
বিশ্বজুড়ে এখন একটাই সমস্যা পরিবেশ দূষণ। তার সঙ্গে বিশ্ব উষ্ণায়ন। খুব দ্রুত গলছে দুই মেরুর বরফ। বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। পৃথিবীর তাবড় তাবড় পরিবেশবিদরা জানিয়ে দিয়েছেন, যে হারে সমুদ্রের জলস্তর বাড়ছে তাতে অচিরেই মানচিত্র থেকে মুছে যাবে বেশ কয়েকটি দেশ। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
পরিবেশবিদদের এই আশঙ্কার বার্তা অনেকদিন আগে থেকেই শুনিয়ে আসছে। এই নিয়ে সব দেশে হামেশাই হচ্ছে কতশত বৈঠক। এই পরিবেশ ও বিশ্ব উষ্ণায়নের ধাক্কায় বাদ পড়বে না এই বাংলাও। বিজ্ঞানীদের অনেকেই ইতিমধ্যে এই আশঙ্কাই প্রকাশ করেছেন। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
এমনকি খোদ কলকাতার ভবিষ্যতও অন্ধকার। সম্প্রতি IPCC-এর ২০২১ সালের রিপোর্টে উঠে এসেছে এমনই এক তথ্য। বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে জলমগ্ন হতে পারে বিশ্বের ৯টি প্রধান শহর। যার মধ্যে কলকাতাও ২০৩০ সালের মধ্যেই জলের তলায় থাকতে পারে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
একেক সময় নানান অঘটন, কখনও বন্যা, কখনও খরা অথবা দাবানলের মতো ঘটনা সামনে এসেছে। সমুদ্রের উচ্চতা বাড়ছে। ক্রমে ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে একটা দ্বীপ। নদী বেয়ে আসা সামুদ্রিক জোয়ার ফিরে যাওয়ার সময় ধুয়েমুছে নিয়ে যাচ্ছে তটভূমির বালি। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
কত যে বাঁধ ভেঙেছে তার হিসাব কষতে গেলে সেচ দপ্তরের রেকর্ড বুক ঘাঁটতে হবে। ১২ বছর আগের আয়লার সাক্ষ্য এখনও দগদগে ঘায়ের মতো ছড়িয়ে রয়েছে সুন্দরবনে। গত বছর আমফান আর এই বছর ইয়াসের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে সুন্দরবনের একাধিক এলাকা। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
ভাঙা বাঁধ, ডালপাতাহীন স্কন্ধকাটা গাছ, ভেঙে পড়া নারকেলের সারি, হাড় কঙ্কাল বের করা দু’চারটের ইটের দেওয়াল। মৌসুনি দ্বীপের বালিয়াড়া গ্রামে ঘূর্ণিঝড় আর নদী যে সব তছনছ করেছে তার ক্ষত এখনও টাটকা। যত দূর চোখ যাচ্ছে শুধু জল আর জল। আর ভেঙে যাওয়া বাঁধ। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
বালিয়ারা সল্টগিরি একটা সময় ইংরেজদের লবণ চাষের জায়গা ছিল। এই গ্রামেরই বাসিন্দা লক্ষ্মী হাঁসদা বলে না দিলে বোঝার উপায় ছিল না, কিছুদিন আগেও সেখানেই ছিল আস্ত একটা জনপদ। বসত-বাড়ি, পাকা রাস্তা, স্কুল, ডাক্তারখানা! আরও কত কী! সম্পূর্ণ একটা জনবসতি। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
এখানেই ছিল লক্ষ্মীর একতলা পাকা বাড়ি। সবই এখন নদীর গর্ভে। নদী ভাঙনে মুছে গিয়েছে একটা জায়গার পুরো অস্তিত্ব। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত মৌসুনি। এই দ্বীপের কাছাকাছি বালিয়াড়া। ইয়াসের আতঙ্ক কাটিয়ে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার চেষ্টাও চলছিল পুরোদমে। কিন্তু সেই চেষ্টা জলে ভাসিয়ে নিয়ে গেল নদী। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
অমাবস্যার ভরা কোটালে জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হল এই দ্বীপের বেশ কিছু গ্রাম। জলের চাপে বাঁধের মাটি ৫০০ মিটার ধুয়ে গিয়েছে। এখানের মানুষ যেন ভাঙা গড়াতেই ব্যাস্ত। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
