বুধবার অজিত পাওয়ারের মন্তব্যে তোলপাড় মহারাষ্ট্রের রাজনীতি। ‘আমিও রাজ্যের নেতৃত্ব দিতে চাই মুখ্যমন্ত্রী হতে চাই…! এই এক মন্তব্য এখন রাজনীতির মুল আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। এর পাশাপাশি শরদ পাওয়ারের রাজনীতি থেকে অবসরের প্রসঙ্গেও তিনি বার্তা দিয়ে বলেন, “প্রতিটি পেশায় অবসরের বয়স থাকে,আমলাতন্ত্র হোক বা রাজনীতি। বিজেপিতে, অবসরের বয়স ৭৫, আমাদের কাছে এল কে আদবানি, মুরলি মনোহর যোশী এবং অন্যান্যদের উদাহরণ রয়েছে। নতুন প্রজন্ম আমাদের আর্শীবাদ করবেন। আমি যদি কিছু ভুল করে থাকি, আমাকে বলুন, আমি তা মেনে নেব, সংশোধন করব এবং এগিয়ে যাব। শরদ পাওয়ার ৮৩ পার করেছেন, আপনি কি কোন দিন থামবেন না?"
মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে সময় যত এগোচ্ছে, ততই একবছর আগের শিবসেনার ভাঙনের দৃশ্যগুলো পুনরাবৃত্তির মত সামনে চলে আসছে। এবার অবশ্য বিরোধী শিবিরের শিবসেনা নয়। দল ভাঙার জন্য গেরুয়া শিবিরের চাঁদমারি জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পাটি বা এনসিপি। যার অন্যতম শীর্ষ নেতা অজিত পাওয়ার শীর্ষস্থানীয় অন্য নেতাদের নিয়ে গেরুয়া শিবিরে পাশে রবিবারই চলে গিয়েছেন। সরকারে যোগ দিয়েছেন। এবার এনসিপি অধিকারের পালা চলছে। যেখানে অজিতের প্রতিদ্বন্দ্বী তাঁর অশীতিপর কাকা তথা একসময়ের মারাঠা রাজনীতির ‘পাওয়ারফুল ম্যান’বলে পরিচিত শরদ পাওয়ার।
জানা যাচ্ছে যে অজিত পাওয়ারের গোষ্ঠীর লোকজন আগে তারও আগে থেকে যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে রেখেছিলেন। গত ৩০ জুন, তাঁরা এক প্রস্তাবে শরদ পাওয়ারকে সরিয়ে অজিত পাওয়ারকে এনসিপির নেতা নির্বাচিত করেছেন। শুধু তাই নয়, নির্বাচন কমিশনের সূত্রে প্রকাশ যে অজিত পাওয়ার ৩০ জুন নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লিখেছিলেন, যাতে তাঁর দলকেই আসল এনসিপি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কমিশনের কাছে তিনি দলের প্রতীক চেয়েও আবেদন জানিয়েছেন সেই সময়ই। নির্বাচন কমিশনকে লেখা চিঠিতে মহারাষ্ট্রের বর্তমান উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত দাবি করেছেন, তাঁর সঙ্গেই এনসিপির সমস্ত বিধায়কদের সমর্থন আছে। বান্দ্রায় দলের ২৯ জন বিধায়কের সকলেই তাঁকে সমর্থন করেছেন। তাঁরা অজিত পাওয়ারের সমর্থনে মুম্বই এডুকেশন ট্রাস্টের সভায় হাজিরাও দিয়েছেন।
শরদ পাওয়ারও হাল ছাড়ছেন না। তিনি যশবন্তরাও বলবন্তরাও চহ্বান অডিটোরিয়ামে এনসিপির পালটা সভা ডেকেছেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে উপস্থিত আছেন ১৪ জন এনসিপি বিধায়ক। যে যুক্তিকে সামনে রেখে অজিত পাওয়ারদের প্রতীক ও দলের নাম পাওয়ার বিরোধিতা করেছে শরদ পাওয়ারের গোষ্ঠী। তাঁদের বক্তব্য দলের দুই তৃতীয়াংশ বিধায়কের সমর্থন না-থাকলে আইন অনুযায়ী বিদ্রোহীরা কিছুতেই দলের নাম ও প্রতীক পেতে পারে না। এনসিপির দুই তৃতীয়াংশ বিধায়কের সমর্থন মানে হল ৩৬ জন বিধায়কের সমর্থন।
