শুক্রবার ভরদুপুরে খোদ কলকাতা যেন রহস্য রোমাঞ্চে বুঁদ। প্রায় দুশো বছরের বন্ধ সিন্দুক খোলা হবে সাবেক সংস্কৃত কলেজ তথা আজকের সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে। বছরের পর বছর, প্রজন্মের পর প্রজন্ম প্রতিষ্ঠানের এক তলায় দুটি সিন্দুক দেখে এসেছে। কিন্তু, তাতে যে কোন মহামূল্যবান বস্তু লুকিয়ে আছে তা কেউ জানে না। অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং রাজ্য সরকারের শিক্ষা দফতরের অনুমতি নিয়ে সিন্দুক খোলা বা প্রয়োজন হলে ভাঙার সিদ্ধান্ত। সেই মতোই শুক্রবারের আয়োজন। কিন্তু, কী আছে ওই সিন্দুকের মধ্যে? হিরে-মানিক্য না এসবের বাইরে এমন কিছু যা চমকে দেবে সকলকে! উত্তেজনা বুকে চেপে হাঁ করে সিন্দুকের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন উপাচার্য, অধ্যাপক, ছাত্রছাত্রী থেকে সংবাদমাধ্যম। এক্সপ্রেস ফটো: শশী ঘোষ।
প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ডেকে আনা হয়েছে অভিজ্ঞ তালা-চাবির মিস্ত্রিকে। তিনি এক এক করে চারটি 'মাস্টার কি' দিয়ে খোলার চেষ্টা করলেন একটি সিন্দুক। কিন্তু, তালা খোলা তো দূরের কথা, দুশো বছরের সিন্দুকের বজ্র আঁটুনির কাছে হার মেনে ভেঙে গেল চারটি চাবিই। অতঃপর ভাঙাই একমাত্র পথ। ছেনি-হাতুড়ি নিয়ে সকলের সামনেই শুরু হল সিন্দুক ভাঙার কাজ। অবশেষে টানা চার ঘণ্টার কসরতে খুলল সিন্দুক। আর সঙ্গে সঙ্গেই সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সংযোজিত হল নতুন অধ্যায়। সেই অধ্যায়ের সঙ্গে জড়িয়ে গেলেন ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। অদ্ভুত সমাপতন বটে, এবছরই আবার বীরসিংহের সিংহ শিশুর জন্মের দুশো বছর! এক্সপ্রেস ফটো: শশী ঘোষ।
সংগ্রহশালার এই সিন্দুকের সঙ্গে পাওয়া গিয়েছে ১৮২৯ থেকে ১৮৩২ সালের হাজিরা খাতা। সে সময় একে 'মাস্টাররোল' বলা হত। এই খাতা দেখে জানা যায়, ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ও রোল নম্বর। কলেজে পড়াকালীন তাঁর ক্রমিক সংখ্যা ছিল- ২৬১/১। এই খাতার সব লেখাই ক্যালিগ্রাফে। মাস্টাররোল দেখে মনে করা হচ্ছে, সে সময় নামের সঙ্গে কোনো পদবি লেখা হত না। এক্সপ্রেস ফটো: শশী ঘোষ।
তবে, সিন্দুক থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে তথ্য হাতে এসেছে, তা হল ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সময়কালে বিধবাদের জন্য তারি তহবিলের নথি। একটি কাগজ পাওয়া গিয়েছে যেখানে লেখা আছে, 'মুক্ত কেশী দেবী উইডো ফান্ড'। নথিটি জানাচ্ছে, এখান থেকে প্রতি বিধবাকে ৮ টাকা করে সাহায্য করা হত। যাঁরা পেয়েছিলেন, তাঁরা আঙুলের ছাপ দিয়ে সেই টাকা নিয়েছিলেন বলেও প্রথামিক ভাবো মনে করা হচ্ছে। অমানাবালা দবী, নির্মালা দেবী, প্রমিলা দেবী, বীণাপাণী, প্রতিভাপাণী দেবী সহ আরও বেশ কিছু নাম রয়েছে সেই তালিকায়। এক্সপ্রেস ফটো: শশী ঘোষ।
বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত কিছু অভিযোগ পত্রও মিলেছে সিন্দুকে। একটি নথি থেকে জানা গিয়েছে, ১৯৫৫ সালে শহরের কৃতী ছাত্রদের ভাতা দেওয়া হত ৫ টাকা করে। আরেকটি নথি বলছে, ১৯৪১ সালে গঙ্গামণি ও রাধাকান্ত স্বর্ণপদক দেওয়া হত, যা সে সময়ের ছাত্র নৃসিংহ প্রসাদ মুখোপাধ্য়ায় পেয়েছিলেন। এছাড়াও আরও একাধিক নথি রয়েছে। এক্সপ্রেস ফটো: শশী ঘোষ।
অন্যান্য নথির মধ্যে রয়েছে সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তির ক্ষতিয়ান। ১৯৫০ সালের চেক বুক, ১৯৪৬ সালের একাধিক নথি, ৭টি সিল করা খাম। এছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু রৌপপদক। মনে করা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই পদকগুলি কোনো কারণে প্রাপকরা নিয়ে যাননি। ১৯৬৫ সালের একটি রুপোর মেডেলও পাওয়া গিয়েছে ওই সিন্দুকে। তাই মনে করা হচ্ছে, সেই সালে সম্ভবত খোলা হয়েছিল এই সিন্দুক। তবে অন্য সিন্দুকটি খোলা সম্ভব হয়নি। এক্সপ্রেস ফটো: শশী ঘোষ।
সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই সমস্ত নথি নিয়ে গবেষণা করা হবে এবং সকলে যাতে দেখতে পারে সে ব্যবস্থাও করা হবে। এক্সপ্রেস ফটো: শশী ঘোষ।