স্থানীয় বাসিন্দা শ্রীকান্ত পাল আফসোস করছিলেন, “সাতজনের সংসার। নদীর ধারে একটা বাড়ি ছিল। তার সঙ্গে কিছু জমি। সবই গিয়েছে। এখন কোনও কাজে নেই। কোনওমতে মাথা গোঁজার জন্যে একটা ছোট্ট বেড়া বাড়িতে মেয়েদের নিয়ে থাকতে হচ্ছে। নদী যেভাবে এগোচ্ছে তাতে এটাও জলের তলায় যাবে” কথা বলতে বলতেই গলা ধরে আসছিল ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ শ্রীকান্তের। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
পূর্ণিমা-অমাবস্যায় যেভাবে দুর্যোগ বাড়ছে, তাতে মনে হচ্ছে, চিনাই নদী ও বঙ্গোপসাগর যেন গিলে খেতে আসছে মৌসুনি দ্বীপকে। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ নদী থেকে যেভাবে বালি তুলে নেওয়া হয়েছে তাতে মাটি বেড়িয়ে পড়েছে। এভাবেই রোজ বাড়ছে ভুমিক্ষয়। প্রশাসনের এই নিয়ে কোনও মাথা ব্যথা নেই। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
তথ্য বলছে ১৯৬৯ সাল থেকে ২০১০ পর্যন্ত প্রায় ২৫ শতাংশ ভূমিক্ষয় হয়েছে। ২০১০ সালে ইউএনডিপি এক রিপোর্টে বলেছে, ব্যবস্থা গ্রহণ করা না-হলে ২০২০ সালের মধ্যে আরও ১৫ শতাংশ ভূমিক্ষয় ঘটবে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
বিগত ১২ বছরে চারটি বড় সাইক্লোনের কবলে পড়েছে এই দ্বীপ। আয়লা ২০০৯, বুলবুল ২০১৯, আমপান ২০২০, ইয়াস ২০২১। দক্ষিণে ভাঙন, ধস সবচেয়ে বেশি। দ্বীপ ক্রমে ক্রমে তার আয়তন হারাচ্ছে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
দ্বীপ তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষ ধারাবাহিক ভাবে হারাচ্ছেন ঘরবাড়ি, চাষের জমি, মাছের ভেড়ি। আয়লার পর প্রায় ১১ বছর হল বালিয়াড়ার এক বড় অংশেই আর চাষবাস হয় না। ভূমিহারার সংখ্যা বাড়ছে দ্বিগুণ। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
নদীর স্রোত এখন দ্বীপের গা ঘেঁষে বইছে। প্রচণ্ড স্রোতে ভূপৃষ্ঠের যে অংশটি বালির, সেটি দ্রুত ক্ষয়ে যাচ্ছে। ফলে উপরে নদীর পাড় ঝুলছে শূন্যে। মাত্রাতিরিক্ত ভারী হয়ে পড়লে পাড় ঝুপ করে ধসে পড়ে। তারই সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে সর্বস্ব। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
এখন শীতকালে নদীর ভাঙন কিছুটা কম থাকে। আগামী বছরের বর্ষায় কী হবে কারো জানা নেই। দ্বীপের বাসিন্দা শেফালি ভুঁইয়া নিজের ভেঙে যাওয়া বাড়ির উঠানে বসে বলছিলেন, “যদি নদীর পাড়গুলোকে শক্তপোক্ত করতে পারত তবে রক্ষা পেতাম।” এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
এত এত মানুষ আসেন, ছবি তোলেন আর তারপর অদৃশ্য হয়ে যান। কিন্তু আমাদের পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তনই হয় না। সরকার কি আদৌ আমাদের নিয়ে ভাবেন কিনা জানা নেই।এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
এই দ্বীপ ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়ে আসছে, “আমাদের জমিজমা ঘরবাড়ি সব নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ গ্রাহ্যই করে না। আমাদের অস্তিত্বও হয়তো নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে”। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