তোলপাড় মহারাষ্ট্রের রাজনীতি। ভাইপোর গুগলিতে সরাসরি বোল্ড কাকা। পরবর্তী রণকৌশল নির্ধারণে আগামী ৬ জুলাই জরুরি বৈঠক। ‘পাওয়ার’ হীন শরদের এখন নাজেহাল অবস্থা। এর মধ্যেই অজিত পাওয়ারের সাফ যুক্তি ‘দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়করা আমার সঙ্গে রয়েছেন’। অন্যদিকে কাকা শরদ পাওয়ারের দাবি ‘মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছে'।
অজিত পাওয়ার মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) আট বিধায়ক একনাথ শিণ্ডের নেতৃত্বাধীন সরকারে যোগ দিয়েছে। বিরোধী শরদ পাওয়ার, কংগ্রেস আর শিবসেনা স্বভাবতই ব্যাপারটা খোলা মনে নেয়নি। অভিযোগের আঙুল তুলেছে বিজেপির দিকে। প্রতিক্রিয়ায় শরদ পাওয়ার বলেছেন, ‘আজ যা হয়েছে তা আমার কাছে নতুন নয়। অতীতে এমন ঘটনা ঘটেছে যেখানে মানুষ আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। এমনকী, আমার মাত্র ৫ জন বিধায়ক হাতে ছিল। যাঁরা চলে গেছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ দলের নীতির বিরুদ্ধে এটা করেছেন।’
এই প্রসঙ্গে মোদী তথা বিজেপিকেকেও একহাত নেন শরদ পাওয়ার। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদী দু’দিন আগে এনসিপিকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে আক্রমণ করেছিলেন। আমাদের কিছু এনসিপি বিধায়ককে আজ মহারাষ্ট্র মন্ত্রিসভায় নিয়ে তাঁরা দেখিয়ে দিয়েছেন যে এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি এজন্য বিজেপিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’
অজিত পাওয়ার ছাড়াও রবিবার আরও আট জন বিধায়ক মহারাষ্ট্র সরকারে যোগদানের শপথ নিয়েছেন। তাঁরা হলেন— ছগন ভুজবল, দিলীপ ওয়ালসে পাতিল, হাসান মুশরিফ, ধনঞ্জয় মুণ্ডে, ধর্মোবাবা আত্রম, অদিতি তাটকরে, সঞ্জয় বানসোডে এবং অনিল পাটিল। মহারাষ্ট্রে কংগ্রেসের দায়িত্ব রয়েছে জয়রাম রমেশের কাঁধে। তিনি বলেছেন যে, ‘ওয়াশিং মেশিন’ বিজেপি তার কাজ ফের শুরু করেছে। কারণ, এই নেতাদের তথা নতুন মন্ত্রীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন এবং এখন ‘ক্লিনচিট’ পেলেন।
সতর্ক কিন্তু, কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে শিবসেনাও। শিবসেনা (উদ্ধব বালাসাহেব ঠাকরে) দলের নেতা সঞ্জয় রাউত বলেছেন যে এনসিপি নেতা অজিত পাওয়ারকে উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা, একনাথ শিণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর পদ হারানোর প্রক্রিয়ার শুরু। রাউতের একথা বলার কারণ, অজিত পাওয়ার আর শিণ্ডের সম্পর্ক দীর্ঘদিনই খারাপ বলে মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে খবর প্রচলিত রয়েছে।
শুধু শিণ্ডেই নয়। সঞ্জয় রাউত নিশানা করেছেন অজিত পাওয়ারকেও। অজিত পাওয়ার দাবি করেছেন, তাঁর সঙ্গে গোটা এনসিপি রয়েছে। পালটা রাউত বলেছেন, ‘সরকারে যোগ দেওয়া এনসিপি বিধায়করা দলত্যাগ-বিরোধী আইনের আওতায় পড়বেন। একথা জানার পরও অজিত পাওয়ার এবং এনসিপির আট বিধায়ক মহারাষ্ট্র সরকারে যোগ দিয়েছেন।’ রাউতের কটাক্ষ, ‘এনসিপির সরকারে যোগদান এবং দলে বিদ্রোহ কোনও রাজনৈতিক ভূমিকম্প নয়। এই উন্নয়নকে (জোটকে) ট্রিপল ইঞ্জিন সরকার হিসেবে দেখা উচিত নয়। কারণ, দুটি ইঞ্জিনের মধ্যে একটি কার্যক্ষমতা হারাতে চলেছে।’ রাউতের এই মন্তব্যই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, তাহলে কি সরকারে শিণ্ডেকে বেগ দিতেই অজিত পাওয়ারকে নিয়ে এলেন ফড়নবিশ? সেকথাই কি বলতে চাইছেন রাউত?
অজিত পাওয়ার যখন ৫৩ জনের মধ্যে সমস্ত বিধায়কের সমর্থন দাবি করেছেন, রবিবার বিকেলে রাজভবনে শপথ নেওয়ার সময় দেখা গিয়েছে মাত্র ১৬-১৭ জন বিধায়ক সেখানে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন। অজিতের ঘনিষ্ঠ সূত্র দাবি করেছে যে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি এনসিপি বিধায়ক তাকে সমর্থনের চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন এবং সংখ্যাটি "৩৬-এর বেশি"। এনসিপি নেতা জিতেন্দ্র আওহাদ এপ্রসঙ্গে বলেছেন, এ ধরনের দাবির কোন মানে হয় না। তিনি বলেছেন “এনসিপির একমাত্র নেতা হলেন শরদ পাওয়ার”। তিনি আরও জোর দিয়েছিলেন যে এনসিপি-সেনা-কংগ্রেস জোটের এমভিএ সরকারকে পতনের কারণ হিসাবে অজিত পাওয়ারকে দোষারোপ করা হয়েছিল, কিন্তু এখন উভয় পক্ষই "হাত মেলাচ্ছে"।
যদিও এদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে মহারাষ্ট্রের স্ট্রং ম্যান শারদ পাওয়ার এ বিষয়ে বলেন, তিনি সরাসরি রাজ্যের মানুষের কাছে যাবেন। পাওয়ার বলেন, “আমি অতীতে ৮০ এর দশকে একই কাজ করেছি এবং আমি এখন সেটাই করব। আমি এই রাজ্যের মানুষ এবং যুবকদের বিশ্বাস করি,”। যদিও অজিত পাওয়ার স্পষ্ট করেছেন যে এনসিপি পরবর্তী নির্বাচনে বিজেপি এবং শিণ্ডে সেনার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। ইতিমধ্যে কংগ্রেস প্রধান নানা পাটোলে দাবি করেছেন যে এনসিপির মধ্যে একটি গোষ্ঠী বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে তাতে এমভিএ-র কোনও ক্ষতি হবে না। “ক্ষমতার স্বার্থে কে কার সাথে হাত মেলাচ্ছে তা সবার কাছে পরিষ্কার। আগামী নির্বাচনে কংগ্রেসই জিতবে,” তিনি জোর দিয়ে বলেন।