শতাব্দী প্রাচীন দল রয়েছে, রয়েছে নীতি-আদর্শ, প্রতিবাদের ইস্যুও রয়েছে, আছে নেতৃত্বও। কিন্তু নির্বাচনী সাফল্য তো দূরঅস্ত। পদ্ম বাহিনীর সামনে কোনও প্রতিরোধই যেন কার্যকর হচ্ছে না কংগ্রেসের। এদিকে দলের সভানেত্রীর পদে থাকতে চান না সনিয়া গান্ধী। অন্যদিকে, রাহুলও দলের প্রধান হতে নারাজ। এই পরিস্থিতে ফের একবার দলীয় সংগঠনে খোল-নলচে বদলের দাবি উঠল কংগ্রেসের অন্দরেই। পাঁচ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, একাধিক কংগ্রেস কার্যকরী কমিটির সদস্য, বর্তমান সাংসদ ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের একাংশ সহ মোট ২৩ জন শীর্ষ কংগ্রেস নেতা সোনিয়া গান্ধীর কাছে চিঠি লিখে সংগঠনে উপর থেকে নীচ পর্যন্ত পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন।
বিজেপির উত্থান ও নরেন্দ্র মোদীর প্রতি যুব সমাজের ভোটদানের বিষয়টি মেনে নিয়ে ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কংগ্রেসের জনভিত্তি ও দলের প্রতি যুবসমাজের আস্থাহীনতা অন্যতম উদ্বেগের বিষয়।
জানা গিয়েছে, সোনিয়া গান্ধীকে দেওয়া চিঠিতে কংগ্রেসের ২৩ জন শীর্ষ নেতা সংগঠনে কার্যকরী বদলের দাবি তুলেছেন। দলের এই অবস্থার জন্য কার্যত বর্তমান নেতৃত্বকেই দায়ী করা হয়েছে। দাবিগুলির মধ্যে অন্যতম হল, সর্বক্ষণের জন্য কার্যকরী নেতৃত্ব যাঁকে বা যাঁদের কাজর জায়গায় উপক্ত ভূমিকা নিতে দেখা যাবে, কংগ্রেস কার্যকরী কমিটির নির্বাচন, দলের পুনরুত্থানে প্রাতিষ্ঠানিক নেতৃত্ব গঠন যাঁরা যৌথভাবে সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন।
সোনিয়াকে দেওয়া চিঠিতে সাক্ষর রয়েছে রাজ্যসভায় কংগ্রেস নেতা গুলাম নবী আজাদ, প্রাক্তন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী আনন্দ শর্মা, কপিল সিবাল, শশী থারুর, সাংসদ বিবেক তাঙ্কা, মুকুল ওয়াসনিকের মত নেতাদের।
বিজেপি ও সংঘ পরিবারের সাম্প্রদায়িক ও মেরুকৃত প্রচারের ফলে ভয় ও নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ, অর্থনৈতিক সংকট, বেকারত্ব বৃদ্ধি, করোনা মহামারী, সীমান্ত বিতর্ক, বিদেশ নীতি সহ একাধিক ইস্যু থাকা সত্ত্বেও দেশের সংকটকালে দলের নিম্নমুখীতাকে ওই চিঠিতে চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো হয়েছে। বলা হয়েছে, গণতন্ত্রের স্বার্থে কংগ্রেসের পুনরুত্থান 'জাতীয় আবশ্যিকতা'।
চিঠিতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, প্রদেশ সংগঠগুলোকে পোক্ত করা, ব্লক থেকে কার্যকরী কমিটি- সংগঠনের সবস্তরে নির্বাচন, কেন্দ্রীয় সংসদীয় বোর্ডের সংবিধান গঠন সহ কংগ্রেসের অভ্যন্তরে একাধিক সংস্কারের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও বলা হয়েছে যে, নেতৃত্বের প্রতি 'অনিশ্চয়তা' ও দলের 'ক্ষয়' কর্মীদের হতাশ করছে। ফলে দল দুর্বল হয়ে পড়ছে। উল্লেখযোগ্যভাবে সেখানে বলা হয়েছে যে, বিজেপির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে কংগ্রেস কার্যকরী কমিটি 'উপযুক্ত ও কার্যকরী নেতৃত্ব' প্রদানে ব্যর্থ।
কংগ্রেস কার্যকরী কমিটিতে বর্তমানে আলোচনা-বিতর্কের কোনও জায়গা নেই বলে অভিযোগ করেছেন এইসব নেতারা। তাঁদের মতে, জাতীয়স্তরে নীতি প্রণয়নের জন্য কাজ করতে হবে কমিটিকে। এছাড়াও বলা হয়েছে যে, লোকসভা ভোটে পরাজয়ের বছর ঘুরলেও দলের অবক্ষয়ের কারণ বিশ্লেষণে কোনও 'সৎ আত্মপ্রচেষ্টা' করা হয়নি।
সংগঠনকে চাঙ্গা করতে ২৩ নেতার চিঠিতে উল্লেখিত একাধিক পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে, সর্বক্ষণের নেতৃত্ব নিয়োগ, এআইসিসি ও প্রদেশ সদর দফতরে উপযুক্ত নেতাদের উপস্থিতি, দলের সবস্তরের কমিটিতে নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নিয়োগ। প্রতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার মাধ্যমে যৌথ নেতৃত্ব গঠনও কংগ্রেসের ঘুরে দাঁড়ানোর অন্যতম উপায় বলে জানানো হয়েছে।
দলের সভাপতি থাকালীন সংগঠনে নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নিয়োগের রীতি প্রচোলনে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দলের যুব ও ছাত্র সংগঠনের একাংশের তরফে অভিযোগ, এ ক্ষেত্রে যাঁদের অর্থ রাজনৈতিক ক্ষমতা বেশি তাঁরাই সংগঠনের ক্ষমতা দখল করেছে। সংগঠনে বিবদমান গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। নামের উল্লেখ না থাকলেও এ ক্ষেত্রে নেতাদের ইঙ্গিত যে রাহুলের দিকেই তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
তবে, চিঠিতে সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বের প্রশংসা করা হয়েছে। কংগ্রেস সভাপতি হিসাবে রাহুল গান্ধীও প্রশংসনীয় প্রচেষ্টা করেছিলেন বলে উল্লেখ। জানানো হয়েছে, দল পরিচালনায় যৌথ নেতৃত্বের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হল নেহেরু-গান্ধী পরিবার।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন