দিল্লিতে যখন ২০২১ বিধানসভা ভোটের কৌশল ঠিক করতে হাজির রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব তখন কলকাতায় সংগঠনকে শক্তিশালী করতে বৈঠক করছে তৃণমূল কংগ্রেস। এদিন দলের মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক ও জেলা সভাপতিদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২১ জুলাই শহিদ দিবসে এই বৈঠকের কথা ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সম্প্রতি দুর্নীতির ইস্যুতে তৃণমূল কংগ্রেসের মন্ত্রী-সাংসদরা প্রকাশ্যে সোচ্চার হয়েছিলেন। তোলপাড় হয়েছে রাজ্য-রাজনীতি। এবার বিজেপির বিরুদ্ধে জোরদার লড়াই করতে দলে একাধিক সাংগঠনিক পরিবর্তন করল তৃণমূল।
রাজ্য স্তরে ৭ সদস্যের স্টিয়ারিং কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এই কমিটিতে আছেন ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত বক্সি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারী ও শান্তা ছেত্রী। এছাড়া ২১ জনের রাজ্য সমন্বয় কমিটি গঠিত হয়েছে। সেই কমিটিতে স্টিয়ারিং কমিটির সদস্যরা ছাড়া রয়েছে আরও ১৪ জন। তার মধ্যে রয়েছেন দুজন লোকসভা ও রাজ্যসভার দলনেতা। এছাড়া সম্প্রতি প্রকাশ্যে ফিরহাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করা মন্ত্রী সাধান পান্ডে রয়েছেন ওই কমিটিতে। তাঁকে শোকজও করেছিল দল। দক্ষিণ দিনাজপুরের সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া অর্পিতা ঘোষও কমিটিতে স্থান পয়েছেন। রয়েছেন বর্ষীয়াণ নেতা ও মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্য়ায়, অরূপ বিশ্বাস, গৌতম দেব, নাদিমূল হক। দলের রাজ্য কমিটিতে সম্পাদক পদে রাখা হয়েছে ছত্রধর মাহাত, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে। দলে সাংগঠনিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। জেলা পর্যবেক্ষক পদ তুলে চেয়ারম্যানের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলে ভরাডুবি হয়েছে তৃণমূলের। জঙ্গলমহলে ব্য়াপক সাংগঠনিক পরিবর্তন এনেছে তৃণমূল কংগ্রেস। জানা গিয়েছে, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও ঝাড়গ্রামের জেলা সভাপতিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে জেলা সভাপতি অজিত মাইতিকে সরানো না হলেও সেখানে চেয়ারম্যান করা হয়েছে দীনেন রায়কে এবং কো-অর্ডিনেটর হিসাবে রাখা হয়েছে মানস ভুঁইয়াকে। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোকে সরিয়ে দেওয়া হল। নতুন সভাপতি হয়েছেন গুরুপদ টুডু (মন্ত্রী সন্ধ্যারানী টুডুর স্বামী)। শান্তিরাম মাহাতো চেয়ারম্যান। বাঁকুড়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি হলেন শ্যামল সাঁতরা ঝাড়গ্রাম জেলার নতুন সভাপতি বিধায়ক দুলাল মুর্মু। বিরবাহা সোরেনকে সরিয়ে দেওয়া হল। তাঁকে চেয়ারম্যান করা হয়েছে।
জঙ্গলমহলের মত খারাপ ফল হয়েছিল উত্তরবঙ্গে। সেখানেও সাংগঠনিক পরিবর্তন এনেছে তৃণমূল। তৃণমূল সূত্রে খবর, কোচবিহারের সভাপতি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সেখানে সভাপতি করা হয়েছে পার্থ প্রতিম রায়কে। তিনি ছিলেন দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি। সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে বিনয়কৃষ্ণ বর্মনকে চেয়ারম্যান করা হল। কো-অর্ডিনেটর হয়েছেন উদয়ন গুহ ,অর্ঘ্যরায় প্রধান। দক্ষিণ দিনাজপুরে সাংসদ অর্পিতা ঘোষকে সরিয়ে গৌতম দাসকে জেলা সভাপতি করা হয়েছে। দার্জিলিং-এ সভাপতি হয়েছেন রঞ্জন সরকার। নদীয়া জেলায় সভাপতি করা হয়েছে কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে। মন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্লাকে হাওড়ার সভাপতি করা হয়েছে। সভাপতি পদ থেকে সরানো হয়েছে মন্ত্রী অরূপ রায়কে। গ্রামীণ হাওড়ায় সভাপতি পুলক রায়।
এদিন তৃণমূল যুবর নতুন কমিটি ঘোষণা করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি সভাপতি, ৫ জন সহসভাপতি, ১৫ জন সধারাণ সম্পাদক, ১৫ জন সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। একাধিক জেলা সভাপতিকে পাল্টে দেওয়া হয়েছে। যুব তৃণমূলে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের জামাই ইয়াসির হায়দারকে সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। আরেক মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভাই স্বরূপ বিশ্বাসকে দক্ষিণ কলকাতার যুব সভাপতির পদ থেকে ছেঁটে ফেলা হল।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন