হতদরিদ্র মানুষ একটা ত্রিপল চেয়ে পায়নি। বর্ষায় মাথা ঢাকার কোনও ব্যবস্থা নেই। অথচ পঞ্চায়েতের সদস্যরা নিজে শুধু নয়, আত্মীয়-স্বজনের নামেও ত্রাণের হাজার হাজার টাকা পকেটস্থ করছে, এমন অভিযোগেই তোলপাড় দক্ষিণ ২৪ পরগণার বিভিন্ন গ্রামঞ্চায়েত এলাকা। এর ফলে রীতিমত ফুঁসছে আমফানে ক্ষতিগ্রস্তরা। জেলা পরিষদের সভাধিপতি সামিমা শেখ জানিয়েছেন, একই পরিবারের সকলের নাম ত্রাণের তালিকায়, তা মানা যায় না। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নন্দকুমারের পঞ্চায়েত সদস্য় কানধরে উঠবস করেছেন। বিডিও-র উপস্থিতিতে ঘটছে এই ঘটনা। তারপরের দিন হাওয়া খারাপ বুঝে নন্দকুমার গ্রাম পঞ্চায়েতের জগন্নাথের চক ও মহম্মদনগরের দুই পঞ্চায়েত সদস্য পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ ওঠে। ওই দিন রাতে স্থানীয় গ্রামবাসীরা তাঁদের আটকে রাখে। জানা যাচ্ছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় একের পর এক পঞ্চায়েতে ত্রাণ নিয়ে দলবাজি চরমে উঠেছে। ফলে পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ ক্রমশ দানা বাঁধছে। সাগর, রায়দীঘি, কাকদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমা, ফ্রেজারগঞ্জ সহ প্রায় সর্বত্রই আমফানের ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
আরও পড়ুন- বিজেপি-তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ, ২০২১-এ জোট গড়তে একসঙ্গে পথে বাম-কংগ্রেস
নিজেকে হেরো প্রার্থী বলে ঘোষণা করা সিপিএমের কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "গরিব মানুষ একটা ত্রিপলও পেল না। বৃষ্টির সময় থাকবে কোথায়? এদিকে হাজার হাজার ত্রাণের টাকা আত্মসাৎ হয়ে যাচ্ছে। আমরাও ত্রাণের দাবিতে শান্তিপূর্ণ অবস্থান-বিক্ষোভ করেছি।" প্রাক্তন এই মন্ত্রী বলেন, "সব মিলিয়ে অসন্তোষ মারাত্মক জায়গায়। ত্রিপল, ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা দেওয়া নিয়ে বিক্ষোভ চূড়ান্ত পর্যায়ে। তৃণমূলের নিচুতলার এ টু জেড দুর্নীতিগ্রস্ত। এই সব নিয়েই বিক্ষোভ। তৃণমূলের নেতা ও তাঁদের আত্মীয়স্বজনের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকছে। ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা গ্রাম পঞ্চায়েতে টাঙিয়ে দেওয়া উচিত। উপভোক্তাদের নাম প্রকাশ্যে টাঙানোর সরকারি নির্দেশিকাও রয়েছে। সবটাই অস্পষ্ট হওয়ায় বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।" কান্তিবাবুর আশঙ্কা, "চূড়ান্ত পর্যায়ে বিক্ষোভ কোন পর্যায়ে টার্ন নেবে বলা মুশকিল।"
আরও পড়ুন- দিলীপ-মুকুলের পরস্পর বিরোধী অবস্থান কি বাংলায় পদ্ম ফোটাতে বাধা?
এদিকে, ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতির প্রতিবাদে জেলার বিভিন্ন পঞ্চায়েত এবং বিডিও অফিসে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে বিজেপি। এমনকী দলের নেতারা সেই সব অবস্থান-বিক্ষোভে ত্রাণ যাঁরা পেয়েছে তাঁদের নামের তালিকা পড়ে দিচ্ছেন। প্রকাশ্যে জানিয়ে দিচ্ছেন কোন পঞ্চায়েতের কোন কর্তা ও তাঁদের পরিবারের কতজন সদস্য বেআইনিভাবে ত্রাণের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বিজেপির রাজ্য নেতা অভিজিত দাস বলেন, "তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যদের পরিবারের একাধিক সদস্য ত্রাণ পেয়েছেন। গরিব মানুষরা ত্রাণ পাচ্ছেন না। এক একটা ব্লকে তৃণমূল ছাড়া কেউ ত্রাণ পায়নি। আমরা পাবলিককে জানিয়ে দিচ্ছি দেখুন কারা ত্রাণ পাচ্ছেন কারা পাচ্ছেন না। বঞ্চিত তৃণমূলের কর্মীরাও বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। মোদ্দা কথা এটা সম্মিলিত জনরোষ।"
আরও পড়ুন- ‘নিজের দলের মন্ত্রী-বিধায়কদের বাঁচাতে পারে না, সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?’
আমফানের ত্রাণ বণ্টনে যে দুর্নীতি হয়েছে তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি সামিমা শেখ। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলছেন তিনি। সামিমা শেখ বলেন, "একই পরিবারের চার-পাঁচ জনের নাম তালিকায় রয়েছে সেটা খারাপ কাজ হয়েছে। এটা একেবারে সমর্থন করা যায় না। এটা খুবই বাজে ব্যাপার। যাঁরা দায়িত্বে থাকে বরং তাঁদের ওপর দায়িত্ব বর্তায়। জেনুইন দিচ্ছি কি না ভাবতে হয়। দায়িত্ব কেন দেওয়া হয়েছে, তাই না? তবে গরিব সদস্যও আছে। তুমি পাঁচ জনকে দিয়ে তবে নাও। কিন্তু তোমার পরিবারের সবাই পাচ্ছে এটা মানা যায় না।" আমফান ঝড়ে কমবেশি সবারই ক্ষতি হয়েছে। তাহলে অন্যায়ভাবে যাঁরা টাকা নিল। সেক্ষেত্রে কী হবে? সামিমার জবাব, "আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। দেখা হচ্ছে কীভাবে তাঁদের কাছ থেকে টাকা ফেরত নেওয়া যায়।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন