Advertisment

দল পাল্টেছেন 'দাদা', পদ্মবনে 'বেসুরো' মুকুল অনুগামীরা

ভাঙনের অপেক্ষায় গেরুয়া শিবির?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Mukul Roy's many followers are now Dissonant in BJP

তৃণমূলে যোগ দিয়ে অভিষেকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মুকুল রায়।

ভোট বিপর্যয়ের ধাক্কা কাটেনি। তার আগেই যেন রাজ্য বিজেপিতে টর্নেডো আছড়ে পড়েছে। পদ্ম ছেড়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এখন জোড়া-ফুলে। আর মুকুল দল পাল্টাতেই বিজেপিতে 'বেসুরো' একাধিক 'দাদা'র অনুগামী। মুকুল রায় বিজেপি ছাড়ায় দলের প্রভূত ক্ষতি হল বলে মনে করছেন এই 'বেসুরো'রা। তবে, বেশিরভাগই এখনই বিজেপি ছাড়ার বিষয়ে চূড়ান্ত মনস্থির করেননি বলেই দাবি করেছেন।

Advertisment

১৯-য়ের ভোটে বাংলায় বিজেপির সাফল্যের পরই দলে গুরুত্ব বাড়ে মুকুল রায়ের। দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি করা হয় তাঁকে। এমনকী যাদবপুর লোকসভা থেকে পরাজিত হলেও পদ দেওয়া হয় তাঁরই অনুগামী বলে পরিচিত অনুপম হাজরাকেও। কিন্তু, একুশে পদ্ম শিবির বাংলা জয়ের স্বপ্ন দেখলেও তেমন সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায়নি মুকুলকে। আর এতেই ক্ষুব্ধ হন 'চাণক্য'। তখন থেকেই তাঁর ফুল বদলের তোড়জোড় শুরু। শুভেন্দু অধিকারীর বিজেপিতে যোগদানের পর থেকেই দলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা।

আরও পড়ুন- Mukul Roy: কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা ছাড়লেন মুকুল, সুরক্ষায় রাজ্য পুলিশ

অস্বস্তিতে বিজেপি। মুকুলের দল বদলের দিনই দিলীপের ডাকা বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার বৈঠকে গরহাজির ছিলেন ওই অঞ্চলের তিন বিধায়ক। আসেননি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরও। গরহাজির গাইঘাটার বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর, বাগদার বিশ্বজিৎ দাস এবং বনগাঁ উত্তরের অশোক কীর্তনিয়ার মধ্যে শনিবার মুখ খুলেছেন বিশ্বজিৎ। মুকুলের দলত্যাগে যে বিজেপির ক্ষতি হবে তা অকপটে বলেছেন তিনি। বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক অত্যন্ত 'মধুর'। বিশ্বজিৎ দাসের কথায়, 'মুকুলদার সঙ্গে আমার সম্পর্ক পারিবারিক। ওনার না থাকায় বিজেপির ক্ষতি তো বটেই। কেন উনি দল ছাড়লেন তা নেতৃত্ব খতিয়ে দেখবেন। মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও আমার মধুর সম্পর্ক।' রাজ্য বিজেপি সভাপতির ডাকা বৈঠকে না যাওয়ার কারণ হিসাবে ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কথা জানিয়েছেন বিশ্বজিৎ। কিন্তু আসলে তা যে নয়, বিজেপি বিধায়কের এ দিনের বক্তব্যেই তা স্পষ্ট। বাগদার বিধায়ক বলেছেন, 'সাংগঠনিক বৈঠক হল এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে। যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তাই ওই বৈঠকে হাজির হইনি।' তাহলে কী বিশ্বজিৎও দল ছাড়ছেন? এ বিষয়ে বাগদার বিধায়ক বলেছেন, 'ভবিষ্যতের কথা ভবিষ্যত বলবে।'

মুকুল রায়ের ২০০৯-এ কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে, আবার ২০১৯ সালে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন নোয়াপাড়ার প্রাক্তন বিধায়ক সুনীল সিং। ভোটের আগে বিজেপিতে তাঁর আতরণ ঘিরে প্রশ্ন উঠেছিল। তবে, একুশের ভোট নোয়াপাড়া থেকে বিজেপির টিকিটে পরাজিত হন তিনি। এবার মুকুলের দলত্যাগে ফের সামনে এলেন সুনীলল। বললেন, 'মুকুল রায়ের মতো নেতা চলে গেলে দলের ক্ষতি তো হবেই। ওনার হাত ধরেই রাজনীতি করছি। কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে ও তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে এসেছি। ফলে খারপ লাগছে।' সাংসদ অর্জুন সিংয়ের আত্মীয় সুনীল সিংয়ের মন্তব্যেই বেসুরো ইঙ্গিত। তাঁর বিজেপি ত্যাগ নিয়ে এখন জোর গুঞ্জন।

আরও পড়ুন- Explained: মুকুলের ঘরওয়াপসির ঘোরতর কারণগুলি কী?

এদিকে শুক্রবার মুকুল রায়ের বিজেপি ত্যাগের পর পরই বনগাঁয় গেরুয়া শিবিরে ভাঙন ধরেছে। দল ছেড়েছেন বনগাঁ বিজেপির সাংগঠনিক সহসভাপতি তপন সিনহা। ভিডিও বার্তায় তপন সিনহা জানিয়েছেন, মুকুল রায়ের হাত ধরেই তাঁর বিজেপিতে যোগদান। এরপরই বনগাঁয় দলের হয়ে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। বিধানসভাতেও বিজেপির ভালো ফল হয়েছে ওই এলাকায়। কিন্তু বর্তমানে আর দলের হয়ে কাজ করা যাচ্ছিলো না।তাই বিজেপি ত্যাগ করেছেন তপনবাবু। প্রথম থেকেই তপন সিনহা মুকুল অনুগামী বলে পরিচিত। 'দাদা' তৃণমূলে যোগ দিলেও অবশ্য তপন সিনহা সেই পথের পথিক হবেন কিনা তা খোলসা করেননি।

রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের কথায়, 'ধান্দাবাজরা দল ছাড়ছে। মুকুল রায় যাওয়ার আগেও অনেতে গিয়েছেন, অনেকে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। ঝড়ে অনেকে আসে, অনেকে চলে যায়। এতে দলের কোনও ক্ষতি হবে না।' তবে, আপাতত 'বেসুরো' মুকুল অনুগামীদের সামলাতে কী পদক্ষেপ করে গেরুয়া শিবির সেদিকেই নজর রাজনৈতিক মহলের।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

mukul roy dilip ghosh bjp tmc
Advertisment