চায়ের নেশাই কাল হল অলীকের?
ফিরোজ আহমেদ, ভাঙড়: খামারআইট গ্রামের মেছো ভেড়ির আল দিয়ে রাতের অন্ধকারে বোরখা মুড়ি দিয়ে হাড়োয়া খাল পেরিয়ে কলকাতায় গিয়ে ট্রেন ধরে ভুবনেশ্বর। চায়ের নেশা ছিল তাঁর। কলিঙ্গ হাসপাতালের সামনে সঙ্গীসাথীদের এড়িয়ে চায়ের দোকানে চা খেতে যাওয়াই সম্ভবত কাল হল। কাশীপুর থানার পুলিশ সেখান থেকেই অলীককে গ্রেফতার করে স্থানীয় থানায় নিয়ে যায়। শুক্রবার তাঁকে ভুবনেশ্বর আদালতে তোলা হয়। চার দিনের ট্রানজিট রিমান্ডে রাতেই তাঁকে রাজ্যে নিয়ে আসছে বারুইপুর জেলা পুলিশ। শনিবারই তাঁকে বারুইপুর আদালতে তোলা হবে।
এদিকে অলীকের গ্রেফতারের প্রতিবাদে নতুন করে তপ্ত ভাঙড়। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই রাস্তায় কাঠের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করা হয়। শুক্রবার চলে হাড়োয়া রোড অবরোধ। বিকেলে বেরোয় প্রতিবাদ মিছিল। অলীকের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করেছে জমি কমিটি।
শুক্রবার সকাল থেকেই হাড়োয়া রোডের বগডোবা থেকে ঢিবঢিবা পর্যন্ত রাস্তায় বাঁশ, কাঠের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করে রাখা হয়। বিকালে নতুনহাট থেকে শ্যামনগর পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিল করে জমি কমিটি। মিছিলে ছিলেন পিডিএস নেতা সমীর পুততুণ্ড, অনুরাধা দেবসহ অন্যান্যরা।
মিছিল ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বারুইপুর জেলা পুলিশের বিশাল বাহিনী শ্যামনগর মোড়ে মোতায়েন ছিল।অন্য দিকে ভাঙড়ের নির্মীয়মাণ বিতর্কিত পাওয়ার গ্রিডের বিরোধিতায় জমি আন্দোলনের সময় অশান্তির ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া অলীককে এদিনই ভুবনেশ্বরের খুরদার জেলা আদালতে পেশ করা হয়। তাঁকে ট্রানজিড রিমাণ্ডে কলকাতায় আনার জন্য আবেদন করে কাশীপুর থানার পুলিশ।বিচারক তা মঞ্জুর করেন। রাতেই অলীককে বিমানে করে কলকাতায় নিয়ে আসে বারুইপুর জেলা পুলিশের বিশেষ টিম। বারুইপুর জেলা পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা জানিয়েছেন, "অলীকের ৪ দিনের ট্রানজিট রিমান্ড মঞ্জুর করেছে ভুবনেশ্বর আদালত।"
bhangar anti power grid movement leader alik chakrabarty at kolkata airport pic.twitter.com/BTziUreoGI
— IE Bangla (@ieBangla) June 1, 2018
ভাঙড়ের জমি কমিটির মুখপাত্রের এহেন গ্রেফতারির ঘটনায় নেতৃত্বহীন ভাঙড় আন্দোলনের গতি প্রকৃতি কী হবে, তার পাশাপাশি অলীকের অনুপস্থিতিতে এখন নেতৃত্ব কার হাতে থাকবে, এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে আন্দোলনকারী নেতা কর্মীদের মধ্যে। বার বারই উঠে আসছে জমি কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মির্জা হাসানের নাম। মির্জাকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আন্দোলন থেকেই নেতার জন্ম হয়। কোনও একজনের কথায় আন্দোলন চলে না। আন্দোলনের প্রথম সারিতে যাঁরা আছেন, তাঁরা সবাই একসঙ্গে বসেই আন্দোলনের পরবর্তী রূপরেখা স্থির করবেন।‘’
তবে অলীকের গ্রেফতারির পর অবিশ্বাসের আবহও দেখা দিয়েছে সংগঠনের মধ্যে।
পুলিশ যতই বলুক, মোবাইল টাওয়ার লোকেশন দেখে অলীককে গ্রেফতার করা হয়েছে তা মানতে নারাজ জমি কমিটির নেতারা। তাঁদের আশঙ্কা গ্রামেরই কোনও বাসিন্দা পুলিশকে খবর দিচ্ছে। অলীকের গ্রেফতারির পর কমিটির নেতারা একে অন্যের ফোনও তল্লাশি করেন। আন্দোলনের কোনও নেতাই অলীক সম্পর্কিত তথ্য বাইরে পাচার করেছে কিনা, সে সম্পর্কে তাঁরা এখনও নিশ্চিত নন।