তুমুল সংকটে কংগ্রেস। দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের অনুগামী বিধায়করা। প্রায় ৯০ জন গেহলট অনুগামী বিধায়ক স্পিকার সিপি জোশীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ, কংগ্রেস হাইকমান্ড শচীন পাইলটকে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বলেছেন রাজস্থানের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক অজয় মাকেন।
এক্সপ্রেস: রবিবার জয়পুরে কী ঘটেছিল?
মাকেন: প্রথমেই আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই যে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের সঙ্গে আলোচনার পরই সিএলপি (কংগ্রেস বিধায়ক পরিষদীয় দলের) বৈঠক ডাকা হয়েছিল। তারিখ ও সময় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছিল। এমন নয় যে আমি আর মল্লিকার্জুন খাড়গে আচমকা জয়পুরে চলে এসেছি। আমি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম। বৈঠকের জন্য সুবিধাজনক সময় চেয়েছিলাম। তিনি রবিবার এসে বৈঠক করার পরামর্শ দেন। তাই সবকিছু আলোচনা করেই সময় চূড়ান্ত করেছিলেন। আর, বিধানসভায় দলের মুখ্য সচেতক (মহেশ জোশী)-কে সব কথা জানান।
এক্সপ্রেস: তারপর কী ঘটেছে?
মাকেন: আমরা যখন ওখানে পৌঁছলাম, তখন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে থাকা বিধায়কদের তিনজন প্রতিনিধি — সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী শান্তি দারিওয়াল, মহেশ জোশী এবং ক্যাবিনেট মন্ত্রী প্রতাপ সিং খাচারিয়াওয়াস আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তাঁরা আমাদের সামনে তিনটি শর্ত পেশ করেন। প্রথম শর্ত ছিল যে কংগ্রেস সভাপতি (রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী পদে গেহলটের উত্তরসূরি সম্পর্কে) সিদ্ধান্ত ১৯ অক্টোবর সভাপতি নির্বাচনের পরে নেবেন। আমি পালটা বলেছিলাম যে এটা হলে সম্পূর্ণ একটা সার্থের সংঘাত তৈরি করবে। কারণ, গেহলট ঘোষণা করেছেন যে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলেছেন। আর, যদি তিনি কংগ্রেস সভাপতি হয়েই যান, তখন সভাপতি হিসেবে তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন, রাজস্থানে তাঁর পরে কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন, এটা কীভাবে সম্ভব? অথচ তাঁরা চেয়েছিলেন, এমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। আর, সেই সিদ্ধান্তের কথা খোলাখুলি ঘোষণা করে দেওয়া হোক। কিন্তু, স্বার্থের সংঘাতের কারণে আমি ব্যাপারটায় না-করে দিয়েছি।
এক্সপ্রেস: অন্য কী শর্ত দিয়েছিল?
মাকেন: দ্বিতীয় শর্ত হল, ওরা চেয়েছিল আমরা যাতে আলাদাভাবে বিধায়কদের সঙ্গে দেখা না-করে, সব বিধায়কের সঙ্গে একবারে দেখা করি। আমি বলেছিলাম যে এটাও ঠিক না। কারণ, প্রত্যেক বিধায়কের সঙ্গে আলাদা করে দেখা করাটাই ঠিক। যাতে বিধায়করা নির্দ্বিধায় এবং অকপটে তাঁদের মতামত জানাতে পারেন। দলের সকলের সঙ্গে এলে, তাঁরা চাপের মধ্যে থাকতে পারেন। আমরা চেয়েছিলাম যাতে তাঁরা নির্দ্বিধায় কথা বলতে পারেন। খাড়গে অত্যন্ত প্রবীণ ব্যক্তি। রাজস্থানের ব্যাপারে আমিও অত্যন্ত নিরপেক্ষ। কেউ বলতে পারবে না আমি গেহলট বা শচীন পাইলটের লোক। তাই আমি তাঁদের বললাম যে আপনারা শুধু আপনাদের মতামতটা বলুন। আমরা সেটা কংগ্রেস সভাপতিকে জানিয়ে দেব।
এক্সপ্রেস: তৃতীয় শর্ত কী ছিল?
মাকেন: তৃতীয়ত, তাঁরা চেয়েছিল, সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রকাশ্যে ঘোষণা করা হোক যে শচীন পাইলট বা তার গোষ্ঠীর কেউ মুখ্যমন্ত্রী হবেন না। ১০২ জন বিধায়কের মধ্যে থেকেই মুখ্যমন্ত্রীকে বেছে নিতে হবে। আমি বলেছিলাম যে আপনারা যা বলছেন, আমরা তা কংগ্রেস সভাপতিকে জানাব। কিন্তু, আমরা এমন কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারব না। কারণ, এই ধরনের ঘটনা অতীতে ঘটেনি। কোনও প্রস্তাব কংগ্রেস সভাপতির ওপর ছেড়ে দেওয়াই নিয়ম। বিধায়করা সেই সিদ্ধান্তে যুক্ত থাকতে পারেন না। তারা জানিয়েছিল, এই সব শর্তের ওপর দলকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমি পালটা তাঁদের বলেছি যে শর্তাধীন কোনও সিদ্ধান্ত হতে পারে না।
আরও পড়ুন- উপত্যকায় নয়া দল ঘোষণা গুলামের, অমরিন্দরেরই পথেই আজাদ?
এক্সপ্রেস: বিধায়করা কি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন?
মাকেন: আমরা জানি না যে কতজন বিধায়ক পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং তাঁরা কারা?
এক্সপ্রেস: বিধায়করা আলাদা বৈঠক করেছেন, এটা কি শৃঙ্খলাহীনতা?
মাকেন: প্রাথমিকভাবে এটা তো শৃঙ্খলাহীনতাই। যখন একটি অফিসিয়াল সভা ডাকা হয়েছে, তখন সমান্তরাল সভা ডাকা শৃঙ্খলাভঙ্গ। দেখা যাক এবিষয়ে কী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এক্সপ্রেস: এখন আপনারা কী করবেন?
মাকেন: আমরা আজ দিল্লিতে ফিরছি। কংগ্রেস সভাপতির কাছে রিপোর্ট জমা দেব।
এক্সপ্রেস: কংগ্রেস পরিষদীয় দলের বৈঠক হতে না-পারায়, আপনি কি রাতে বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলেছেন?
মাকেন: না। বিধায়করা আসেননি বলে আমরা যাইনি। আমরা যা চেয়েছিলাম, তা হল একটি একলাইনের রেজলিউশন পাস করা। আর, তারপরে আমরা সারা রাত বসে প্রত্যেক বিধায়কের মতামত শুনব।
এক্সপ্রেস: আপনি কি গেহলট এবং পাইলটকে আলোচনার জন্য দিল্লিতে ডেকেছেন?
মাকেন: এখনও না। আমরা আগে কংগ্রেস সভাপতির কাছে গিয়ে আমাদের রিপোর্ট জমা দেব। আগে দেখা যাক, কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
Read full story in English