‘প্রধানমন্ত্রীকে সংসদে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিতে পারি না’, মণিপুর নিয়ে মোদীর বিবৃতির দাবিতে রাজ্যসভায় বিরোধী নেতাদের একথা বলেন চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়। রাজ্যসভার বিধি ২৬৭ এর অধীনে মণিপুরে জাতিগত হিংসা নিয়ে আলোচনার দাবি জানিয়ে আসছে বিরোধীরা। এদিনও মণিপুর নিয়ে হট্টোগলের জেরে, বিরোধীদলের নেতা ওয়াকআউট করেছে।
বুধবার রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হাউসে আসার জন্য নির্দেশ জারি করতে পারবেন না, বিরোধী নেতারা মণিপুর ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদীর বিবৃতির দাবি জানিয়ে আসছে। বিরোধী নেতারা, রাজ্যসভার বিধি ২৬৭ এর অধীনে মণিপুরে জাতিগত হিংসা নিয়ে আলোচনার দাবি জানিয়ে আসছ বাদল অধিবেশনের প্রথম দিন থেকেই।
মণিপুর হিংসা নিয়ে সংসদের উভয় কক্ষে হট্টগোল অব্যাহত। বিরোধীরা এ বিষয়ে সরকারের কাছে আলোচনার দাবি জানিয়ে আসছে। এদিকে, বুধবার রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড় স্পষ্টভাবে বলেছেন যে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সংসদে আসার জন্য কোনও নির্দেশ জারি করতে পারবেন না।
একই সময়ে, বিরোধী নেতা মল্লিকার্জুন খড়গে বলেছিলেন যে তিনি তার নোটিশে আটটি পয়েন্টর উল্লেখ করেছেন কেন মণিপুর ইস্যুটি বিধি ২৬৭ এর অধীনে আলোচনা করা উচিত এবং প্রধানমন্ত্রীকে হাউসে একটি বিবৃতি দেওয়া উচিত। তিনি মণিপুর নিহত ও আহতের সংখ্যাও এদিন উল্লেখ করেছেন। এর পরেই সংসদে প্রধানমন্ত্রী মোদীর উপস্থিতির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে বিরোধী নেতারা। তবে চেয়ারম্যান রাজি হননি। ধনখড় বলেছেন ‘আমি স্পষ্ট ভাষায় ইঙ্গিত দিয়েছিলাম যে আমি যদি এই চেয়ার থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে উপস্থিতির জন্য নির্দেশ দিই তবে আমি আমার শপথ লঙ্ঘন করব’। একইসঙ্গে স্পিকার দাবি না মানায় বিরোধী নেতারা সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেন।
এর আগে, ধনখড় বলেছিলেন যে বিধি ১৭৬ এর অধীনে আলোচনার জন্য সরকার সম্মত হয়েছে। মণিপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং অন্যান্য সম্পর্কিত বিষয়গুলির উপর একটি স্বল্পমেয়াদী আলোচনা এবং রাজ্যে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে জন্য সরকার গৃহীত পদক্ষেপগুলি ৩১ জুলাইয়ের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল কিন্তু বিরোধীদের বিক্ষোভের কারণে তা হতে পারেনি।
এখন প্রশ্ন হল বিধি ২৬৭ এবং ১৭৬ কী?
সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি ২৬৭-র মাধ্যমে স্থগিত করা যেতে পারে। কারণ, বিধি অনুযায়ী, যে কোনও সংসদ চেয়ারম্যানের সম্মতিক্রমে, সেই দিনের অধিবেশনের তালিকাভুক্ত কাজকর্ম স্থগিতের আবেদন জানাতে পারেন। আর, সেই অনুযায়ী, কার্যপ্রণালী স্থগিত করা যেতে পারে। তবে শর্ত হল যেখানে কার্যপ্রণালী স্থগিতকরণের নির্দিষ্ট বিধিমালা রয়েছে, সেখানে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না। পাশাপাশি, সংসদে স্বল্পমেয়াদী আলোচনা, অথবা সংক্ষিপ্ত আলোচনা বিধি ১৭৬-এর অধীনে পরিচালিত হয়। যা আড়াই ঘণ্টার বেশি চলে না।
এতে বলা হয়েছে যে জরুরি এবং জনসাধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছুক যে কোনও সদস্য সংসদের মহাসচিবকে লিখিতভাবে নোটিশ দিতে পারেন যে বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। এক্ষেত্রে তা স্পষ্টভাবে এবং সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে নোটিশের সঙ্গে একটি ব্যাখ্যামূলক নোটও থাকতে হবে। যেখানে প্রশ্নের আলোচনার কারণ উল্লেখ করতে হবে আবেদনকারীকে। আর, নোটিশটিতে সমর্থন জানিয়ে কমপক্ষে দুই সদস্যের স্বাক্ষর এবং সমর্থনও থাকতে হবে।
একবার চেয়ারম্যান নোটিশটি স্বীকার করে নিলে, নিয়ম অনুযায়ী তিনি পরিষদীয় নেতার সঙ্গে পরামর্শ করে, যে তারিখে এই জাতীয় বিষয়টি আলোচনার জন্য নেওয়া যেতে পারে, তা নির্ধারণ করবেন এবং আলোচনার জন্য আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় দেবেন না। যার অর্থ হল, বিধি ১৭৬-এর অধীনে একটি স্বল্পমেয়াদি আলোচনা অবিলম্বে করা যেতে পারে। এই বিধির আওতায় আলোচনা করা যায় সর্বোচ্চ ৩০ মিনিটের জন্য।পরের দিন বা পরবর্তী তারিখ হিসেবেও বেছে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু, নিয়ম বলছে যে স্বল্প সময়ের আলোচনায় কোনও আনুষ্ঠানিক ভোট দেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে বিধি অনুযায়ী, যে সদস্য নোটিশ দিয়েছেন, তিনি একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দিতে পারেন। আর, মন্ত্রী শীঘ্রই জবাব দেবেন।