
কলকাতা শহরের পিচঢালা রাস্তায় এঁকে বেকে থাকা ট্রাম লাইন। ঘণ্টা বাজিয়ে ধীর পায়ে চলা ট্রাম এখন অনেকটাই বৃদ্ধ। প্রতি মুহূর্ত জানান দিচ্ছে তার শেষ সময় ঘনিয়ে এসছে। এক সময় এই ট্রামের কলকাতার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মধ্যেম। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ

অবিরত ছুটে চলা শহর। মেট্রোরেলের যুগে ডিজিটাল ইন্ডিয়ায় এই ধীর গতির যানটি কদর এখন নেই বললেই চলে। যদিও এখনও ঐতিহ্যবাহী শহর কলকাতার নাম মনে করলে যা কিছু মনে পড়ে তার মধ্যে অন্যতম ট্রাম। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ

কদর কমে গেলেও কলকাতা শহরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে ট্রাম। সময়টা ১৮৭৩ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি স্বল্প ব্যয়ে যাতায়াতের জন্য মানুষের সুবিধার্থে লর্ড কার্জন ট্রাম চালু করে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ

তখন ঘোড়ায় টানা ট্রাম চলত শিয়ালদহ থেকে আর্মেনিয়াম ঘাট পর্যন্ত। দূরত্ব ছিল ৩ দশমিক ৯ কিলোমিটার। পরবর্তীকালে গঠন করা হয় ক্যালকাটা ট্রামওয়ে কোম্পানি লিমিটেড (CTC)। এই কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন হয় লন্ডনে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ

তারপর ১৮৮০ সালের ২২ ডিসেম্বর থেকে ট্রাম আবার চালু করা হয়। তখন ট্রামের ছিল ছোট্ট একটি বগি। আর তা টেনে নিত ঘোড়ায়। পরে যোগ হয় আরও একটি বড় বগি। বিলেতি বাষ্পচালিত ইঞ্জিনের তখন জয়জয়কার। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ

এর প্রায় ২৯ বছর পর অর্থাৎ ১৯০২ সালে থেকে চালু হয় ইলেকট্রিক ট্রাম। উদ্দেশ্যে ছিল বদলাতে থাকা শহরকে আরও উন্নত গতিশীল করে তোলা। উনিশ শতক থেকে বিশ শতক পর্যন্ত ছিল ট্রামের স্বর্ণযুগ। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ

দেশজুড়ে ট্রামের মানচিত্র প্রসারিত হয়েছে। মুম্বই, চেন্নাই, দিল্লী, কানপুরের মতন শহরগুলোতে তখন একাই রাজত্ব করছে ট্রাম। ষাটের দশকে এসে প্রথম ধাক্কা খেল। তৎকালীন সরকার মনে করলো ট্রাম একটি মন্দ গতির যান। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ

যার ফলে কলকাতা ছাড়া সারা দেশ থেকেই ট্রাম উঠে যায়। বর্তমানে কলকাতার মানচিত্রের মোটামুটি ৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ জুড়ে ট্রামের লাইন পাতা রয়েছে। এখনো কলকাতায় কেউ বাইরে থেকে ঘুরতে এলে শখ করে ট্রামে চড়েন। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ

ধীরে ধীরে এই শহরে ট্রামের সংখ্যা কমছে। ট্রাম কি তবে এই শহর থেকেও বিলুপ্তির পথে? এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছে কলকাতার আনাচকানাচে। পশ্চিমবঙ্গের সরকার এখন কলকাতার রাস্তায় ট্রাম চালানো অনেক কমিয়ে দিয়েছে। ট্রাম চলাচলের অনেক রুট বন্ধ। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ

সারা দেশের মধ্যে কলকাতা শহরেই ট্রামের প্রথম আত্মপ্রকাশ, যেখানে শুরু সেখানেই শেষ বলে মনে করছে একাংশ মানুষ। শহরের রাস্তায় যানবাহনের গতি বাড়ানোর নামে কয়েক দশক ধরে ট্রামের পথ ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়েছে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ

এই শহরে ট্রামের ইতিহাস প্রায় ১৪৭ বছরের। যুদ্ধ, দাঙ্গা, মন্বন্তর, এখন করোনার মহামারী এই ট্রামের বিবর্তনের ইতিহাস বর্ণময়। লকডাউনের পর থেকে যাত্রী সংখ্যাও অনেক কমেছে। লাভ না হওয়ায় অনেক ট্রাম বন্ধ হয়ে আছে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ

সূত্র বলছে ৩৭টি ট্রাম রুট চালু ছিল ২০১০ সালে। তখন গড়ে প্রায় ৩০ হাজার যাত্রী প্রতিদিন ট্রামে যাতায়াত করতেন। এর পরে বিভিন্ন সময়ে নানা কারণ দেখিয়ে তুলে দেওয়া হয়েছে একের পর এক ট্রাম রুট। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ

রুটের সংখ্যাটা কমতে কমতে বর্তমানে চারে এসে ঠেকেছে। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম ফেরানোর দাবিতে নিরন্তর প্রচার চালাচ্ছে শহরের ট্রাম প্রেমী একাংশ মানুষ। দূষণমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখতে ট্রামের গুরুত্ব অপরিসীম। সেই জায়গায় ট্রামের গুরত্ব হারিয়ে যাচ্ছে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ

এখন যে অল্পসংখ্যক ট্রাম চলতে দেখা যাচ্ছে ট্রাম তাও খালি। যাত্রী নেই তাই ফাঁকা ট্রামে রাস্তার ট্রাফিক সিগনালে ট্রামের ড্রাইভার আর কন্ডাক্টর নিজেরাই গল্প করে চলেছেন এই দৃশ্যে এখন সবার চোখে পড়ে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ

যেন মনে হয় সিগন্যাল ছাড়লেই ফাঁকা ট্রাম ঘণ্টি বাজিয়ে আঁকাবাঁকা লাইন ধরে হেলতে দুলতে আরও একটা ফুরিয়ে আসা দিনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। হয়তো কোন একদিন ঘোষণা হবে মৃত্যুদিনের। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