-
প্রতি বছর মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়। লিঙ্গবৈষম্য দূর করতে, নারীদের সমানাধিকার এবং নারী শ্রমিকদের প্রতি সম্মানের জন্যেই এই দিনটিকে গুরত্ব দেওয়া হয়। আগামীকাল বিশ্বজুড়ে পালিত হবে নারী দিবস। বর্তমানে পুরুষদের থেকে নারীরা কোন অংশেই পিছিয়ে নেই। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
এরকমই একজন নারী প্রীতিকণা গোস্বামী। মাস দুয়েক হল দেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘পদ্মশ্রী’ পেয়েছেন। অদম্য জেদকে সঙ্গী করে মিলেছে জীবনভর তপস্যার স্বীকৃতি। বাংলার বহু মহিলাকে শিখিয়েছেন স্বাবলম্বী হতে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরের কামরাবাদের একটি ছোট্ট পাড়া। পাড়ার মুখের ছোট মন্দিরের গা ঘেঁষে সঙ্কীর্ণ গলি চলে গিয়েছে। এখানেই থাকেন প্রীতিকণা গোস্বামী। ছিমছাম সাদামাঠা বাড়ি। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
সেলাই দিদিমণি নামেই তিনি সকলের কাছে পরিচিত। বাড়ির চারপাশ জুড়ে গাছ। দোতলার ঘরে বসন্তে কোকিলের ডাক বেশ স্পষ্ট শোনা যায়। এই ঘরেই সেলাই দিদিমণির সেলাই স্কুল। সাতজন ছাত্রীর পাশে তিনিও মনোযোগ দিয়ে সুচসুতো দিয়ে কাপড়ের উপর ফুটিয়ে তুলছেন সেলাইয়ের মিনাকারী কাজ। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
সেই একরত্তি বয়সে বাবাকে হারিয়েছেন। এরপর থেকে শুরু জীবনকে যাপনের লড়াই। প্রতি পদে কঠিন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে আজ এই বৃদ্ধা সফল। প্রীতিকণা গোস্বামীর কথায়, তিনি ছোটবেলা থেকেই সেলাইয়ের কাজে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। বান্ধবী রমা দাসের সেলাইয়ের কাজ তাঁকে উৎসাহ দেয়। রমাদেবী সেলাইয়ের কাজের অর্ডার পেতেন। তারই সূত্র ধরে পীতাম্বরি নামে একটি সংস্থা তাঁকে সেলাইয়ের কাজ দেন। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
এরই মধ্যে ১৯৭৭ সালে প্রীতিকণাদেবীর বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পরেও পড়াশোনা চালিয়ে যান তিনি। সিটি কলেজে ভর্তি হন। তবে সন্তানসম্ভবা হয়ে যাওয়ায় আর পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি তিনি। যদিও সেলাইয়ের কাজ কিন্তু থেমে থাকেনি। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
১৯৯০ সালে ওয়েস্টবেঙ্গল ক্রাফট কাউন্সিল থেকে নকসিকাঁথার কাজের অর্ডার আসে। সেই কাজ এতটাই ভালো হয় যে পরের বছরই নকসিকাঁথার কাজ শেখানোর একটি বিভাগ চালু করা হয়। যে বিভাগটির দায়িত্ব এসে বর্তায় প্রীতিকণাদেবীর কাঁধেই। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
২০০১ সালে প্রীতিকণা গোস্বামী তাঁর নিখুঁত কাজের জন্য রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পান। দেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালামের হাত থেকে জাতীয় পুরষ্কার পান তিনি। বাংলার শত শত বছর পুরনো এক ঐতিহ্য হল নকসিকাঁথা এবং সেলাইয়ের কাজ। এই শিল্প এখন বিলুপ্তপ্রায়। প্রীতিকণা দেবী একমাত্র যিনি এই নকশিকাঁথা এবং সূচিশিল্পের উপর কাজ করে চলেছেন। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
একটা সময় ছিল যখন বাড়ির বউ, মেয়েরা মিলে বিকেলে বাড়ির উঠোনে গল্প করত। কেউ পাঁচালী পড়ত আর কেউ সুখ দুঃখের গল্পে পুরনো শাড়িগুলো ফেলে না দিয়ে এক সাথে করে কাঁথা বানিয়ে তার মাঝে নানা নকশা করত। আবার কেউ নিজেদের কল্পনা মিশিয়ে সেলাইয়ের কাজে ফুটিয়ে তুলতো নানা রকমের সুতির কাপড়ের উপর।
-
এখন হারিয়ে গিয়েছে এসব পুরনো নকশা। হারিয়ে গেছে সেলাই, লহরী কাঁথা, আনারসি, বাঁকা সেলাই, সুজনি কাঁথা, ঝিলমিল পাড়, পান পাড়, বক্স পাড়, ধানের ছড়া পাড়ের মতো ডিজাইন। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
প্রীতিকণা গোস্বামী বলেন, “এখন মেয়েরা অনেক এডভান্স ফ্যাশন সচেতন। হাতে সেলাই কাজের জন্যে অনেক ধৈর্যের প্রয়োজন। আগেরকার দিনে সবাই মিলে নকশা আকত, তাদের মনের মাধূর্য দিয়ে,কারো কোন ক্লান্তি ছিল না, কোন কোন কাথা শেলাই করতে বছর লেগে যেত তবু সখ করে নাত জামাই, মেয়ে শ্বশুর বাড়িতে উপহার দেওয়ার জন্য বাড়ির নানা বয়সের মহিলারা সবাই মিলে নকশা আকত, তাদের মনের মাধূর্য দিয়ে, কারো কোন ক্লান্তি ছিল না। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
কোন কোন কাঁথা শেলাই করতে বছর লেগে যেত। এখনও আমাদের যেকোনো সুক্ষ সেলাইয়ের কাজ করতে অনেক সময় লেগে যায়। আমার অবর্তমানে মেয়েদের এসব সেলাইয়ের কাজ শিখিয়ে দিয়ে যেতে চাই।” এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
সেলাই দিদিমণির হাত ধরে এখন অনেক মেয়েরা নিজের পায়ের মাটি শক্ত করেছে। আর্থিকভাবেও অনেকে বেশ সচ্ছল। প্রীতিকণার কাজ আন্তর্জাতিক স্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। কাঁথাস্টিচের শিল্প বাংলার এক প্রাচীন ও পারম্পরিক শিল্প। ঐতিহ্য বজায় রাখতে বৃদ্ধ বয়সেও যতসম্ভব কাজ করে যাচ্ছেন সেলাই দিদিমণি। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
নারীদের স্বাবলম্বী হতে শেখাচ্ছেন নকশিকাঁথার সেলাই দিদিমণি
ঝুলিতে ‘পদ্মশ্রী’। অদম্য জেদকে সঙ্গী করে মিলেছে জীবনভর তপস্যার স্বীকৃতি।
Web Title: Padmashree pritikana goswami is trying to empower women