Adhir Bengal Congress TMC: প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরী আনুষ্ঠানিকভাবে পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের সভাপতির পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তার সঙ্গেই কংগ্রেস ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে রাজ্যে তার সাংগঠনিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটি (AICC), সূত্রে খবর, একটি নতুন সাংগঠনিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে, নির্বাচনকে মাথায় রেখে একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে এবং সম্ভবত তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) এর সঙ্গে দলের অবস্থানের পুনর্মূল্যায়ন করতে চাইছেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব।
সোমবার, পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের (ডব্লিউবিপিসিসি) ২১ জন নেতা নয়াদিল্লিতে এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কেসি ভেনুগোপালের সাথে দেখা করেছেন। রাজ্যের প্রবীণ কংগ্রেস নেতারা যেমন অধীর চৌধুরী, প্রদীপ ভট্টাচার্য, দীপা দাশমুন্সি, অমিতাভ চক্রবর্তী এবং রাজ্যে দলের একমাত্র লোকসভা সাংসদ ঈশা খান চৌধুরী এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। অধীর চৌধুরীর বদলে কাকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি করা হবে, তা স্থির করার দায়িত্ব হাইকমান্ডের ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। তাঁরা বৈঠকে তৃণমূলস্তরে সংগঠন পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। এআইসিসি নেতৃত্বকে রাজ্যে ব্লকস্তর থেকে নতুন কমিটি গঠন করার এবং নতুন মুখদের সেই সব কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
অধীর চৌধুরী এখন রাজ্য রাজনীতিতে ছবির বাইরে। সূত্র জানিয়েছে যে এআইসিসি (AICC) টিএমসি সম্পর্কে কংগ্রেসের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করবে। অধীরের আমলে, প্রদেশ কংগ্রেস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন টিএমসির বিরোধিতায় অটল ছিল। যদিও জাতীয়স্তরে দুটি দল বিরোধী ভারত জোটের অংশ।
তবে এটাও ভাবার বিষয় যে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে অধীর চৌধুরীর উত্তরসূরি খুঁজে পাওয়া কংগ্রেস হাইকমান্ডের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রবীণ কংগ্রেস নেতা বলেছেন, 'অধীর চৌধুরী ছাড়া প্রদেশ সভাপতি হওয়ার যোগ্য ব্যক্তি কংগ্রেসে নেই। তৃণমূল এবং বিজেপির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মত কংগ্রেসে তিনিই শেষ ব্যক্তি। তিনি জাতীয় নেতৃত্বের মতানৈক্য সত্ত্বেও লড়াই চালিয়েছেন। কিন্তু, তার তৃণমূল বিরোধী অবস্থান থেকে সরে আসেননি। আমি জানি না এআইসিসি তাঁর স্থলাভিষিক্ত করার জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি খুঁজে পাবে কি না।
বৈঠকে যা হয়েছে
সোমবার রাতে বৈঠকের পর এআইসিসির পশ্চিমবঙ্গ ইনচার্জ গোলাম আহমদ মির সাংবাদিকদের বলেন, 'আপনারা জানেন, লোকসভার ফলাফলের পর অধীর চৌধুরী হাইকমান্ডের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। বাংলার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা ২৫ জন নেতাকে একের পর এক বৈঠকের জন্য ডেকেছিলাম। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গে কী করা দরকার, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এখন দলীয় কাঠামো তৈরি সহ বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে একটি রোডম্যাপ বানানো হবে।'
বৈঠকে ছিলেন দীপা দাশমুন্সি। তিনি এআইসিসির একজন সাধারণ সম্পাদক এবং রায়গঞ্জের প্রাক্তন সাংসদ। পাশাপাশি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একজন কট্টর সমালোচকও। দীপা দাশমুন্সি বলেছেন, 'পশ্চিমবঙ্গে আগামীর রাস্তা কঠিন। হঠাৎ করে কিছু হবে না। আমাদের কোনও বিধায়ক নেই। রাজ্যে একজনই সাংসদ। বামফ্রন্টের আমলে আমরা নির্বাচনে কারচুপির কথা জানতাম। কিন্তু এখন তা বৈজ্ঞানিক রূপ নিয়েছে, সন্ত্রাসের রূপ নিয়েছে। এখন ভোটাররা বাংলায় ক্ষমতাসীন দলকে ভোট না দিলে তাঁদের জব কার্ড (MGNREGS) এবং অন্যান্য সরকারি প্রকল্প ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনও শাসক দলের ক্যাডারে পরিণত হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী কিছু দেখেও দেখছে না।'
