অধীর রজ্ঞন চৌধুরী কি বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন? রাজ্য রাজনীতিতে এই মুহূর্তে অন্যতম বড় প্রশ্ন এখন এটাই। সাম্প্রতিক অতীতে এ বিষয়ে নানা জল্পনা চললেও, সরাসরি কোনও উত্তর মেলেনি। তবে মুকুল রায়ের মন্তব্য এই জল্পনায় নতুন করে জল-হাওয়া যুগিয়েছে। মুকুল বলেছেন, "অধীর যদি সত্যিই মমতাকে হারাতে চায়, তাহলে কংগ্রেস না ছেড়ে উপায় নেই"।
দীর্ঘ বাম শাসনেও বহরমপুর তথা মুর্শিদাবাদ রাজনীতির শেষ কথা ছিলেন অধীর চৌধুরী। লাল ঝান্ডার আস্ফালনের মধ্যেও নিজের জেলায় জাতীয় কংগ্রেসের পতাকা উঁচিয়ে রেখেছিলেন অধীর। তবে এর পাশাপাশি অধীর বরাবরের ঘোষিত মমতা বিরোধী। ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচন বা ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের ভোটে কংগ্রেস -তৃণমূল জোট হলেও, নিজের অবস্থান থেকে সরেননি বহরমপুরের সাংসদ। পরবর্তীকালে রাজ্যে জোট ভাঙার পর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হয়ে তৃণমূল বিরোধিতাকে আরও উচ্চগ্রামে তুলে নিয়ে গিয়েছেন অধীর চৌধুরী। তবে তৃণমূল আমলে মুর্শিদাবাদ জেলা রাজনীতিতে তাঁর বজ্র আঁটুনি অনেকটাই শিথিল হয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রদেশ সভাপতির কুর্সিও খুইয়েছেন তিনি। এদিকে, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ফের কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের সম্ভবনা তৈরি হয়েছে। এমতাবস্থায় অধীরের বিজেপিতে যোগদান নিয়ে প্রবল জল্পনা তৈরি হয়েছে। তবে অধীর চৌধুরি এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তবু অধীরের বিজেপি-তে যোগদানর ইঙ্গিত করে সাম্প্রতিক মন্তব্যটি যেহেতু মুকুল রায় করেছেন তাই তা ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে।
আরও পড়ুন- মুকুল-কৈলাশ টেপ ফাঁস, আদালতের পথে মুকুল
মুকুলের এদিনের মন্তব্যেকে একাধিক কারণে তাত্পর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। প্রথমত, অধীরের জন্য যে বিজেপির দরজা খোলা তা স্পষ্টত জানিয়ে দিলেন মুকুল। পাশাপাশি, রাজ্যে তৃণমূল বিরোধিতার ক্ষেত্রে একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য দল যে বিজেপি সে কথাও কৌশলে বুঝিয়ে দিয়েছেন পোর খাওয়া রাজনীতিক মুকুল রায়। উল্লেখ্য, অনেকেই মনে করেন লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের জোটের রাস্তা খুলে রাখতেই অধীরের মতো পরিচিত মমতা বিরোধী মুখকে সরিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদে সোমেনকে নিয়ে এসেছেন রাহুল গান্ধী। সাবেক কংগ্রেস রাজনীতিতে সোমেনের সঙ্গে বিরোধের জন্যই মমতা দল ছাড়লেও, পরবর্তীকালে সেই সোমেন মিত্রই তৃণমূলের টিকিটে লোকসভার সাংসদ হয়েছিলেন। আবার তিনি তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে ফিরে এসেছেন। এমনিতে রাজ্যে মমতার দল কংগ্রেসের সংগঠন 'শেষ করে দিচ্ছে' বলে সোমেন মনে করলেও, অধীরের তুলনায় এই মুহূর্তে তিনি নমনীয় মুখ এমনটাই মনে করা হয়। উল্লেখযোগ্যভাবে প্রদেশ সভাপতির দায়িত্ব পেয়ে সোমেন সংবাদ মাধ্যমের সামনে বারবার বলেছেন, "জোট করার মালিক আমি নই"। অর্থাৎ জোটের রাস্তা যে একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি তা শিয়ালদার ছোড়দার এমন মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট বলে মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। এদিকে, বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার সময় মুকুলও আনুষ্ঠানিকভাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদের পাশে বসে বলেছিলেন, "কংগ্রেসের সঙ্গে থাকা যাচ্ছিল না বলেই তৃণমূলে এসেছিলাম। কিন্তু, এখন সেই দল কংগ্রেসের সঙ্গেই চলতে চাইছে। তাই দল ছাড়ছি"। ফলে সব মিলিয়ে রাজ্যে ফের তৃণমূল ও কংগ্রেসের জোট হতে পারে এবং তা না হলেও কংগ্রেস যে আদতে তৃণমূলেরই বি টিম সে কথাই ইঙ্গিতে বোঝাতে চেয়েছেন মুকুল। আর তাই অধীর চৌধুরির মতো 'আউট অ্যান্ড আউট' মমতা বিরোধী নেতার জন্য যে বিজেপি-ই গন্তব্য হওয়া উচিত তা বলেছেন তৃণমূলের একদা দু'নম্বর মুকুল রায়। এরমধ্যে আবার অধীর ঘনিষ্ঠ হুমায়ুন কবীর বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। তাই, অধীরের পদ্ম শিবিরে যোগদানের সম্ভবনা এখন জোরদার জল্পনার বিষয়।