ধর্মতলার মোড়। পিছনে সিইএসসি-র চেনা সদর দফতর। একপাশে বাংলার বাঘের প্রস্তর মূর্তি। পাশের বিশাল মঞ্চে মাইক্রোফোন হাতে সদা চঞ্চল নেত্রী। আর সামনে যতদূর চোখ যায় অগনিত গিজগিজে কালো মাথা। সি আর এ্যাভিনিউ থেকে টি বোর্ড, গণেশচন্দ্র এ্যাভিনিউতে বড় বড় এলইডি স্ক্রিন। অনুগামীরা শুনে নিচ্ছেন নেত্রীর বার্তা- বিগত এক দশক ধরে খুব চেনা তৃণমূলের ২১শের শহিদ দিবসের এই সভা এবার হচ্ছে না। সৌজন্যে কোভিড-১৯। আর এ নিয়েই চিন্তিত ঘাস-ফুল নেতৃত্ব। ফি বছর এই সভা থেকেই সাধারণের নাড়ির খবর বুঝে নিতেন পোড় খাওয়া রাজনীতিক মমতা। ২১শের বিধানসভা ভোটের আগে চেনা আঙ্গিকের ২১ জুলাই করতে না পারায় মানুষের মনের হাল-হদিশ আদৌ আন্দাজ করা যাবে না বলে শঙ্কিত তোপসিয়ার তৃণমূল ভবন।।
মহামারীতে বদলে গিয়েছে পরিস্থিতি। এবার ২১ জুলাই শহরের প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলায় আর আছড়ে পড়বে না শাসক দলের নেতা, কর্মী, সমর্থকদের ঢল। স্তব্ধ হবে না মহানগর। অন্যান্যবার ২১ জুলাইয়ের এক সপ্তাহ আগে থেকেই মঞ্চ বাঁধার কাজ শুরু হয়ে যায়। আনাগোনা করেন তৃণমূলের হেভিওয়েটরা। দলনেত্রীর বাণী শুনতে দু-তিন দিন আগে থেকেই গোটা বাংলা থেকে কলকাতায় আসতে থাকেন মানুষ। জনসমাগমেই মানুষের মনের কথা পড়ে ফেলতে পারেন নেতৃত্ব। কিন্তু এবার আর সেই অবকাশ নেই। ভার্চুয়াল ব়্যালি হবে। বক্তব্য রাখবেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এতে মানুষের মনে কতটা প্রভাব পড়বে? ২১শের বিধানসভা ভোটের মাত্র কয়েকমাস আগে এখন সেটাই ভাবাচ্ছে জোড়া-ফুল নেতৃত্বের একাংশকে।
পরের বছর বাংলায় ভোট। বিজেপি বেগ দিতে প্রস্তুত বলে হুঙ্কার দিচ্ছে। এই অবস্থায় ভিড় জমিয়ে শক্তি প্রদর্শনের সেরা মঞ্চ ছিল ২১শে জুলাই। রাজ্যপাটে তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফিরতে দলনেত্রীর উদ্যাম ভাষণ শুনে কর্মীদের মনবল চাঙ্গা করার এটাই ছিল অন্যতম হাতিয়ার। কিন্তু, করোনা যেন সব ওলোটপালট করে দিয়েছে। মাথাব্যথা বাড়ছে সাসক দলের নেতাদের।
২১শের মঞ্চ থেকেই প্রতিবার দলের ভবিষ্যৎ কর্মসূচির রূপরেখা স্থির করে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে এবারও ২১শের মঞ্চকে সেই কাজে লাগাবেন শাসক দলের সর্বময় কর্ত্রী। কিন্তু সবটাই হবে ভার্চুয়াল। ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা সম্পন্ন। প্রতিটি তৃণমূল দলীয় কার্যালয়ে বসবে জায়ান্ট স্ত্রিন। কর্মী, সমর্থকরা এখান থেকেই মমত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য় শুনতে পারবেন। এই ভাষণই কর্মীদের মনবল বৃদ্ধির সঙ্গে বিজেপি ও মোদী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের রসদ যোগাবে বলে মনে করেছে শাসক শিবির।
যদিও, ভার্চুয়াল ব়্যালি ঘিরে নেতৃত্বের মনেই চোরা আশঙ্কা দানা বেঁধেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতার কথায়, 'দলের সবচেয়ে বৃহৎ কর্মসূচি ২১শে জুলাই। ভার্চুয়াল ব়্যালি সফল করেত আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে, এবার আর কয়েক লক্ষ মানুষের ভিড় হবে না। দলের সাংগঠনিক শক্তি যাচাই করা যাবে না। সশরীরে উপস্থিত না থাকার বিষয়টি সংগঠনে কতটা প্রভাব ফেলবে এখন সেটাই ভাবনার বিষয়।'
বাংলা দখলই পাখির চোখ বিজেপির। লোকসভা ভোটেই বাংলায় পদ্মের পাপড়ি মেলার প্রমাণ মিলেছে। বাম-কংগ্রেস জোট গড়ছে। যদিও বিধানসভা ভোটে এবার সরাসরি বিজেপি বনাম তৃণমূলের লড়াই বলেই মনে করা হচ্ছে। তাই এবার ২১শের মঞ্চ থেকে ফের গেরুয়া শিবিরকেই মূলত নিশানা করবেন মমতা। তুলে ধরবেন, করোনা ও আমফান সংকটে মোদী সরকারের অবহেলা, বঞ্চনার কথা। দলের এক নেতা বলেছেন, 'কোভিড পরিস্থিতিতে একাধিক রাজ্যকে সহায়তা করেছে কেন্দ্র। কিন্তু বাংলাকে শুধু বঞ্চনাই করা হয়নি, সঙ্গে সংকটে হেনস্থা করতেও পিছু-পা হয়নি বিজেপি সরকার। কিন্তু, মমমতা জন্মগতভাবেই যোদ্ধা। আমার বিশ্বাস বিজেপির বিরুদ্ধে কোমড় বেঁধে লড়তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যই যথেষ্ট।'
এর আগে ভার্চুয়াল বৈঠকে দলীয় নেতা-কর্মীদের বিজেপির বিরুদ্ধে একাধিক ইস্যুতে আন্দোলনের আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। গেরুয়া দলের প্রচারের বিরুদ্ধে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পাল্টা প্রচারের নির্দেশ দেওয়া হয়।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন