নেই, আজ তাঁদেরও স্মরণ করে অঞ্জলী প্রদান করতে হয়। ছবি: পল্লবী দে
তর্পণমন্ত্রে বলা হয়, ওঁ নমঃ যে বান্ধবা অবান্ধবা বা, যে অন্য জন্মনি বান্ধবাঃ। তে তৃপ্তিং অখিলাং যান্ত, যে চ অস্মৎ তোয়-কাঙ্খিণঃ। অর্থাৎ, যাঁরা আমাদের বন্ধু ছিলেন, এবং যাঁরা বন্ধু নন, যাঁরা জন্ম-জন্মান্তরে আমাদের বন্ধু ছিলেন, এবং যাঁরা আমাদের কাছে জলের প্রতাশা করেন, তাঁরা সম্পূর্ণরূপে তৃপ্তিলাভ করুন। ছবি: পল্লবী দে
তর্পণ শব্দের ব্যুৎপত্তি হল তৃপ + অনট। তৃপ ধাতুর অর্থ তৃপ্তি সাধন করা। এখানে তৃপ্তি সাধন বলতে দেব-ঋষি- পিতৃ-মনুষ্যগণের তৃপ্তিসাধনকে বোঝানো হয়েছে। সাধারণভাবে মৃত পূর্বপুরুষদের জলদান করাকেই তর্পণ বলা হয়। ছবি: পল্লবী দে
হিন্দু শাস্ত্রানুসারে দেহের বিনাশ হলেও আত্মার বিনাশ হয় না। তাই আমাদের পিতৃগণের দেহে যে আত্মা ছিলেন তিনি এখন যে শরীরেই অবস্থান করুন সেই শরীরেই জলক্রিয়া ও শ্রাদ্ধের দ্বারা তিনি তৃপ্তি লাভ করে থাকেন। ছবি: পল্লবী দে
শাস্ত্রমতে তর্পণ জলের ও শাস্ত্রীয় দ্রব্যের পরমাণু অর্থাৎ সূক্ষ্মতম কণা মন্ত্রবলে তাঁর বর্তমান দেহের ভক্ষ্য বস্তুর পর মাণুর সঙ্গে মিলিত হয়ে থাকে। তাই দেব-ঋষি-পিতৃ-মনুষ্যগণের তর্পণ করলে তাঁরা খুশি হন ও বিনিময়ে তাঁরা আমাদের সুখ, সমৃদ্ধি, সাফল্য, পরিপাকশক্তির বৃদ্ধি ও দীর্ঘায়ু দান করেন। ছবি: পল্লবী দে
মনে করা হয়, মহালয়ার দিনেই দেবীদুর্গা মর্ত্যলোকে আবির্ভূতা হন। তাই পিতৃপক্ষের শেষ লগ্নে তর্পণ করা হয় এই মন্ত্রের সঙ্গে: পিতা স্বর্গঃ পিতা ধর্ম্মঃ পিতা হি পরমন্তপঃ। পিতরি প্রীতিমাপন্নে প্রীয়তে সর্ব্ব দেবতাঃ। ছবি- পল্লবী দে
শোক, তাপ, দুঃখ, অমঙ্গল, অন্ধকার কাটিয়ে মঙ্গল, আনন্দ ও আলোর দিশারী অসুরবিনাশিনী উমাকে হিমালয় থেকে মর্ত্যে বরণ করে নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয় আজ থেকেই। ছবি- পল্লবী দে