
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক প্রধান মমতার নেতৃত্বে সামগ্রিকভাবে তাঁর মন্ত্রিসভা এবং প্রতিমন্ত্রীরা রাজ্য প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের দায়িত্ব সামলান। আর এই দায়িত্ব পালনের প্রেক্ষিতে মন্ত্রী তথা রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের কাজকর্ম-যোগ্যতা কখনও প্রশংসিত হয়, আবার বিভিন্ন সময়ে প্রশ্নের মুখেও পড়ে। কিন্তু, তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা (প্রাতিষ্ঠানিক) বহু ক্ষেত্রেই অজানা থাকে সাধারণ নাগরিকের। বিশেষত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে এ রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে বহু চর্চা হয়েছে এবং হয়ে থাকে। এবার, একনজরে দেখা নেওয়া যাক মমতা সরকারের মন্ত্রীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা। আর সবার শেষে রইল স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতার উল্লেখ। এই সব তথ্যই ভারতের নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া নথি থেকে সংগৃহীত। অলঙ্করণ- অভিজিৎ বিশ্বাস

রাজ্যের 'অর্থভাণ্ডার' এবং শিল্পমানচিত্রের দায়িত্ব যাঁর হাতে, তিনি অমিত মিত্র। তৎকালীন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক স্তরের শিক্ষা সম্পূর্ণ করে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর পাস করেন খড়দার বিধায়ক। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি করেন তিনি। ডক্টরেট ডিগ্রিপ্রাপ্ত অমিত মিত্রের হাতেই পশ্চিমবঙ্গের অর্থ ও শিল্প দফতরের দায়িত্ব দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

রাজ্যের শিক্ষা ও পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ১৯৭৩ সালে আশুতোষ কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক হওয়ার পর ১৯৮১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ এবং ১৯৮২ সালে আইনে স্নাতক হন তৃণমূলের মহাসচিব। এরপর ১৯৮৭ সালে লন্ডন থেকে পিএমআইআরও পাশ করার পর, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ডক্টরেটও করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী।

রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। কলকাতার বিখ্যাত দুর্গাপুজো একডালিয়া এভারগ্রিনের প্রধান উদ্যোক্তা তথা বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক ১৯৭০ সালে আর্কিওলজিতে স্নাতকোত্তরের পর ১৯৭১ সালে প্রাচীন ইতিহাসও স্নাতকোত্তর পাশ করেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরানো সাথী তথা বিদ্যুত্ৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ১৯৭১ সালে আশুতোষ কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক হন। পরবর্তীকালে হাজরা ল' কলেজ থেকে আইনেও স্নাতক হন তিনি।

তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তথা 'নন্দীগ্রামের নায়ক' শুভেন্দু অধিকারী বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিবহন মন্ত্রী। শিশির-পুত্রের শিক্ষাগত যোগ্যতা- স্নাতকোত্তর।



বিধাননগর অঞ্চলের হেভিওয়েট নেতাদের মধ্যে অন্যতম সুজিত বসু। শ্রীভূমি স্পোর্টিংয়ের মতো বড় পুজোর উদ্যোক্তাও তিনি। একাদশ শ্রেণি পাশ বিধাননগরের বিধায়ক বর্তমানে সামলান রাজ্যের দমকল দফতর।


মমতা শিবিরের অন্যতম নির্ভরযোগ্য নাম জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। বর্তমানে খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় ১৯৭৯ সালে বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে বি.এসসি পাশ করে ১৯৮৩ সালে সুরেন্দ্রনাথ ল'কলেজ থেকে আইনে স্নাতক হন।


রাজ্যের পূর্ত বিভাগ এবং যুবকল্যাণ দফতরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব যাঁর হাতে, তিনি টালিগঞ্জের বিধায়ক এবং টলিপাড়ার 'কাছের মানুষ' অরূপ বিশ্বাস। ১৯৮৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্যে স্নাতক সম্পূর্ণ করেন অরূপ।



রামপুরহাটের বিধায়ক ড: আশীষ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৭০ সালে রামপুরহাট কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষে করেন এবং ১৯৮৫ সালে পিএইচডি সম্পূর্ন করেন।


বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৮৮ সালে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে স্নাতক (সাম্মানিক) হন এবং ১৯৯৫ সালে আইআইএমই থেকে এমবিএ পাশ করেন।


রাজ্যের কৃষি ও বিপনন মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়েছেন।

শিক্ষাগত যোগ্যতার দিক থেকে একের পর এক সার্টিফিকেট রয়েছে যাঁর ঝুলিতে, তিনি পিংলার বিধায়ক সৌমেন কুমার মহাপাত্র। ১৯৭৬-তে বি.এসসি, ১৯৮০ সালে এম.এসসি, ১৯৮৮-তে পিএইচডি এবং পরবর্তীতে লন্ডন থেকে এফআরইএস এবং ফিশারি, উচ্চ শিক্ষা বিষয়ক আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সৌমেন কুমার মহাপাত্র বর্তমানে রয়েছেন জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীর পদে।




১৯৭২ সালে স্কুল পাস করেছেন বলরামপুরের বিধায়ক শান্তিরাম মাহাতো। বর্তমানে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের দায়িত্বভার দেওয়া হয়েছে শান্তিরাম মাহাতোকে।

প্রখ্যাত রাজনীতিক অজিত পাঁজার পুত্রবধূ শশী পাঁজা কলকাতার রাধাগোবিন্দ কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস করেন। পরবর্তীতে ২০১১ সালে তিনি শ্যামপুকুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নারী ও শিশুকল্যাণ বিভাগের রাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালের মে মাসে তাঁকে সমাজকল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্বও দেওয়া হয়।

উত্তরপ্রদেশের দেওবন্দের মাদ্রাসা দারুল উলুম থেকে ফাজিল (fazil) ডিগ্রিপ্রাপ্ত সিদ্দিকুল্লা চৌধুরি বর্তমানে রয়েছেন রাজ্যের জনশিক্ষা ও গ্রন্থাগার মন্ত্রী পদে।

২০১১ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ধনেখালি বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ১৯৮৮ সালে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ ধনেখালির বিধায়ক অসীমা পাত্র। বর্তমানে পরিকল্পনা দফতরের পাশাপাশি কৃষি ও মত্স্য দফতরের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও সামলাচ্ছেন তিনি।

বুলবুল বিপর্যয়ে মানুষের পাশে থাকতে রাত জেগেছিলেন স্কুল পাস মন্টুরাম পাখিরা। পরবর্তীতে সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী মন্টুরামের প্রশংসা শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রীর গলাতেও।

রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প ধফতরের প্রতিমন্ত্রী স্বপন দেবনাথের শিক্ষাগত যোগ্যতা এলএলবি, এম.কম।
