আদানি-হিন্ডেনবার্গ ইস্যু নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের বিক্ষোভ: এলআইসি এবং এসবিআই সামনে আন্দোলন CJI-এর তত্ত্বাবধানে তদন্তের দাবি।
আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্তের দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করবে কংগ্রেস। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কেসি ভেনুগোপাল জানিয়েছেন যে সারা দেশের জেলাগুলিতে এলআইসি এবং এসবিআই অফিসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করবে কংগ্রেস। সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তিনি বলেছিলেন যে কেন্দ্রীয় সরকার তার ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের’ সাহায্য করার জন্য সাধারণ মানুষের অর্থ নয়ছয় করছে। কংগ্রেস পার্টি এর বিরোধিতা আগে করেছে এখনও করে চলেছে। কংগ্রেস আদানি গ্রুপের আর্থিক লেনদেনের তদন্তের জন্য একটি সংসদীয় প্যানেল (জেপিসি) বা সুপ্রিম কোর্টের একটি কমিটি দাবি করেছে।
সরকারের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন খড়গে
আজ সংসদ ভবনে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে বিক্ষোভ করবেন কংগ্রেস সাংসদরা। দলের তরফে বলা হয়েছে সরকার এ বিষয়ে সংসদে আলোচনা হতে দিচ্ছে না। তুমুল হট্টগোলের পর শুক্রবার ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংসদের উভয় কক্ষের কার্যক্রম মুলতবি করা হয়। সরকারের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে। তিনি অমৃত কালের স্টক ক্র্যাশকে একটি বিরাট কেলেঙ্কারী হিসাবে বর্ণনা করেছেন। জয়েন্ট পার্লামেন্টারি কমিটি (জেপিসি) বা সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে বিষয়টির তদন্তের দাবি করেছেন খড়গে।
আদানি বিতর্কে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে তিনটি প্রশ্ন কংগ্রেসের তরফে
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ, রবিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আদানি ইস্যু নিয়ে তিনটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছেন। আদানি গ্রুপের হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট সামনে আসার পর তিনি লিখেছেন- আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগের মধ্যে মোদী সরকার নীরবতা পালন করেছে। এটা ‘কারসাজির স্পষ্ট ইঙ্গিত’। রমেশ বলেছিলেন কংগ্রেস দল প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছে যার প্রতিটিতেই মোদী নিরব।
প্রথম প্রশ্ন: গৌতম আদানির ভাই বিনোদ আদানির বিরুদ্ধে পানামা পেপারস ও প্যান্ডোরা পেপারসে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে, এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
দ্বিতীয় প্রশ্ন: হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টের পর গৌতম আদানির বিরুদ্ধে ইডি, সিবিআই এবং আয়কর কী ব্যবস্থা নিয়েছে?
তৃতীয় প্রশ্ন: বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দরে শুধু আদানি গোষ্ঠীকে একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, এটা কীভাবে সম্ভব?
মার্কিন শর্ট সেলিং ফার্ম হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে স্টক ম্যানিপুলেশনের অভিযোগ এনেছে। এরপর ক্রমাগত পতন ঘটছে গ্রুপ কোম্পানিগুলোর শেয়ারের। আদানি গ্রুপ এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। গৌতম আদানি বলেন, ‘এটা দেশকে বদনাম করার ষড়যন্ত্র’।
আদানি গ্রুপের নতুন করে শেয়ার ছাড়ার বিষয়টি নিয়েও সাংবদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এফপিও-র প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “এই দেশে কত বার এফপিও তুলে নেওয়া হয়েছে? এ জন্য কত বার দেশের ভারমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে?” আমেরিকার শর্ট সেলিং সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ এক রিপোর্টে দাবি করে, আদানি গ্রুপ কারচুপি করে নিজেদের শেয়ার দর বাড়িয়েছেন। পাশাপাশি আদানি গ্রুপের ঋণশোধের বিষয়টি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল ওই রিপোর্টে। যদিও সেই রিপোর্টের দাবি নস্যাৎ করে আদানি গোষ্ঠী। কিন্তু তা সত্ত্বেও আদানি গ্রুপের শেয়ারে ধস নামা আটকায়নি।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর শনিবার বলেছেন ‘ব্যাঙ্ক এবং এলআইসি ইতিমধ্যেই আদানির মামলায় তাদের বিবৃতি জারি করেছে। এ ব্যাপারে সরকারের আড়াল করার কিছু নেই। তিনি বলেন, সাধারণ বাজেট নিয়ে যাতে আলোচনা না হয় সেজন্য বিরোধী দলগুলো সংসদে তোলপাড় করছে। অন্যদিকে, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বলেছেন, ‘আদানি মামলায় যতই অভিযোগ আনা হোক না কেন, তার তদন্ত হওয়া উচিত। আদানি বিতর্ক নিয়ে বিগত দিনগুলিতে সংসদে বিরোধীরা তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল। বিরোধীদের দাবি, পুরো বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি জেপিসি গঠন করা উচিত বা সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে তদন্ত করা উচিত।
শনিবার অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছেন যে আদানি ইস্যু নিয়ে বর্তমান বিতর্কের মধ্যে আর্থিক নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলি তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আদানি বিতর্কে উত্তাল সংসদ। বিরোধীদের নিশানার মুখে সরকার, এর মাঝেই আদানির বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির ব্যাপারে সাফ জানিয়ে দিলেন সীতারমন। তিনি বলেন, “নিয়ন্ত্রকরা তাদের কাজ করছেন।”নিয়ন্ত্রক বলতে সেবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতো সংস্থার কথা বলতে চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেছেন যে “আদানি গ্রুপের ২০ হাজার কোটি টাকার FPO প্রত্যাহার দেশের অর্থনীতির চিত্রকে প্রভাবিত করেনি। দেশে বহুবার এফপিও প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং এতে দেশের ভাবমূর্তির কোনো প্রভাব পড়েনি। প্রতিটি বাজারে উত্থান-পতন ঘটে। আরবিআই ইতিমধ্যেই জানিয়েছে যে ব্যাঙ্কিং সেক্টর শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল”।