রামনবমী, হনুমান জয়ন্তী, গণেশ পুজোর সংস্কৃতি এ রাজ্যে অনেকটাই প্রচলন করতে সক্ষম হয়েছে গেরুয়া শিবির। তবে বাঙালীর শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোতে তেমন প্রভাব ফেলতে পারল না পদ্মশিবির। এদিকে শহরে এসেছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। কিন্তু, পুজোর প্রাক্কালে শহরে যখন একের পর এক পুজো উদ্বোধন করছেন তৃণমূল সুপ্রিমো, তখন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি কি না ফাঁকা হাতে ফিরে যাবেন! না একেবারে ফাঁকা হাতে ফিরতে হবে না, অমিত শাহর হাত দিয়ে এদিন সল্টলেকের বিজে ব্লকের পুজোর উদ্বোধনের ব্যবস্থা করেছে গেরুয়া নেতৃত্ব। এই পুজো কমিটিতে বিশেষ দায়িত্বে রয়েছেন দলের স্থানীয় নেতা উমাশঙ্কর ঘোষ দস্তিদার।
কিন্তু, কেন সল্টলেকে দুর্গাপুজোর উদ্বোধন করতে হচ্ছে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতিকে? কারণ, দুর্গাপুজোর মাধ্যমে জনসংযোগ থেকে কিছুতে পিছিয়ে থাকতে চায় না বিজেপি। তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপি-কে অবাঙালীদের দল বা গুটখাখোরদের দল বলেই কটাক্ষ করে থাকে। তবে পদ্মশিবির যে দুর্গাপুজোকেও গুরুত্ব দিচ্ছে সেই বার্তা দিতেই অমিত শাহকে পুজোর সময় রাজ্যে আসতে অনুরোধ করেছিল প্রদেশ নেতৃত্ব। আর আসবেনই যখন, তখন কোনও একটি পুজোর উদ্বোধন না করলে সেটা বেমানান হবে। তাই 'বড় পুজো' না মেলায়, আপাতত বিজে ব্লকের পুজোতেই সাধ মেটাতে হচ্ছে পদ্ম শিবিরকে।
আরও পড়ুন: ফুলে ফুলে পুজোর লড়াই, তবুও এগিয়ে তৃণমূল!
এবারও খাস কলকাতায় বিজেপি তেমন কোনও বড় পুজো কমিটির আমন্ত্রণ পায়নি। শহরের অধিকাংশ পুজো কমিটির মাথাতেই রয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী বা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতৃত্ব। যদিও উত্তর কলকাতায় বিজেপির প্রভাব দক্ষিণ কলকাতার থেকে একটু বেশি। তবুও উত্তরের পুজোতেও তেমন হালে পানি পায়নি গৈরিক বাহিনী। উল্লেখ্য, এবার উত্তরের হাতিবাগান সর্বজনীন থেকেই পুজো উদ্বোধনের শুরু করেছেন মুখ্য়মন্ত্রী। শুধু তাই নয়, ইদানিং উত্তর কলকাতাতেই বেশি রাজনৈতিক মিছিলও করেছেন মমতা।
আরও পড়ুন: বাংলায় হিন্দু শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের বেছে বেছে তাড়াব: শাহ
এদিকে, কলকাতার লাগোয়া সল্টলেক থেকে অমিত শাহর পুজো উদ্বোধনের আমন্ত্রণ এসেছে। অবাঙালী অধ্যুষিত লবনহ্রদের পুজো কমিটিতে বিজেপির প্রভাবও কিঞ্চিত বেশি। তবুও অমিত শাহকে আমন্ত্রণ নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। কন্তু শেষ পর্যন্ত তা মিটে যায়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবেই পুজোর উদ্বোধনের আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, এখন রাজ্য বিজেপির একাধিক শীর্ষ নেতৃত্বের বাস সল্টলেকে। সম্প্রতি বাসা বদল করে সল্টলেকের বাসিন্দা হয়েছেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও। দলের সহসভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের বাড়িও সল্টলেকে। রাজ্য় সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু, প্রাক্তন বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যরাও সল্টেলেকেরই বাসিন্দা। শুধু তাই নয়, স্বয়ং বিধাননগরের প্রাক্তন মেয়র সব্য়সায়ী দত্তও এদিনই দল বদলে পদ্ম পতাকা হাতে তুলে নিয়েছেন। এই এলাকায় তাঁর দাপট প্রশ্নাতীত। সব মিলিয়ে তৃণমূলের দখলে থাকা পুজো ময়দানে জায়গা না পেলেও শেষ পর্যন্ত পা রাখার জন্য এক চিলতে নরম মাটি খুঁজে পেয়েছে বিজেপি।