
বিনোদনের সংজ্ঞা এখন বদলে গিয়েছে। সিনেমা হলে অনেকে মিলে হুল্লোড় করে সিনেমা দেখার মানুষও এখন নেই। হাইস্পিড ইন্টারনেটের যুগে সবার প্রথম পছন্দ ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। বাড়িতেই সিনেমা দেখে নেওয়া। না হলে ডাউনলোড অপশন তো আছেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আজ বদলে গিয়েছে শহরের বিনোদনের ইতিহাস। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ

কলকাতার মানুষের এমন একটা দিন ছিল যখন ছুটির দিনে গমগম করতো সব সিনেমা হলগুলো। তখন এই শহরে মাল্টিপ্ল্যাক্স ছিল না। মাল্টিপ্ল্যাক্সের যুগে এখন এসব স্মৃতি হয়ে গিয়েছে। একে একে হারিয়ে যাচ্ছে কলকাতার সব সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হল গুলো। আধুনিকীকরণের ও বিশ্বায়নের যুগে কলকাতাও তার চরিত্র ক্রমাগত পরিবর্তন করে চলেছে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ

আর এটাই স্বাভাবিক, সময়ের সাথে টিকে থাকতে গেলে পরিবর্তন প্রয়োজন। আর এর জন্যেই হয়তো হারিয়ে যাচ্ছে অনেক অতীত। ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার অজস্র সিনেমা হল। যারা এখনও রয়েছে তারা বাঁচার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মহামারী তাঁদের বাঁচার শেষ রাস্তাটুকুও এখন বন্ধ করে দিয়েছে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ

একযোগে ঝাঁপ বন্ধ করে দিচ্ছে একাধিক সিঙ্গেল-স্ক্রিন। দীর্ঘ লকডাউনের পর্বের শেষে গত অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি খুলে দেওয়া হয়েছিল সিনেমা হল। কিন্তু নিউ নর্মালের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে একাধিক সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে সামাজিক সুরক্ষাবিধি মেনে সিনেমা হল চালাতে সমস্যা হচ্ছিল। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ

এরফলে অনেক সিনেমা হল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কলকাতার সিনেমা হলগুলি বন্ধ রাখারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হল মালিকরা। তাঁদের দাবি, সিনেমা হল চালু রাখার সময় এত কম লোক হচ্ছে যে বিদ্যুতের মাশুল সহ অন্যান্য খরচ সামলাতে গিয়ে প্রত্যেক শো-তে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ

সমস্যা হচ্ছে কর্মীদের অর্থ দেওয়ার ক্ষেত্রেও। এসবের মধ্যে বেকার হয়ে গিয়েছেন সিনেমা হলের অনেক কর্মচারী। একসময় যেখানে হলে দর্শকদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতেন কর্মচারীরা। এখন সেখানে ধুলো আস্তরণ জমে গিয়েছে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ

শহরের বাইরের অনেক সিঙ্গেল স্ক্রিন হল মালিকরা তাঁদের কর্মীদের বাকোয়া বেতনটুকু মেটায়নি বলে অভিযোগ করছেন কর্মচারীরা। শুক্রবার নতুন কোনও ছবি রিলিজ করলে বুধবার থেকেই অ্যাডভান্স টিকেটের জন্য লম্বা লাইন পড়তো। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ

হাউসফুলের বোর্ড ঝুলিয়ে রাখতে হত। মাঝে মাঝে সেই ভিড় সামলাতে হতো পুলিশকে। কিন্তু সে সব আজ অতীত। মাল্টিপ্ল্যাক্স আসার পর থেকে মানুষের ভিড় কম হলেও সিনেমা হল চলছিল। কিন্তু গত বছরের লকডাউনের পর থেকে সব শেষ হয়ে গিয়েছে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ

মালিককে এখন ফোন করলে ফোনে পাওয়া যায় না। আগের বাকি টাকা মিটিয়ে দিতে বললে হুমকি দেন। এমনটাই অভিযোগ বারাসাতের তারক নায়ক নামে এক সিনেমা হল কর্মচারীর। সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হল গুলো এখন বেশীর ভাগ শপিং মলে রূপান্তরিত হয়েছে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ

একে একে বেকার হয়েছে টিকিট বুকিং স্টাফ থেকে শুরু করে প্রোজেক্টর ম্যান সকলে। গত চল্লিশ বিয়াল্লিশ বছর ধরে সিনেমা প্রোজক্টার ম্যানের কাজ করছেন বিশ্বনাথ দাস। তার বক্তব্য, মাল্টিপ্ল্যাক্স সিনেমা হল থাকলেও সিঙ্গেল স্ক্রিন ভালো চলতো যদি সিঙ্গেল স্ক্রিন মালিকরা ঠিক মতন ভাবে পরিচর্যা করতেন। কর্মীদের পাওনা টাকা সময় মতন শোধ করা হত। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ

তার উপর করোনার জন্যে গত এক বছরে ভালো কোনও ছবি নেই। এসবের কারণে সিনেমা হলগুলো শেষ হয়ে গিয়েছে। পরিবারের সবাই না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। সকলেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ

আপামর বাঙালির সাথে সেকালের উত্তম -সুচিত্রা, ছবি বিশ্বাস, কানন দেবী, ছায়া দেবীসহ একাধিক লেজেন্ডারি অভিনেতা অভিনেত্রীদের সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়েছিল এই সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হলগুলোই। এছাড়া বিখ্যাত পরিচালকদের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিলো এই সব হল থেকেই। আবার এই সিনেমার সঙ্গে যুক্ত কলাকুশলীরা দর্শকদের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি করতেন সিঙ্গেল স্ক্রিনের মাধ্যমেই। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ

ফাস্ট ডে ফাস্ট শো হাউসফুল মানেই সিনেমা হিট। নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত এই হলগুলো তে কর্মী সংখ্যা ছিল ৪০-৫০ জন। তা কমে দাঁড়িয়েছে এখন সাত জনে। কর্মীরাই জানাচ্ছেন, এরকম হলে নতুন ছবি দেখতে খুব কম লোক আসে। দর্শক মূলত এলাকার খেটে খাওয়া দিন মজুর, শ্রমিক তাদের পরিবারগুলই দল বেঁধে আসেন সিনেমা দেখতে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ

সিনেমা হল মালিকদের অন্য ব্যবসা রয়েছে তাদের সিনেমার ব্যবসায় মাথা না ঘামালেও চলে। কিন্তু আমাদের পেশার জায়গা এই সিনেমা হল অন্য কাজ জানা নেই। সিঙ্গেল স্ক্রিন হলগুলো এমনিতেই ধুঁকছিল। করোনা মহামারী জন্যে এই সিনেমা হলগুলোর প্রায় শেষ অধ্যায়। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ

এই হলগুলোর হাত বদল হয়ে হবে শপিং মল মাল্টিপ্ল্যাক্স। হারিয়ে যাবে ব্যালকনির সিট, ভাঙ্গা রেলিং, ফাস্ট ডে ফাস্ট শোয়ে দর্শকের চিৎকার। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