কংগ্রেস টিএমসি সম্পর্কে তার অবস্থানের পুনর্মূল্যায়ন করবে কি না জানতে চাওয়া হলে দীপা দাশমুন্সি বলেন, 'এটাতেও একটা প্রশ্ন আছে। আমরা ভারত জোটের অংশ। কিন্তু, বাংলায় লড়াই বিজেপির পাশাপাশি টিএমসির বিরুদ্ধেও। অন্যদিকে, ভারত জোটে থাকা সত্ত্বেও বাংলায় আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে টিএমসি। তারপর বাংলায় এমন মেরুকরণ হয়েছে, যা আমরা আগে কখনও দেখিনি। কঠিন হলেও বাংলায় আমাদের সংগঠনকে ধীরে ধীরে পুনর্গঠিত করতে হবে।'
এআইসিসি সদস্য অমিতাভ চক্রবর্তী বলেছেন, সোমবারের বৈঠকে রাজ্যের সমস্ত নেতা তাদের নিজস্ব মতামত প্রকাশ করেছেন। নয়াদিল্লি থেকে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, 'প্রত্যেকে পাঁচ থেকে ছয় মিনিট কথা বলার জন্য সময় পেয়েছিলেন। আমি একজন সংগঠনের মানুষ। আমি আবার ব্লক এবং জেলা স্তর থেকে সংগঠনকে পুনর্গঠন এবং নতুন মুখ আনার ওপর জোর দিয়েছি। বর্তমানে রাজ্যে তেমন সংগঠন নেই। প্রথমে আমাদের সংগঠনকে পুনর্গঠন করতে হবে। তারপরে জোটের কথা ভাবতে হবে।'
অধীরের স্থলাভিষিক্ত কে হবেন, সেই প্রসঙ্গে এআইসিসি সদস্য শুভঙ্কর সরকার বলেছেন, 'আমরা পরবর্তী রাজ্য সভাপতি কে হবেন, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার এআইসিসির ওপর ছেড়ে দিয়েছি। তৃণমূল থেকে রাজ্যস্তরে পরিবর্তন দরকার। বৈঠকে আমি সেটার ওপরই জোর দিয়েছি।'
কংগ্রেসের একাংশ সূত্রে খবর, অধীর বলেছেন যে তিনি লোকসভা নির্বাচনের সময় দলের ওপর বিরক্ত হয়েছিলেন। কারণ, দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে প্রকাশ্যে বলেছিলেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারত ব্লকের অংশ হবেন কি না সে বিষয়ে অধীর চৌধুরী 'সিদ্ধান্ত নেওয়ার কেউ নন'। লোকসভা নির্বাচনের ফাঁকে মে মাসে এই মন্তব্য করেছিলেন খাড়গে। পালটা অধীর চৌধুরী সেই সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের বিরুদ্ধে তাঁর বিরোধিতা থেকে সরে আসতে অস্বীকার করার সঙ্গেই বলেছিলেন যে তিনি 'কংগ্রেসকে শেষ' করার চেষ্টা করছেন এমন ব্যক্তিকে জোটে স্বাগত জানাবেন না। পালটা খাড়গে এই পর্বটিকে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করেন। তিনি অধীর চৌধুরীকে দলের একজন, 'লড়াকু সিপাহি' বা লড়াকু সৈনিক বলে প্রশংসা করেছিলেন।
কংগ্রেসের একটি সূত্র অধীরকে উদ্ধৃত করে বলেছে, 'নির্বাচনের সময় মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছিলেন যে, প্রয়োজনে আমাকে জোট নিয়ে আলোচনার বাইরে রাখা হবে। যা আমাকে বিব্রত করেছিল। পশ্চিমবঙ্গে দলের নির্বাচনের ফলাফল ভালো হয়নি। আমি প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির অস্থায়ী সভাপতি ছিলাম। ভালো ফলাফল করানোটা আমার দায়িত্ব ছিল। এর কারণেই আমি খাড়গেজিকে বলেছিলাম যে যদি সম্ভব হয়, আপনি পদ থেকে সরিয়ে দিন।'
আরও পড়ুন- ট্রেন দুর্ঘটনা যেন ‘নিউ নর্মাল’! যাত্রীসুরক্ষা শিকেয়, বিরোধীদের নিশানায় রেলমন্ত্রী
বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদ বলেছেন যে তিনি জানতেন, অস্থায়ী প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পার্টির সংবিধানে নির্ধারিত নিয়ম অনুসারে, খাড়গে ২০২২ সালের শেষের দিকে কংগ্রেসের জাতীয় সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে তাঁর সময়সীমা যে শেষ হয়ে গিয়েছে, সেটা তিনি জানতেন না। এই ব্যাপারে অধীরকে উদ্ধৃত করে কংগ্রেস নেতাদের একাংশ বলেছেন, 'আমি জানতাম যে এই সভা আমার সভাপতিত্বেই ডাকা হয়েছে। জানতাম যে আমি এখনও পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের সভাপতি। কিন্তু, বৈঠকের সময় গুলাম আলি মির বলেন যে প্রাক্তন প্রদেশ রাষ্ট্রপতিও এখানে আছেন। সেই সময়ে, আমি জানতে পারি যে আমি পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি।'