Bengali Television, Prodip Dhar, BJP: ১১ জুন আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি-তে যোগদান করলেন অভিনেতা প্রদীপ ধর। ছোটপর্দা ও বড়পর্দায় তাঁকে মূলত চরিত্রাভিনেতা হিসেবেই চেনেন দর্শক। সাম্প্রতিক সময়ে 'রাখিবন্ধন' ধারাবাহিকে তাঁর অভিনয়ের কথা অবশ্যই মনে রেখেছেন টেলিদর্শক। এবার প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে এসে ঠিক কী ভাবছেন অভিনেতা? টলি ও টেলিপাড়ায় কি শিল্পী-টেকনিসিয়ানদের স্বতন্ত্র সংগঠন গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে? ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার পক্ষ থেকে অভিনেতার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় উঠে এল অনেক কথা।
প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে এসে কেন বিজেপি-তেই যোগদান করার কথা ভাবলেন আপনি?
ভারতবর্ষ গণতান্ত্রিক দেশ। এখানে আমার স্বাধীনতা আছে যে কোনও রাজনৈতিক দলে যোগদান করার। আর এই রাজনৈতিক দলের প্রতি আমার সমর্থন ছিল। আর মুকুলদা আমাকে যে সম্মানটা জানালেন, তাতে আমি অত্যন্ত গর্বিত।
আপনি কি এবার মূলত টলিউডে বা টেলিপাড়ায় দলের কাজ করবেন?
আমি একটি রাজনৈতিক দলে যোগদান করেছি। আর রাজনৈতিক দলে অনেক ধরনের কাজ থাকে। আমার মনে হয় দায়িত্বের কোনও ভাগ হয় না। আমি যেখানকার ছেলে, সেই গোবরডাঙায় অনেক সমস্যা রয়েছে। যদি দল আমাকে দায়িত্ব দেয় তবে সেখানেও কাজ করতে পারি। আর এ ধরনের কাজ তো আর একা সম্ভব নয়। সবাইকে নিয়েই করতে হয়। তাই শুধু আমিই কাজ করব, এমনটা নয়।
টেলিজগতে তো বকেয়া পেমেন্ট একটা বড় সমস্যা। এই রানা সরকারের বিষয়টাই ধরা যাক। এই ইস্যুটি নিয়ে কোনও কাজ করার কথা ভাবছেন?
আমি আগেই বলেছি, সবটাই দলের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে। যদি আমি তেমন কোনও দায়িত্ব পাই, তবে নিশ্চয়ই চেষ্টা করব কাজ করতে। সবাই মিলেই চেষ্টা করব যাতে আরও একটা রানা সরকার তৈরি না হয়। কিন্তু এখনও সেই সব কথা বলার সময় আসে নি। আমি শুধু যোগদান করেছি মাত্র। কোনও বিশেষ দায়িত্ব পাইনি দলের থেকে।
যদি দল আপনাকে সেই দায়িত্ব দেয়, তবে আপনার এই ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে ঠিক কী স্বপ্ন রয়েছে? বাংলা বিনোদন জগৎকে কোন জায়গায় দেখতে চান আপনি?
স্বপ্নের কথা যদি বলেন, তবে এই ইন্ডাস্ট্রির অংশ হিসেবে আমি চাই বাংলা ছবির জগতে যেন আবারও স্বর্ণযুগ ফিরে আসে।
প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যোগদানের ফলে আপনার পেশাগত জীবন ব্যাহত হবে না?
যদি বলি না, তবে সেটা মিথ্যে হবে এবং যদি বলি হ্যাঁ, তবে সেটাও মিথ্যে হবে। আমি দলে যোগদান করেছি সম্পূর্ণ আদর্শগত জায়গা থেকে। এখান থেকে তো আমার কিছু আয় করার নেই। কিন্তু আমার যেটা রোজগারের জায়গা, সেই দিকটাও তো বজায় রাখতেই হবে। যেহেতু এখনও পর্যন্ত আমি দলে কোনও দায়িত্ব-পদ পাইনি, তাই এই প্রশ্নের উত্তরটা পুরোপুরি দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু আমার বিশ্বাস, আমার পেশাগত কমিটমেন্টের জায়গাটা আমার দল বুঝবে।
মুকুল রায়ের সঙ্গে আপনার আলাপ হলো কীভাবে?