কিন্তু, অজিত পাওয়ারদের কাছে মাত্র ২৯ জন বিধায়কের সমর্থন আছে। এই পরিস্থিতিতে শরদ পাওয়ার তাঁর অনুষ্ঠানে এনসিপি কর্মীদের নতুন প্রজন্মের নেতা গড়ে তোলার দিকে মনোনিবেশ করতে পরামর্শ দিয়েছেন। এদিকে অজিত পাওয়ার আরও বলেন, ‘আমি সুপ্রিয়া সুলেকেও বলেছিলাম যে পাওয়ার সাহেবকে বোঝানোর জন্য। কিন্তু, তিনি (অজিত পাওয়ারের মেয়ে সুপ্রিয়া সুলে) আমাকে বলেছেন যে তিনি (শরদ পাওয়ার) একগুঁয়ে। কথা শুনবেন না। সমস্ত বিধায়কদের সমর্থন কিন্তু আমাদের সঙ্গে আছে। এমনকী যে বিধায়করা অন্য বৈঠকে (শরদ পাওয়ারের বৈঠক) গিয়েছেন, তাঁরাও যোগাযোগ করেছেন।’অজিত পাওয়ার শিবিরের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে সভাপতির পদ সহ এনসিপির পুরো কাঠামো ত্রুটিপূর্ণ কারণ দলের সংবিধানের বিধান অনুসারে কোনও নিয়োগ করা হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে অজিত পাওয়ারের নেতৃত্বাধীন এনসিপি বিধায়কদের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে শিণ্ডের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা দলের বিধায়কদের মধ্যে অসন্তোষ ক্রমশ বাড়ছে। সেই অসন্তোষ চাপা দিতে একনাথ শিণ্ডে আজ শিবসেনা বিধায়ক এবং দলের অন্য নেতাদের নিয়ে একটি বৈঠক করেছেন নিজের সরকারি বাসভবন বর্ষা বাংলোয়।
সূত্রের খবর, শিন্ডে, দেবেন্দ্র ফড়নবিস এবং অজিত পাওয়ারের যৌথ নেতৃত্ব এনসিপি, কংগ্রেস এবং শিবসেনার জোট (এমভিএ মহাজোট)কে দুর্বল করতে চাইছে। সামনেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন একই সঙ্গে ২৪-এর লোকসভা ভোট। লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে এনসিপি, কংগ্রেস এবং শিবসেনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এভাবেই ঘুঁটি সাজাচ্ছে শিন্ডে, দেবেন্দ্র ফড়নবিস এবং অজিত পাওয়ার।
এদিকে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসতে চাওয়ায় অজিত পাওয়ারের জনপ্রিয়তাকে যে একবারে ঝেড়ে ফেলতে চাইছে বিজেপি এমনটা একেবারেই নয়। বরং একনাথ শিন্ডের থেকে নম্বরের বিচারে অজিত পাওয়ারকে খানিক এগিয়ে রাখছেন দলের একাংশ। দলের এক সিনিয়ার নেতা দাবি করেছেন, শিন্ডে বিজেপিতে অনেকের জন্য "অস্বস্তির কারণ”। "সবসময় বিজেপিকে সাইডলাইন করে লাইমলাইটে আসার চেষ্টা করেছিলেন তিনি।" অজিত পাওয়ার ভোটারদের মধ্যে বৃহত্তর আবেদন সহ আরও প্রিয় মুখ হবেন, এমনটাই নেতাদের একাংশের দাবি। "আপনি যদি কোনও বিজেপি কর্মী বা সমর্থককে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি বলবেন অজিত পাওয়ার শিন্দের চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য,"।
কিন্তু জাতীয় স্তরের বিজেপি নেতারা উল্লেখ করেছেন যে শিন্ডেকে এখনই "খোঁচা" দেওয়া যাবে না যেহেতু তিনি সেনা ভেঙে ৪০ জন বিধায়ক নিয়ে এনডিএ-তে এসেছিলেন। “এই মুহুর্তে তাকে দূরে সরিয়ে দেওয়া বিজেপি সম্পর্কে সাধারণের কাছে ভাল বার্তা দেবে না, যখন আমরা ২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। এমন কাজে দলের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করবে,” লোকসভা নির্বাচনের বিভিন্ন রাজ্যে এনডিএ জোটের সম্প্রসারণের বিজেপির প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে দলের এক সিনিয়ার নেতা একথা বলেছেন।