তাঁর ভাষণ মানেই চমক। বাগ্মীটায় তাঁর জুড়ি মেলা ভার। সেই অস্ত্রে শাণ দিয়ে ৫ বছর পর ফের মাত করলেন কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী। কিন্তু বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ফের ভারতের মসনদ দখলের পর নরেন্দ্র মোদী যে ভাষণ দিলেন, তার সঙ্গে ২০১৪ সালের মে মাসের বক্তব্যের বেশ কিছুটা ফারাক রয়েছে।
পাঁচ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দিল্লির সেন্ট্রাল হলে তাঁর প্রথম ভাষণে মোদী জানিয়েছিলেন, তাঁর সরকার গরিব মানুষদের জন্য কাজ করবে। পুনরায় জনতার রায়ে নির্বাচিত হয়ে শনিবার নরেন্দ্র মোদী দেশের উদ্দেশ্যে বলেন, "২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আমরা গরিব মানুষের কথা ভেবেই সরকার চালিয়েছি। তাঁরাই ফের সরকার গঠন করলেন।" ২০১৪ সালে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় স্লোগান ছিল- 'সবকা সাথ, সবকা বিকাশ।' ৫ বছর পেরিয়ে এসে তার সঙ্গে মোদী যোগ করলেন- 'সবকা বিশ্বাস।' দেশবাসীর উদ্দেশে জানালেন, ভারতকে জগতসভায় শ্রেষ্ট আসন দেওয়াই তাঁর লক্ষ্য। রাজনৈতিক মহলের একাংশের বিশ্লেষণ, ২০১৪ সালের ২০মে জনতার উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে মোদী বারবার আগামী ৫ বছরে কী করবেন, তার ফিরিস্তি দিয়েছিলেন। কিন্তু এবার দ্বিতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর ভাষণ অনেক বেশি সংযত, দায়িত্বশীল।
সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে মোদীর বক্তব্যে ছিল অনেক নতুন উপাদান। ২০১৪ সালে ভাষণে তিনি সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে একটি শব্দও ব্যয় করেননি। কিন্তু এবার বিপুল জনাদেশ পেয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের শাসক্ষমতায় বসার আগে মোদী বললেন, "দেশে সংখ্যালঘুদের প্রতারিত করা হয়েছে ভোটব্যাংকের রাজনীতি করে। আমি এই ভেদাভেদ চাই না। আমি তাদের হারানো বিশ্বাস ফিরে পেতে চাই"। কয়েক বছর আগের হিন্দু হৃদয় সম্রাট এ বার হয়ে উঠতে চাইলেন গোটা দেশের মুখ। পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে ভরতের বহুত্ববাদী সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তাও। সেন্ট্রাল হলের ভাষণে তিনি দেশের বিভিন্ন এলাকার আঞ্চলিক প্রত্যাশাসমূহকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন। এই প্রসঙ্গটিও অনুপস্থিত ছিল ২০১৪ সালে ভাষণে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত, বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও শিবসেনা, আকালি দল, এআইএডিএমকে, জেডিইউ-এর মতো আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে অকারণ দূরত্ব চান না প্রধানমন্ত্রী। সেজন্যই এমন বার্তা।
নির্বাচনী প্রচারপর্বেও এ বার বেশ সংযত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তবে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধিকে একের পর এক আক্রমণ করেছেন তিনি। তা নিয়ে বিতর্কও হয়েছে। যদিও, ভোট মিটতেই টুইট করে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন মোদী। তবে মোদী সংযত থাকলেও নির্বাচনী প্রচারপর্বে বিতর্ক এড়াতে পারেনি বিজেপি। সাধ্বী প্রজ্ঞা ভোটপ্রচারে নাথুরাম গডসে সম্পর্কে মন্তব্য করে অস্বস্তিতে ফেলেছেন দলকে।
২০১৯ সালের প্রচারপর্বে কার্যত ব্রাত্য ছিলেন বর্যীয়ান বিজেপি নেতা এল কে আদবানি। গেরুয়া শিবিরের যাবতীয় প্রচার আবর্তিত হয়েছিল মোদী এবং অমিত শাহকে ঘিরেই। কিন্তু বিপুল জনাদেশ লাভের পর বক্তব্য রাখার আগে মঞ্চে উঠে আদবানির পা ছুঁয়ে প্রণাম করেছেন মোদী। প্রণাম করেছেন প্রবীন এসএডি নেতা প্রকাশ সিং বাদলকেও। ভাষণে মোদী আগামী ৫ বছরে সর্বতোভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছেন।
৫ বছর আগে প্রথমবার সংসদ ভবনে ঢোকার আগে ভবনটিকে নতজানু হয়ে প্রণাম করেছিলেন মোদী। ফের বিপুল জনসমর্থন পেয়ে ক্ষমতায় ফিরেছেন তিনি। এবার সেন্ট্রাল হলে প্রবেশের আগে তিনি প্রণাম করলেন দেশের সংবিধানকে।
Read the full story in English