সালটা ২০১১, বাংলায় এক আমূল পরিবর্তন হয়। প্রায় ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে প্রথমবার ক্ষমতায় আসে তৃণমূল সরকার। প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পিছনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের ভোট ব্যাঙ্ক হিসেবে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল সংখ্যালঘু ভোট। সাত বছর পার, ২০১৬ সাল থেকে রাজ্যে শুরু হয়েছে তৃণমূল সরকারের দ্বিতীয় ইনিংস। কিন্তু মমতার সেই সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক যে টলমল হতে পারে, তার আগাম ইঙ্গিত গত অগাস্ট মাসেই দিয়েছিলেন শাহি ইমাম নুর-উর রহমান বরকতি। তিনি বলেছিলেন, "মুসলিমদের দল হিসেবে আর থাকতে চায় না তৃণমূল।"
আজ শহরে লোকসভা ভোটের আগে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদের ক্ষোভ আবারও সামনে এল। যার জেরে এ রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের সমীকরণ ঘিরে আবারও জল্পনা বাড়ল বলেই মত রাজনৈতিক মহলের। এদিন মেয়ো রোডের সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেই কার্যত সুর চড়াল সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন।
আরও পড়ুন, রাজ্যে সংখ্যালঘু ভোটের পাশা উল্টোচ্ছে? ইঙ্গিত বরকতির মন্তব্যে
বেশ কিছু দাবি জানিয়ে এদিন সরব হন ফেডারেশনের নেতারা। মেয়ো রোডে হাজার তিনেকের ওই জমায়েত থেকে সংগঠনের নেতারা বলেন, "ঈদ একদিন হয় আমাদের। একদিন ছুটি বাড়ানো হোক। বকরি ঈদে তিন দিন ছুটি দিতে হবে। সাত বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানাচ্ছি। কিন্তু উনি কর্ণপাত করছেন না।" তবে শুধু ছুটির ব্যাপারেই নয়, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ভাতার পরিমাণ বাড়ানোরও দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। গীতাঞ্জলী আবাসন প্রকল্প ও নিজ ভূমি নিজ গৃহের মতো সরকারি প্রকল্পে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের অন্তর্ভুক্ত করানোরও দাবি জানানো হয়েছে ওই সংগঠনের তরফে।
আজ কলকাতায় সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান দাবি ছিল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আর্থিক, সামাজিক, এবং শিক্ষাগত অবস্থার মানোন্নয়ন @ieBangla https://t.co/I4HBeRRZMJ pic.twitter.com/KdbYhHKZHt
— IE Bangla (@ieBangla) October 3, 2018
ওই সংগঠনের তরফে মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে এক স্মারকলিপিতে জানানো হয়েছে যে, "রাজ্যে পরিবর্তনের মূল স্লোগানের অন্যতম ছিল ওয়াকফ সম্পত্তির দুর্নীতির তদন্ত ও জবরদখল মুক্ত করে সম্পত্তিগুলি সংরক্ষণ করা ও বাণিজ্যকীকরণ করা। কিন্তু এখনও সেই কাজ অধরা।" মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা নিয়েও সরব হয়েছে ওই সংগঠন। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ১০,০০০ মাদ্রাসাকে আনএডেড মাদ্রাসা হিসেবে অনুমোদন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু মাত্র ২৩৫টি মাদ্রাসা অনুমোদন পেলেও বাকিগুলোর সুপারিশ করা ফাইল "বস্তাবন্দি অবস্থায় রয়েছে" বলে দাবি ওই সংগঠনের।
অন্যদিকে, ২০০ বছরের পুরনো হুগলি মাদ্রাসা সংলগ্ন মসজিদ বন্ধ, এমনকি মাদ্রাসাও বন্ধ, তা চালু করারও দাবি জানানো হয়েছে ওই সংগঠনের তরফে। একইসঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষাকেন্দ্র ও শিশু শিক্ষাকেন্দ্রগুলিকে 'রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান'-এর আওতায় আনার দাবি যেমন তোলা হয়েছে, সেইসঙ্গে মাদ্রাসাকে পর্ষদের তালিকাভুক্ত করা এবং শিক্ষক নিয়োগবিধি ও শিক্ষকদের বেতন কাঠামো তৈরি করার কথাও বলা হয়েছে।