ঠিক অনেকদিনের আলাপ নয়। অল্পদিনেরই আলাপ। কিন্তু সেই অল্প সময়ের মধ্যেই ওঁর স্নেহ পেয়েছি। আর আজ যে সম্মানটা উনি আমাকে দিলেন, আমি অভিভূত। আমার বাড়ি তো গোবরডাঙা। ওখানকারই এক দাদা, মুকুলবাবুর খুবই ঘনিষ্ঠ। ওই দাদার মাধ্যমেই মুকুলবাবুর সঙ্গে আলাপ। বলতে গেলে মুকুলবাবুর সঙ্গে আমার যোগাযোগটা মসৃণ করেছেন আমাদের গোবরডাঙার সেই দাদা।
গোবরডাঙায় ঠিক কী ধরনের সমস্যা রয়েছে, যা নিয়ে আপনি কাজ করতে চাইছিলেন?
অনেক সমস্যা রয়েছে, কিন্তু এটা নিয়ে আমি এখনই খুব একটা কিছু বলতে চাই না। পরে নিশ্চয়ই জানতে পারবেন।
আপনি তো রবীন্দ্রভারতীর ছাত্র ছিলেন। ইন্ডাস্ট্রিতে এলেন কীভাবে?
আমি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। ড্রামা নিয়ে পড়ে স্নাতক হই ২০০০ সালে। তার পরে থিয়েটার ডিরেকশনে মাস্টার ডিগ্রি করি ওখানেই। সেই সময় গোবরডাঙা থেকে কলকাতায় এসে থাকতাম। পকেট মানিতে মাঝেমধ্যেই টান পড়ত। আমার বাবা বিজনেসম্যান। কিন্তু উনি এই অভিনয়, থিয়েটার, এই সব ব্যাপারে একেবারেই উৎসাহী ছিলেন না বলে ওঁর থেকে কিছু চাইতাম না। তাই কাজ খুঁজতে শুরু করি। আমি দেখেছিলাম যে থিয়েটারে ছেলেদের টাকা পাওয়ার উপায় হয় লাইট টেকনিসিয়ান বা মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করা। আমার যেহেতু কারেন্টে ভয়, তাই লাইট নয়, মেকআপ নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলাম।
আমার ইন্ডাস্ট্রিতে আসা ছিল মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবেই। সেই কাজ করতে গিয়েই আমি আস্তে আস্তে অভিনেতা হিসেবে কাজ শুরু করি। আমার সে সময়ের খুব উল্লেখযোগ্য কাজ ছিল 'গজ উকিলের হত্যা রহস্য'। ওখানে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করি। জাতীয় পুরস্কারের জন্যেও নমিনেশন পেয়েছিলাম। সম্ভবত সেটা ২০০৭ সাল। তার পরে বাংলা ছবিতে আসা। 'পাগলু ২', 'চ্যালেঞ্জ', 'চ্যালেঞ্জ ২', 'প্রলয়', 'সেদিন দেখা হয়েছিল', 'চিরদিনই তুমি যে আমার', 'লাভেরিয়া', 'সহজ পাঠের গপ্পো' এগুলো খুবই উল্লেখযোগ্য। আর টেলিভিশনের কথা যদি ধরি, তবে অবশ্যই বলব 'রাজযোটক'-এর কচিদা আর 'রাখিবন্ধন'-এর মদনমামা চরিত্রের কথা।
সামনে কোন কোন ছবির রিলিজ রয়েছে?
তিনটে ছবি রয়েছে সামনে, অভিমন্যু মুখোপাধ্যায়ের 'হুল্লোড়', রবি কিনাগী-র 'মিসড কল' আর জিতের 'প্যান্থার'। এছাড়া ভেঙ্কটেশের সঙ্গে একটি ছবির কথা চলছে। সেটা আর সপ্তাহখানেকের মধ্যে জানতে পারব। আর 'মহাপীঠ তারাপীঠ' ধারাবাহিকে মোড়লের চরিত্রটা করছি এখন।
টেলিভিশনে কাজ মানেই তো অনেকটা সময় দিতে হয়, নির্দিষ্ট সময়ে কলটাইম। সেটা সমস্যা হবে না এখন?
আমার মনে হয় না খুব একটা অসুবিধা হবে।
আপনার রাজনীতিতে যোগদানে পরিবারের সমর্থন রয়েছে?
নিশ্চয়ই। পরিবারের সমর্থন ছাড়া তো বড় কোনও কাজ সম্ভব নয়। আজ পার্টি অফিসে দলে যোগদানের সময় আমার স্ত্রী এবং ছেলে আমার সঙ্গেই ছিল।