২১শের বিধানসভা ভোটকে পাখির চোখ করে একদিকে বাংলায় কেন্দ্রীয় প্রকল্প বাস্তবায়িত না হওয়া, অন্য়দিকে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন কেন্দ্রীয় স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা অমিত শাহ। গত ৬ বছরে কেন্দ্রীয় সরকারের কাজের খতিয়ান দেওয়ার সঙ্গেই তৃণমূল সরকারের থেকেও গত ১০ বছরের কাজের হিসাব চেয়েছেন শাহ। তাঁর কথায়, সিএএ থেকে শ্রমিক স্পেশালের প্রতিবাদ করেছেন মমতা- যা তাঁর সরকারের প্রস্থান ঘটাবে।
একনজরে শাহের বক্তব্য-
*লোকসভায় বিজেপি ৩০৩ আসন পেয়েছে বিজেপি, কিন্তু বাংলার ১৮ আসনে দলেরর জয়ই আমার কাছে সবচেয়ে আনন্দের: অমিত শাহ
* 'বিজেপি সেই দল নয় যারা ১০ বছরের ক্ষমতাতে থেকেও শুধুই অভিযোগ করে।'
* 'কেবল রাজনীতি করার জন্য বিজেপি বাংলায় আসেনি, সোনার বাংলা গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্।য'
* 'মোদী সরকারের ৬ বছরে দেশে বদল এসেছে। ৩১ কোটি মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।'
* 'আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে দেশের গরীব মানুষ উপকৃত। কিন্তু বাংলায় মোদীজির জনপ্রিয়তা কমাতে এই প্রকল্প লাগু করছে না মমতা সরকার।'
* 'আগামিকাল সভা করে আপনিও (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) আপনার ১০ বছরের কাজের খতিয়ান দিন। কিন্তু সেখানে আবার বিজেপি কর্মীদের হত্যার হিসাব দেবে না।'
* বাংলায় বিজেপি ক্ষমতায় এলেই আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প চালু হবে। রাজ্যে সরকারের জন্য বাংলার কৃষকরা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সাহায্য পাননি। উনি তালিকা দিলে দু'দিনের মধ্যে সেই সুবিধা দেবে মোদী সরকার: অমিত শাহ
* 'দেড়শ বছর ধরে রাম মন্দির মামলা ঝুলে ছিল। মোদী সরকার তার নিষ্পত্তি করেছে। আর কয়েক দিনের মধ্যেই অযোধ্যায় রামের জন্মভূমিতে রাম মন্দির তৈরি শুরু হবে।'
* 'মতুয়া, নমঃশূদ্র ও বাংলাদেশ থেকে যাঁরা এদেশে শরণার্থী হয়ে এসেছেন তাঁদের কেন বিরোধিতা করছেন (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়)? তোষণের রাজনীতির জন্য সিএএ-এর প্রতিবাদ করা হচ্ছে। উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের সুবিধা মোদী সরকার দেবেই। ভোটে মমতা সরকারকেই উদ্বাস্তু করে দেবে বাংলার মানুষ।'
* 'শ্যামাপ্রসাদের স্বপ্ন সফল হয়েছে। কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারার অবলুপ্তি ঘটানো হয়েছে।'
* 'পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে শ্রমিক স্পেশাল চালাচ্ছে কেন্দ্র। কিন্তু অবাক করা বিষয় যে ওই ট্রেনকে 'করোনা স্পেশাল' বলে কটাক্ষ করেছেন মমতা দিদি। এগুলোই তৃণমূল সরকারকে এক্সিট রুট দেখাবে।'
* 'বলিদানই বিজেপির ইতিহাস। তাই হিংসা করে বিজেপিকে আটকে রাখতে পারবেন না। যত সন্ত্রাস করবেন বিজেপির জমি বাংলায় ততই পোক্ত হবে।'
* 'কমিউনিস্ট, মমতা সবাইকে সুযোগ দিয়েছেন কেউ কিছু করেনি। এবার বিজেপিকে সুযোগ দিন। আমরা সোনার বাংলা গড়ব। বিহার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। বিজেপি যেখানেই সুযোগ পেয়েছে সেখানকার উন্নতি করেছে।'
অমিত শাহের বক্তব্য পেশের আগে ইন্দো-চিন সীমান্ত উত্তেজনার প্রসঙ্গ তুলে অমিশ শাহের জবাব দাবি করেন যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটে তিনি লেখেন, 'অমিত শাহ জি, এই সংকটের সময়ে বাংলা আপনার কথা শুনতে চায় না। চীন আমাদের ভূমির অংশ দখল করছে কি না? এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য আশা করব আপনি এক মিনিট সময় দেবেন।'
Respected @AmitShah Ji, Bengal has not heard you speak during these times of crisis, but we hope today you would take a minute to answer this:
"Are the Chinese occupying our territory or not?"
