মহারাষ্ট্রে শিবাজিকে নিয়ে বিজেপির নেতাদের বিতর্কিত মন্তব্যে যেন দাড়ি পড়ছে না। এবার সেই তালিকায় ঢুকলেন বিজেপির মহারাষ্ট্র ইউনিটের সহ-সভাপতি প্রসাদ লাড। তিনি শিবাজির জন্মস্থান নিয়ে ভুল বিবৃতি দিয়েছেন বলে অভিযোগ। লাডের সেই বিতর্কিত মন্তব্যের পর শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। বিরোধী দলগুলো মহারাষ্ট্র বিজেপির এই অন্যতম শীর্ষ নেতার ভুল মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
শনিবার মুম্বইয়ের কোঙ্কন উৎসবে এক সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় শিবাজির জন্মস্থান নিয়ে প্রসাদ লাড ওই ভুল মন্তব্য করেন। উপকূলীয় কোঙ্কন অঞ্চলের গুরুত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, 'ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের জন্মস্থান কোঙ্কন। তাঁর শৈশব কেটেছে রায়গড়ে।'
লাডের বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপটি রবিবার সকালে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এনসিপি বক্তব্যের ক্লিপটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার সময় টুইট করেছে, 'অন্যদের শেখানোর পরিবর্তে, লাডের নিজের উচিত ইতিহাস, জীবন এবং শিবাজি মহারাজের সম্পর্কে পাঠ নেওয়া।'
শিবাজি মহারাজের বংশধর তথা বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ উদয়নরাজে ভোঁসলেও মহারাষ্ট্রের বিজেপি নেতার মন্তব্যে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি লাডের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। উদয়নরাজে ভোঁসলে বলেছেন, 'মহারাষ্ট্রের মত রাজ্য যদি শিবাজি মহারাজের সম্মানকে রক্ষা করতে না-পারে, তবে তা হতবাক করার মত এবং অদ্ভূত। যাঁরা ইতিহাসকে বিকৃত করছে, তারা সবাই শিবাজি মহারাজকেই অপমান করছে। আর, মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করছে। এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যক্তি, যাঁরা শিবাজি মহারাজ সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করছে, তাদের শিক্ষা দেওয়া উচিত। কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি?'
শিবাজিকে নিয়ে লাডের মন্তব্যে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস) সভাপতি রাজ ঠাকরেও। তিনি বলেন, 'তারা যদি শিবাজি মহারাজের শিক্ষা গ্রহণ করে, তবে আরও ভালোভাবে সেবা করবে। পরিবর্তে আমরা যা দেখি, তা হল ভুল মন্তব্য বা তথ্যের ভুল উপস্থাপন। কেন? বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদির মতো বিষয়গুলো থেকে জনসাধারণের মনোযোগ সরানোর কৌশল বলে মনে হচ্ছে।'
বিজেপি এমএলসি প্রবীণ দারেকর বলেছেন, 'শিবাজি মহারাজ সম্পর্কে মন্তব্য করার সময় প্রত্যেকের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এই ব্যাপারে আমি সহমত। প্রসাদ লাড নিশ্চয়ই তাঁর বক্তৃতায় ভুল করেছেন। কিন্তু শিবাজি মহারাজকে অপমান করা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না। এটা ভুল তথ্যের একটি ঘটনা মাত্র।'
আরও পড়ুন- পিছু হঠল ইরান, দুই মাস বিক্ষোভের পর বাতিল নীতি পুলিশের ইউনিট
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবীণ বিজেপি নেতা বলেন, 'ঐতিহাসিক তথ্য দেওয়ার সময় প্রত্যেকের দু'বার করে তথ্য পরীক্ষা করা উচিত। শিবাজি মহারাজের জন্ম কোঙ্কনে হয়েছিল বলে লাড ভুল করেছেন। এটা হাস্যকর। সরকারি নথি অনুসারে, শিবাজি মহারাজ পুনে জেলার শিবনেরি দুর্গে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।'
বিজেপি নেতাদের এই সব ব্যাখ্যা সত্ত্বেও, শিবাজি মহারাজ সম্পর্কে দলের নেতাদের ভুল মন্তব্যে ক্ষুব্ধ রাজ্য এবং কেন্দ্রের বিজেপি নেতৃত্ব। কারণ, এই সব নেতাদের ভুল মন্তব্যের জেরে দলের মুখ পুড়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্যের শীর্ষ বিজেপি নেতারা তাই দলের নেতা ও কর্মীদের ইতিহাসের চরিত্র বা কিংবদন্তি কারও সম্পর্কে বলার সময় চরম সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। দলের নেতা ও কর্মীদের বলা হয়েছে, শিবাজি মহারাজ সম্পর্কে বলার সময় তারা যেন ভুল বা বিকৃত তথ্য না-দেন।
লাডের মন্তব্য এমন একটা সময়ে এল, যখন শিবাজি মহারাজ সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করার জন্য রাজ্যপাল ভগত সিং কোশিয়ারির বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে বিজেপি-শিণ্ডের সরকারের বিরুদ্ধে। রাজ্যপাল কোশিয়ারি বলেছিলেন যে শিবাজি 'পুরাতন দিনের' আইকন ছিলেন। এরপরই রাজনৈতিক নেতা এবং সামাজিক সংগঠনগুলো মহারাষ্ট্র থেকে কোশিয়ারিকে সরানোর দাবি জানিয়েছে।
কোশিয়ারির সেই মন্তব্য নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই বিজেপির পরিষদীয় মন্ত্রী মঙ্গলপ্রভাত লোধা, শিবাজি মহারাজের আগ্রা থেকে পালানোকে মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিণ্ডের শিবসেনা ত্যাগের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। আর, তার জেরে লোধাকে ব্যাপক সমালোচিত হতে হয়েছে।
Read full story in English