
প্রতিনিয়ত চলছে টিকে থাকার লড়াই। সমকাম নিয়ে এই সমাজের কুসংস্কার এবং গোঁড়ামি যায়নি। বহু প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে যেতে হচ্ছে রূপান্তরকামী মানুষদের। রূপান্তরকামীদের অধিকার অর্জনের লড়াই ঘরে এবং ঘরের বাইরে সমানভাবেই চলে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

এই সমকামীদের কী ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তা সকলেই কম বেশি জানেন। সমস্যার কথা জেনেও এই বিষয়গুলোকে অনেকে গুরুত্ব দিতে চায়না। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ


বছরদুয়েক আগে বাংলার সম্ভবত প্রথম ‘রামধনু বিবাহ’ বা ‘রেনবো ওয়েডিং’ হয়েছিল তিস্তা দাস এবং দীপন চক্রবর্তীর। এই বিয়ে সারা দেশে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। দেশের বাইরেও চর্চা হয়েছিল এই বিয়ে নিয়ে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

কেটে গিয়েছে অনেকটা সময়। তিস্তা দাস এবং দীপন চক্রবর্তীর মোটামুটি কাটছিল। একদম ছন্দপতন হল ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরুতেই। নিজের বাড়ির সামনেই আক্রান্ত হলেন এই দম্পতি। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

আগরপাড়ায় একটি ভাড়ার দোকানকে কেন্দ্র করে তিস্তা এবং দীপনের উপর হামলা করে স্থানীয় এক দুষ্কৃতি। অভিযোগ এই দম্পতির বাসস্থান সংলগ্ন দোকানঘরকে বেআইনিভাবে দখল করা নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে গেলে তাদের যৌন নিগ্রহ ও শারীরিক অত্যাচার করা হয়। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

গতবছর লকডাউন হয়ে যাওয়ার পর থেকে কাজ নেই তিস্তা এবং দীপনের। দীপনের অভিযোগ, ‘ট্রান্সজিশন’ শুরুর পর থেকেই তার কর্মস্থলে নানান সমস্যা শুরু হতে থাকে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

এরপর একদিন হঠাৎ ‘টার্মিনেশন’ লেটার হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়। তারপর থেকে খুব কষ্টে দিন কাটছে। একই অবস্থা তিস্তার দাসেরও। এরকম কঠিন সময়ে দাঁড়িয়ে তাঁদের বাড়ির নিচের একটি ঘরে দোকান চালু করার কথা ভাবেন এই যুগল। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

তখনই স্থানীয় এক দুষ্কৃতি অবৈধভাবে তাদের দোকান জবর দখলের চেষ্টা করে। এর প্রতিবাদ করতে গেলে মারধরের পাশাপাশি যৌনহেনস্থা করা হয় তাঁদের। তিস্তা এবং দীপন জানান, অভিযোগের কথা জানাতে গেলে প্রথমে কেউ শুনতেই চাইনি। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

পরবর্তীতে অনেক চেষ্টার পরে তারা আইনি সাহায্যে পেতে শুরু করেন। যদিও এখনও তাদের মামলার কতটা সুরহা হবে এই নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। দীপন বলেন, প্রতিদিন কোনও না কোন ট্রান্সপার্সনকে যৌনহেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

পর্যাপ্ত পরিমান পরিকাঠামোর অভাবে এই সব ঘটনা ধামাচাপা পরে যায়। তেমন গুরত্ব দিয়ে দেখা হয়না। ২০২০ সালেই এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যা খাতায় কলমে লিপিবদ্ধ নেই। দেশে আইন থাকলেও রুপান্তরকামীরা ন্যায্য বিচার পায়না। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

কলকাতায় বিভিন্ন রুপান্তরকামী সমাজসেবী সংঘঠনের তথ্য বলছে লকডাউনের পর থেকে শুধুমাত্র কলকাতাতেই ট্রান্সজেন্ডারদের ওপর সেক্স্যুয়াল ভায়োলেন্স আগের থেকে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। অনেকে সমাজের ভয়ে তা মুখ ফুটে বলতে পারেনা। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

একইভাবে গত বছরেই কয়েকবার যৌন হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে তমোঘ্ন তপোশিধ্যকেও। তমোঘ্ন বর্তমানে একজন সরকারী কর্মচারী। সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেও তাঁকে প্রতিদিন সহ্য করতে হয় নানা অপমান। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

তমোঘ্নের অভিযোগ, গত বছর এক মাসের মধ্যেই তিনবার তাঁকে যৌন হেনস্থা করা হয়। তাঁকে এখনও মানসিক অবসাদে ভুগতে হচ্ছে। তমোঘ্ন আরও বলেন, তার মতন মানুষরা কোন জামা কাপড় পড়ে রাস্তায় বেরোলে তাদের বিদ্রূপের মুখে পরতে হয়। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

“সমাজের লোকেরা মনে করেন, আমরা সেজে বেড়োচ্ছি তারা ভোগ করবে বলে। রাস্তঘাটে চলার সময় ইচ্ছে করে গায়ে চিমটি কাটবে। টিটকিরি করে বাজে মন্তব্য ছুড়ে দেবে এটাই যেন তৃতীয়লিঙ্গের মানুষদের কাম্য।” এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

সামাজিক লিঙ্গ বৈষম্যের ঘটনা নতুন নয়। রূপান্তরকামী মানুষদের প্রতি কোনওরকম যৌন বা অন্য অত্যাচারের অপরাধ প্রমাণিত হলে অপরাধীকে সাজাভোগ ও জরিমানার ব্যবস্থার কথাও উল্লেখ্য রয়েছে সংবিধানে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

এসব আছে যেন শুধু যেন কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ। অনেক ক্ষেত্রে দোষীরা প্রমাণের অভাবে কোনোরকম সাজাভোগ ছাড়াই রেহায় পেয়ে যান। ইদানীং দেশে একের পর এক ঘটে চলেছে এরকমই লিঙ্গ হিংস্রতার ঘটনা। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

একাধিকবার সামনে এসেছে রূপান্তরিত মানুষদের ওপর হিংসার ঘটনা। ২০১৪ সালে নালসা আইন প্রথম দেশে রূপান্তরকামী মানুষদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়। ২০১৯ সালে অবদমনকারী ৩৭৭ ধারা রদ করা হয়। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

কিন্তু এসবের মধ্যেও সামাজিক স্তরে অবস্থাটা খুব একটা বদলায়নি। ২০১৯ সালের একটি রিপোর্ট বলছে দেশের রূপান্তরকামী মানুষদের ৮৫ শতাংশই নিজের পরিবারের কাছে স্বীকৃতি পান না। কেউ কেউ বাড়ি ছেড়ে হারিয়ে যান। কিংবা কেউ আত্যহত্মার মতন পথ বেঁচে নেন। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