ডায়মন্ড-হারবার মডেল নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে তুঙ্গে উঠেছিল কাজিয়া। বাকযুদ্ধ, টুইটযুদ্ধ ঘিরে শোরগোল পড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত দলের অভ্যন্তরীণ বিবাদ থামাতে কড়া নির্দেশ জারি করতে হয়েছিল তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। কিন্তু তারপরও দলীয় সাংসদের পক্ষে-বিরুদ্ধে হুগলির নানা জায়গায় পোস্টার পড়ে দেখা গিয়েছে। আইনজীবীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। প্রশ্নের মুখে শাসক দলের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির নির্দেশিকা! এর মধ্যেই দলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে মুখ খুললেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিজের লোকসভা কেন্দ্রে বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, পুর নির্বাচন প্রসঙ্গে ‘ব্যক্তিগত মত’ও পোষণ করেছেন তিনি। যা নিয়েই বিতর্কের সূত্রপাত। তৃণমূল সাংসদের প্রশ্ন ছিল, দলের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনও দলীয় পদাধিকারীর কী ব্যক্তিগত মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে?
এমনকী দলে অভিষেকের নেতৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ। বলেছিলেন, 'আমার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া আমি আর কাউকে নেতা মানতে রাজি নই। অভিষেকের নেতৃত্ব প্রমাণিত হয়নি। অভিষেক একজন পদাধিকারী। নেতা মমতাই। ত্রিপুরা, গোয়া জিতিয়ে দাও, মুখ্যমন্ত্রী করে দাও, তবে অভিষেককে নেতা বলে মেনে নেব।'
এরপরই অভিষেক বিরোধী মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেন কুণাল ঘোষ সহ তৃণমূলের যুব বাহিনীর নেতৃত্বরা। যাকে হাতিয়ার করে বিজেপি। ঘাস-ফুলের নেতৃত্বে মমতা বনাম অভিষেক দ্বন্দ্ব উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। শুরু হয় নানা রাজনৈতিক জল্পনা।
বৃহস্পতিবার গোয়ায় সাংবাদিক বৈঠকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। সেখানেই তাঁর জবাব, 'কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন ওনার নেত্রী মমতা ব্যানার্জী। তাঁকে ছাড়া উনি কাউকে মানেন না। আমিও তো তাই বলছি। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলছেন ঠিক বলছেন। এতে অসুবিধার কী আছে?'
এই সুরেই কংগ্রেসকে খোঁচা দিয়ে তৃণমূলে দলীয় গণতন্ত্র রয়েছে বলে দাবি করেন অভিষেক। বলেন, 'কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আমার বিরুদ্ধে বলেছেন। এতেই তো প্রমাণিত যে দলে হাইকমান্ড সংস্কৃতি নেই। এটা তো আমাদের জন্য তো ভালোই।'
পার্থ চট্টোপাধ্যায় কল্যাণ-অভিষেক বিরোধ ইস্যুতে সবাইকে 'চুপ' থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাতে ইতি টানলেন। কিন্তু, সত্যি কী বিতর্কে যবনিকা পড়ল? উত্তর লুকিয়ে সময়ের গর্ভে।