Nehru-Modi: রামমন্দির আন্দোলনের উৎস তৈরি হয়েছিল নেহরুর আমলেই।
দিল্লিতে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের সাফল্যের মধ্যেই নরেন্দ্র মোদী বিশ্বব্যাপী একটি প্রশ্ন তৈরি করছেন। তা হল, যেমনটি জওহরলাল নেহরু স্বাধীনতার পরে বিশ্ব মঞ্চে তৈরি করেছিলেন, ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নিরপেক্ষ আন্দোলনের নেতা হয়ে উঠেছিলেন। ভারত তখন দরিদ্র এবং পশ্চাদপদ ছিল। আজ, মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি। বিশ্ব মঞ্চে আর্থিক ক্ষেত্রে শীর্ষে ওঠার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে আজকের ভারত। প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন করণ সিং-ও মনে করেন, নরেন্দ্র মোদী এই ব্যাপারে জওহরলাল নেহরুর সঙ্গেই তুলনীয়। করণ সিং বলেন, '(আমার মনে হয়) তিনি একথা কখনও স্বীকার করবেন না যে আরেকজন নেহেরু হতে চান অথবা তাঁকেও ছাড়িয়ে যেতে চান।'
Advertisment
অনেকে ইতিমধ্যেই মোদীকে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাঁরা ইচ্ছে করেই মোদীকে নেহরুর সঙ্গে তুলনা করেননি। কারণ, বিজেপি-আরএসএস অত্যন্ত নেহরু বিরোধী। তবে, তাঁদেরও মতে ইন্দিরা গান্ধীর মতই মোদী একজন শক্তিশালী নেতা। যিনি দলকে ছাপিয়ে জননেতা হয়ে উঠতে পারেন। যদিও অনেকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করার মোদীর সমালোচনা করেছেন। আর, যদি নেহরুর সঙ্গে তুলনা টানতে হয়, তবে বলতে হয় নেহরুই প্রধানমন্ত্রীর দফতরের মাধ্যমে দেশে শাসন ব্যবস্থা চালু করেছিলেন।
তিনি ছিলেন পণ্ডিত, হ্যারো-কেমব্রিজ-শিক্ষিত, অভিজাত, আনন্দ ভবনে লালিত-পালিত, ভারতীয় জনগণের প্রিয়। কারণ, তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িত ছিলেন। দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষিত করতে বহুবার জেলে গিয়েছিলেন। ১৯৪৬ সালে মহাত্মা গান্ধী তাঁকে কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে বেছে নেওয়ার একটি কারণ, নেহরুর মধ্যে ব্রিটিশদের সঙ্গে লড়াইয়ের একটি ক্ষমতা ছিল। সেই ক্ষমতা, যা তাঁকে প্রধানমন্ত্রী করেছিল। এক স্বাধীন, সার্বভৌম ভারতের উত্তরণকে মসৃণ করেছিল।
Advertisment
অন্যদিকে অ-ইংরেজিভাষী মোদী তাঁর চাওয়ালা ব্যাকগ্রাউন্ড এবং ওবিসি শংসাপত্রকে সঙ্গে করে দেশের ক্ষমতার শীর্ষে উঠেছেন। তাঁর লক্ষ্য, বিশ্বব্যাপী ভারতের মর্যাদা বৃদ্ধি। এটি ভারতের গণতন্ত্রকে আরও সক্ষম করে তোলার গল্প। যাতে জড়িয়ে আছে এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী ভারতের স্বপ্ন। যেখানে ভারতকে মোদী কার্যকরভাবে এক ক্রমবর্ধমান বাজার করে তুলেছেন। পশ্চিমী দেশগুলোর চিন-বিরোধী নীতির হাতিয়ার হিসেবে।
দিল্লি জি২০ সম্মেলনে ঘোষিত 'ভারত-পশ্চিম এশিয়া-ইউরোপ' করিডর, চিনের 'বেল্ট অ্যান্ড রোড' উদ্যোগকে কার্যত ম্রিয়মাণ করে দিয়েছে। যা দেখে অনেকেই বলছেন, নেহরু ও মোদী- দুই নেতা আদর্শগত দিক থেকে আলাদা হলেও জি২০ সম্মেলনে নেহরুর বই থেকেই মোদী যেন একটি পাতা ধার করেছিলেন। নেহরু সংখ্যালঘুদের অধিকারের প্রতি বিশ্বাসী ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ছিলেন। আর, মোদী তাঁর হিন্দু সভ্যতার আদর্শকে হাতিয়ার করে উঠে এসেছেন। লোকসভায় তাঁকে সামনে রেখেই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বিজেপি। তারপরও জি২০-র সাফল্য যেন বিশ্ব দরবারে ভারতের মাথা উঁচু করে তোলার জন্য নেহরু আর মোদী, এই দুই নেতাকে পাশাপাশি আসনে বসিয়ে দিল।