“চীন আমাদের ভূমির অংশ দখল করছে কি না?”
— Abhishek Banerjee (@abhishekaitc) June 9, 2020
এদিন সকালে অমিত শাহের ভার্চুয়াল জনসভার আগে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করে রাজ্য বিজেপি। মঙ্গলবার সকালে রাজ্য বিজেপির যুব মোর্চার সভাপতি তথা সাংসদ সৌমিত্র খাঁ বলেন, "স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সভা বানচাল করতে সরকার বিভিন্ন জায়গায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করছি। গোটা বিষয়টিকে তুলে ধরার জন্য আমরা রাজ্যপালের দ্বারস্থ হচ্ছি। রাজ্যের কোথায় কোথায় এভাবে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে গোটা বিষয়টি আমরা রাজ্যপালকে জানাব। উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন করব।"
গত ১০ বছরে মমতা সরকারের ব্যর্থতা ও মোদী সরকারের উন্নয়নের খতিয়ান পেশ করে বাংলায় ২১-শের বিধানসভা ভোটের সলতে পাকানোর কাজ শুরু করলেন অমিত শাহ। মঙ্গলবার অনলাইন জনসভায় বক্তব্য় পেশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ রাজ্যে স্বৈরশাসন কায়েম করেছে শাসক দল তৃণমূল। জোড়া-ফুল কর্মীদের হাতে প্রায়ই মার খেতে হচ্ছে বিজেপি নেতা, কর্মীদের। বারে বারে এই অভিযোগ করে এসেছেন বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। করোনা-আমফান সংকট মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের অব্যবস্থার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সরব গেরুয়া শিবির। রাজ্যে বিধানসভা ভোটেরও আর বেশিদিন বাকি নেই। এই পরিস্থিতিতে অনলাইন ব়্যালিতে দলের প্রচার ও কার্যসূচির রূপরেখা বেঁধে দেন শাহ।
দলের প্রাক্তন সভাপতির শাহের জনসভা প্রসঙ্গে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক কৈলাশ বিজয়বর্গীয় দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছিলেন, 'বিজেপি নেতা, কর্মীদের অপদস্ত করছে তৃণমূল সরকার। সংকটের সময় দলীয় নেতাদের ত্রাণ নিয়ে এলাকায় ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। সাংসদ তাঁর সংসদীয় এলাকায় পৌঁছতে পারছেন না। এই অবস্থায় অমিত শাহের বক্তব্য দলের নেতা, কর্মীদের উজ্জীবিত করবে।'
পদ্ম শিবিরের পাখির চোখ 'বাংলা দখল'। তাই জমি জরিপও শুরু করে দিয়েছে গেরুয়া শিবির। রাজ্যের একাংশের মানুষ মমতা সরকারের কাজে বিরক্ত। সূত্রের খবর, একে পুঁজি করেই এবার ভোটের ময়দানে ঝাঁপাতে প্রস্তুত মোদী-শাহরা।
প্রধানমন্ত্রী মোদী 'আত্মনির্ভর ভারতের' কথা বলেছেন। বাংলায় নতুন আঙ্গিকে 'আত্মনির্ভর ভারতের' কথা তুলে ধরতে পারেন অমিত শাহ। স্বাধীনতার অন্দোলনে এই বাংলার মাটিই স্বদেশী আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটেছিল। জানা গিয়েছে সেই আবেগকেই প্রচারে কাজে লাগাতে মরিয়া বিজেপি।
ইতিমধ্যেই অনলাইন জনসভায় বিহারের বিধানসভা ভোটের দামামা বাজিয়েছেন শাহ। এবার লক্ষ্য বাংলা। রাজ্য বিজেপি নেতাদের কথা অনুয়ায়ী, শাহের বক্তব্য় প্রায় ৭০ হাজার বুথের দলীয় নেতা, কর্মীদের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, বিদেশে বসবাসকারী এ রাজ্যের ভোটারদেরও এই সভা থেকেই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে গেরুয়া বাহিনী।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন