দিল্লি ছাড়া করতে হবে বিজেপিকে। এক বাঙালি সন্তান আশি বছর আগে দিল্লি চলোর ডাক দিয়েছিলেন। আবার আরেকজন বাঙালি দিল্লি চলোর ডাক দিয়েছেন, দেশে শান্তিপূর্ণ প্রগতিশীল ধর্মনিরপেক্ষ সরকার গড়ার লক্ষ্যে। ওই বাঙালির বাড়ি ছিল দক্ষিণ কলকাতায়, আবার এই বাঙালির বাড়িও দক্ষিণ কলকাতায়। ওই বাঙালি কারো সঙ্গে আপস করেননি, আর এই বাঙালিও কারো সঙ্গে আপস করেন না। নাম না করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে তুলনা করে এমনটাই বললেন তৃণমূল যুবর সভাপতি তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
শনিবার দক্ষিণ ২৪ পরগণার বারুইপুরের রাসমাঠে ১৯ জানুয়ারির ব্রিগেড সমাবেশ সফল করার প্রস্তুতি সভা করা হয় জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে। এই সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অভিষেক সহ তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অন্যান্য সাংসদ, বিধায়ক এবং মন্ত্রীরা। ব্রিগেড সমাবেশের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে বলতে গিয়ে এই সভায় অভিষেক বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন আর শুধুমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী নন, দশ কোটি বাংলার মানুষের নেত্রী নন, তিনি দেশনেত্রীতে পরিণত হয়েছেন। তার সমর্থনে ১৯ শের ব্রিগেড মঞ্চে আসছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের নেতারা। ওমর এবং ফারুক আবদুল্লা, তেজস্বী থেকে অখিলেশ যাদব, সবাই থাকবেন, আর সেখান থেকেই বিজেপির মৃত্যুঘন্টার সূচনা হবে। ওই সভা থেকেই তাঁরা দিদির সঙ্গে চলার অঙ্গীকারবদ্ধ হবেন। বলবেন, 'দেশ কি নেত্রী ক্যায়সি হো, মমতা ব্যানার্জী জ্যায়সি হো। দিদি তুম আগে বাড়ো, হম তুমহারে পিছে হ্যায়'।"
এদিন অভিষেক আত্মবিশ্বাসের সুরে বলেন, "বিরোধীরা হযবরল জোট করে তৃণমূলকে হারাতে পারবে না। তৃণমূল বিরোধীদের জোটকে কুপোকাত করে এই জেলার চারটি আসন সহ রাজ্যে ৪২ টি আসনে জয়ী হবে। অন্য কোনো জেলা লাগবে না, ব্রিগেডের ১০ লক্ষ মানুষ এই জেলা থেকে উপস্থিত থাকবেন। কারণ এখান থেকে পরিবর্তনের চাকা ঘুরবে।"
তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'দিল্লি চলো' ডাকের প্রেক্ষিতে নাম না করে আশি বছর আগে সুভাষচন্দ্র বসুর ডাকের সঙ্গে তুলনা করে এদিন অভিষেক বলেন, "দিল্লি ছাড়া করতে হবে বিজেপিকে। আশি বছর আগে এক বাঙালি দিল্লি চলোর ডাক দিয়েছিলেন। আশি বছর পরে আরেক বাঙালিও দিল্লি চলোর ডাক দিয়েছেন, দেশে শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল, ধর্মনিরপেক্ষ সরকার গড়ার লক্ষ্যে। ওই বাঙালি ছিলেন দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা, আরেক বাঙালিও দক্ষিণ কলকাতার। তিনিও কারো সঙ্গে আপোস করেননি, আর ইনিও আপোস করেন না। তিনিও কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন, ইনিও কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন।"
আরও পড়ুন: অভিষেককে কুকথা বলায় আদালতে বেকায়দায় বিজয়বর্গীয়
এদিন বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে অভিষেক বলেন, আমরা কৃষকদের জন্য দশ হাজার কোটি টাকা দিয়েছি। বিজেপি পাঁচ হাজার কোটি টাকা দিয়ে মূর্তি বানাবে, আর প্রধানমন্ত্রী বিদেশে সফর করবেন। এই ব্রিগেড থেকেই বিজেপিকে ভারত ছাড়া করতে হবে। লোকসভার পর অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে বিজেপিকে খুঁজতে হবে। বাংলা দখল করতে আহমেদাবাদ ও লক্ষ্মৌ থেকে নেতানেত্রী আনছে, এটা হাস্যকর। লোকসভা ভোটের পর এদের এক্সপ্রেস ট্রেনে তুলে দিয়ে বাড়ি পাঠানো হবে।"
এদিন অভিষেক আরো বলেন, "প্রতিবাদ করলে ভয় দেখানো হচ্ছে। সিবিআই ইডি দিয়ে ভয় দেখানো যায় না। তৃণমূল কারো চোখ রাঙানো সহ্য করে না। মাঠে লড়াই হবে জনগণের সঙ্গে। সেখানে ইডি থাকবে না, সিবিআই থাকবে না।"
এদিনের এই মঞ্চ থেকে বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "১৯ শের ব্রিগেডে কত মানুষ আসবেন তার এক ঝলক দেখা গেল বারুইপুরে। বহু মানুষ সে দিন ইতিহাস রচনা করবেন ব্রিগেডে গিয়ে।" শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "নবীনের রক্ত আর প্রবীনের বুদ্ধি, এই দিয়েই তৃণমূল কংগ্রেস গড়ে উঠেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কৃষকদের পাশে দাঁঁড়িয়েছেন। কেন্দ্রের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের মানুষের উন্নতির জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে, রাজ্যে বিরোধীদের কাজ হলো বনধ করা। বিভাজন করা।"
এদিন এই সভায় এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা, সাংসদ শুভাশীষ চক্রবর্তী, প্রতিমা মণ্ডল ও সুগত বসু, বিধায়ক শওকত মোল্লা, সোনালী গুহ, ফেরদৌসী বেগম ও জেলা পরিষদের কর্মধ্যক্ষ শৈবাল লাহিড়ী, শ্রীমন্ত বৈদ্য, আবু তাহের ও অন্যান্যরা।