স্বভাবসিদ্ধ জোরালো ভঙ্গীতেই বক্তব্য রাখলেন তিনি, এবং স্পষ্টভাবে কেন্দ্র থেকে ভারতীয় জনতা পার্টিকে উৎখাত করবার আহবান জানালেন। আজ একুশের শহিদ মঞ্চে তাই মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় জানালেন, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে গেরুয়া শিবিরকে গদি ছাড়া করতে আগামী বছরের শুরুতে ১৯ জানুয়ারি ব্রিগেড সমাবেশ করবে তৃণমূল কংগ্রেস। এবং মেদিনীপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভার পাল্টা সভা হবে ২৮ জুলাই। অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়, শুভেন্দু অধিকারী, পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়-সহ তৃণমূল নেতৃত্ব ওই সভায় হাজির থাকবেন। বিজেপি কীভাবে ২০১৯ সালের নির্বাচনে পরাজিত হবে তারও ব্য়াখ্য়া দিলেন তৃণমূল নেত্রী। একইসঙ্গে এরাজ্য়ে ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্য়ে ৪২টিকেই দখল করার নির্দেশ দিলেন দলের কর্মী ও সমর্থকদের।
ইতিমধ্যেই এই ঘোষণার সপাট জবাব এসেছে গেরুয়া শিবিরের কাছ থেকে। রাজ্য বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা জানিয়েছেন, তাঁরাও পাল্টা ব্রিগেডে মিছিল করবেন, এবং সেটির দিনও বলে দিলেন, ২৩ জানুয়ারি, ২০১৯। প্রধান বক্তা? প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান সেবক স্বয়ং।
আরও পড়ুন: Trinamul Shahid Diwas LIVE Updates: বিজেপি গোল্লায় যাক, সিপিএম ধাক্কা খাক
শনিবারের বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল আগেই। তবে সকাল থেকে ভারি ও মাঝারি বৃষ্টিতে সভার তাল কাটেনি একটুও। দুপুর একটায় মঞ্চে উঠে ক্রমাগত বিজেপিকে আক্রমন করলেন মমতা। ১৯ জানুযারি ব্রিগেড সমাবেশের প্রসঙ্গে তিনি ঘোষণা করেন, "১৯ জানুয়ারী ভারত সরকার দখলের ডাক দেওয়া হবে। ওই সভায় সমস্ত রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানাব। আমরা চেয়ার খুব একটা পছন্দ করি না। আমরা চেয়ারকে কেয়ার করি না। কিন্তু আমরা দেশকে কেয়ার করি। আমরা মানুষকে কেয়ার করি। আমরা মাটিকে কেয়ার করি।"
পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি কোন অঙ্কে হারবে তার বিশদ ব্য়াখ্য়া দিলেন মমতা। বিজেপির জোট ভেঙে গিয়েছে, তদুপরি বেশ কয়েকটি রাজ্য়ে বিজেপির সঙ্গীরা আসন পাবে না বলে দাবি নেত্রীর। মমতার অঙ্ক, "অনাস্থা ভোটে বিজেপি পেয়েছে ৩২৫টি ভোট, বিপক্ষে ১২৬টি ভোট। বিজেপিকে ভোট দিয়েছে এআইডিএমকে। তার নেত্রী ছিলেন জয়ললিতা। জয়ললিতা আজ থাকলে এই ভোট পেত না ওরা, হারত। আগামী দিনে এআইএডিএমকে তামিল নাড়ুতে একটাও সিট পাবে না। সব আসন পাবে (ডিএমকে নেতা) স্ট্য়ালিন। সুতরাং টোটালটাই মাইনাস বিজেপি। ইউপিতে কত সিট পেয়েছিল? ৮০টা। সেই ৮০ টা সিটের জায়গায় মায়াবতী এবং মুলায়মরা যদি এক হয়ে যান, তাহলে কটা সিট পাবে? যদি ৩০ টাও পায়, ৫০ টা তো মাইনাস। ৫০ আর ৩৯ মাইনাস করে দিন।"
