জেলার ভূমিপুত্ররাই সামলাবেন দলের সংগঠন। এই ফর্মূলাতেই গত ২৩ জুলাই নয়া সংগঠনের পরিকাঠামো সাজিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। বদলে ফেলা হয়েছিল সংগঠনের খোলনলচে। তুলে দেওয়া হয়েছে পর্যবেক্ষক পদ। কিন্তু বীরভূমের দোর্দন্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মন্ডল তার ব্যতিক্রম। শুক্রবার পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামে বুথ ভিত্তিক সাংগঠনিক সভা করে তা ঠারে ঠারে বুঝিয়েও দিলেন। ওই কর্মীসভায় দেখা গেল না কেতুগ্রামের দলীয় কো-অর্ডিনেটর ভাতারের বিধায়ক সুভাষ মন্ডলকে। দলীয় সভায় বুথ সভাপতিকে ধমক দিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হলেও অনুব্রতর প্রতি দলের আস্থা একটুও টলেনি বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
তৃণমূল কংগ্রেসে জেলার পর্যবেক্ষকের পদের বিলুপ্তি ঘটেছে। নতুন কমিটিতে কোনও পর্যবেক্ষক রাখা হয়নি। বরং স্থানীয় নেতৃত্বকে গুরুত্ব দিয়ে কো-অর্ডিনেটর নিয়োগ করেছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। পর্যবেক্ষক পদ উঠে গেলেও বর্ধমানের তিনটি বিধানসভার 'অভিভাবক'-এর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন বীরভূমের তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মন্ডল। শুক্রবার কেতুগ্রামে বুথ ভিত্তিক সংগঠনিক বৈঠক পরিচালনা করেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি। ওই সভায় দলের ঘোষিত কো-অর্ডিনেটর বিধায়ক সুভাষ মন্ডল হাজির ছিলেন না। ছিলেন না বর্ধমান জেলা তৃণমূলের কোনও কর্মকর্তা। অনুব্রত মন্ডল জানিয়ে দেন, তিনি পর্যবেক্ষক হিসাবে হাজির হননি। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এই সভা করেছেন।
অনুব্রতর এই সাংগঠনিক সভা নিয়ে কোনও হেলদোল নেই পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বের। তবে জেলা নেতৃত্বের গলায় আক্ষেপের সুর। দলের পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, "পর্যবেক্ষক তো নেই। কেতুগ্রাম, আউশগ্রাম ও মঙ্গলকোট কেষ্টদা(অনুব্রত মন্ডল) দেখেন। আগে তো আমরাই দেখতাম। বোলপুর লোকসভার মধ্যে পড়ে এই বিধানসভা। তবে দলের একজন কো-অর্ডিনেটর আছেন।" কেতুগ্রামের কো-অর্ডিনেটর সুভাষ মন্ডল কী বলছেন? তিনি বলেন, "না না আমি ওই বৈঠকে ছিলাম না। উনি(অনুব্রত মন্ডল) দেখেন, আমি দেখি না। এগুলি বীরভূম থেকে পরিচালনা করা হয়।" ২৩ জুলাই রাজ্যব্যাপী নতুন কমিটি ঘোষণা করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের অন্দরের গুঞ্জন, নতুন কমিটি গঠন করেও কাজ করা যাচ্ছে না। তাহলে কমিটি গড়ার অর্থ কী?
এদিকে পর্যবেক্ষক পদ চলে যাওয়ায় কার্যত সাংগঠনিক দায়িত্ব কমে গিয়েছে নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর। তাঁকে এককভাবে কোনও দায়িত্ব না দেওয়ায় সরব হয়েছেন দলের বিধায়কও। তারপর নানা ক্ষেত্রে দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে শুভেন্দুর। ঝাড়গ্রামে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঘোষিত সরকারি অনুষ্ঠানে হাজির থাকেননি রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী। কিন্তু পর্যবেক্ষক পদ উঠে গেলেও বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় পূর্ব বর্ধমানের তিনটে বিধানসভার 'অভিভাবক' থেকে গেলেন অনুব্রত মন্ডল।