এভাবেই হিসেব কষার ঢঙে তিনি বলতে থাকেন, "মধ্য়প্রদেশে সব আসন পেয়েছিল, এবার সেখানে চার ভাগের এক ভাগ পাবে। রাজস্থানে ২৫ ছিল, এবার ৫ টা পাবে কী না সন্দেহ। গুজরাতে সব ছিল, এবার শূন্য পাবে। বিহারে লালুজী খেয়ে নেবেন। বাংলায় মানুষ খেয়ে নেবে। উড়িষ্যায় নবীন পট্টনায়ক খেয়ে নেবেন। পাঞ্জাবে কী হবে? অমরেন্দ্র সিং খেয়ে নেবেন। থাকবে কোথায় ওই ৩২৫, আজকে যেটা দেখতে পাচ্ছেন? ১০০ থাকবে কী না সন্দেহ। বড় জোড় ১৫০। মেজরিটি পাবে না। বিজেপির জোট ভাঙতে শুরু করেছে। শিব সেনা গতকাল ভোট দেয়নি। আগে জোটে ছিল। তেলুগু দেশম বিজেপির সঙ্গে জোটে ছিল, তারাই অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে। বিজেডি ভোট দেয়নি। ওটা ২০১৯ নয়, ২০১৪ এর অঙ্ক।"
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মেদিনীপুরে তাঁর সাম্প্রতিক সভায় পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। জবাবে আজ মমতা বলেন, "আমাদের রাজ্য়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় নিয়ে হইচই করছে। কিন্তু উত্তরাখন্ড, সিকিম, বিহার, উত্তরপ্রদেশে যখন এমনটা হয় তখন তো কেউ কথা বলে না।" বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট কেনারও অভিযোগ এনেছেন মমতা। তাঁর দাবি, আলিপরদুয়ারে একটি গ্রামসভা দখল করতে গিয়ে বিজেপি টাকা দিয়ে ভোট কিনেছে, কিন্তু "১০ কোটি ভোট টাকা দিয়ে কেনা যায় না"। একই ভাবে ত্রিপুরাতেও ভোট কেনাবেচা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
প্রত্যাশিতভাবেই, কংগ্রেস এবং সিপিএম-কেও একহাত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য়, "দিল্লিতে যারা বলে বিজেপির সঙ্গে লড়াই করবে, বাংলায় দেখুন - জগাই, মাধাই, গদাই। সিপিএমের হার্মাদ এখন বিজেপির ওস্তাদ, আর কয়েকটা গদ্দার। গদ্দারি করে ভাবছে এই ভাবেই চলবে। আমি কংগ্রেস সিপিএমকে বলব, এখানে বিজেপিকে মদত করবেন আর দিল্লিতে আমাদের সাহায্য় চাইবেন? বাংলায় আপনাদের সাহায্য় আমরা চাই না। আমরা একা লড়ব। আমরা একা ভাল লড়ব। মনে রাখবেন, আমরা দিল্লিতে ওদের সাহায্য় করি, আর এখানে সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি ভাই ভাই।"
দেশে ক্রমাগত ঘটে চলা গণপিটুনির ঘটনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "যাঁরা তালিবানি উগ্রপন্থার কথা বলেন, তাঁরা নিজেদের দলকে নিয়ন্ত্রন করতে পারেন না। কখনও বলছেন পুলিশ পেটাও, কখন বলছেন তৃণমূল পেটাও।" এদিন ফের মমতা সিবিআই এবং ইডির প্রসঙ্গও তোলেন। এবং আশঙ্কা প্রকাশ করেন, "মনে রাখবেন, আমার এই কথা বলার পর আবার সিবিআই পাঠাতে পারে নতুন করে। আবার ইডি পাঠাতে পারে নতুন করে। আমাদের যায় আসে না। হাতে এজেন্সি আছে বলে যা ইচ্ছে করতে হবে? আমার হাতেও তো অনেক কেস আছে। আমি আজ পর্যন্ত কিছু করিনি।"
এর আগে সভার শুরুতে দলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেন, "দেশে অর্থনৈতিক সঙ্কট চলছে। দেশ বাঙালী প্রধানমন্ত্রী দেখতে চায়।" দলের আরেক নেতা এবং নগর উন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, "২০১৪-এর আচ্ছে দিন কখনও আসেনি। মানুষ আর এদের ক্ষমতায় রাখেব না।"
এদিন মঞ্চে হাজির ছিলেন সদ্য় বিজেপি থেকে সরে আসা দুবারের রাজ্য়সভা সাংসদ চন্দন মিত্র, পাঁচ কংগ্রেস বিধায়ক আবু তাহের, সমর মুখোপাধ্য়ায়, অপূর্ব সরকার, সাবিনা ইয়াসমিন এবং কামরুজ্জামান। ছিলেন সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ মইনুল হাসানও।