একদিকে 'বিজয়ী' রাহুল গান্ধী যখন তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বাছাই করতে ব্যস্ত, ঠিক তখনই সাধের 'আন্তর্জাতিক গীতা মহোৎসব'-এ অংশ গ্রহণের পূর্বনির্ধারিত সূচি বাতিল করলেন 'পরাজিত' অমিত শাহ। এমনটাই জানাচ্ছে সংবাদ সংস্থা এএনআই। মরিশাসের সঙ্গে যৌথ আয়োজনে হরিয়ানায় অনুষ্ঠিতব্য এই 'আন্তর্জাতিক গীতা মহোৎসব' অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই শাহর অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিসগড়ে ক্ষমতা হাতছাড়া হওয়ার পর রীতিমত বিপর্যয়ের মুখে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি। আর সে জন্যই বিজেপি সংগঠনের শীর্ষ ব্যক্তি এই সূচি বাতিল করলেন বলে মনে করা হচ্ছে।
২০১৪ সালে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর মোদী-শাহর অশ্বমেধের ঘোড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কেবল ছুটেই চলেছে। মাঝে মধ্যে কয়েকটা উপনির্বাচনে ধাক্কা খেলেও তেমন তোয়াক্কা করেনি বিজেপি। কিন্তু, মঙ্গলবার পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ হতেই কার্যত পিলে চমকেছে গেরুয়া শিবিরের। হিন্দ বলয়ের অন্যতম দুই রাজ্যের রাজপাট হারানোর পাশাপাশি, ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়েছে ছত্তিসগড়েও। আর তাই গেরুয়া রাজনৈতিক বৃত্তে অতি গুরুত্বপূর্ণ হরিয়ানার গীতা মহোৎসবে অংশ না নিয়ে বৃহস্পতিবার দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেছেন কেন্দ্রীয় সভাপতি অমিত শাহ।
আরও পড়ুন- রাজ্যেই বাঁচা-মরা শিবরাজের
সূচি বাতিল করে দিল্লিতে বসে কী করবেন শাহ?
জানা যাচ্ছে, এদিন দিল্লির প্রধান কার্য্যালয়ে শীর্ষ নেতৃত্বদের নিয়ে ঘণ্টা সাতেকের বৈঠক করবেন শাহ। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বুথ অ্যাকশন প্ল্যান নিয়ে আলোচনা হবে। বৃহস্পতিবারের এই বৈঠকে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন রাজ্যের দায়িত্বে থাকা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, রাজ্য শাখার প্রধান পদাধিকারীরা এবং একাধিক শাখা সংগঠনের সম্পাদকরা। ইতিপূর্বে শাহ যে ২২টি বিষয়ের রূপরেখা তৈরি করে দিয়েছিলেন, সেগুলি কার্যকর করার ক্ষেত্রে কতটা কাজ এগিয়েছে সে বিষয়ে রিপোর্ট নিয়ে আসতে বলা হয়েছে নেতাদের। তবে বিজেপির এ ধরনের বৈঠকে অতীতে যেমন রিপোর্ট পেশ হয়ে এসেছে, এবারের রিপোর্ট সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ, কাজের অগ্রগতির ক্ষেত্রে দলীয় নেতাদের থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যা জানতে চান সভাপতি শাহ।
প্রসঙ্গত, অমিত শাহ মনে করেন 'ভোটে জিততে গেলে বুথ জিততে হবে'। আর সে কথা মাথায় রেখেই বিজেপির কোর গ্রুপকে ২২টি বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। এলাকায় স্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের সম্মেলন আয়োজন করা, আরএসএস এবং বিভিন্ন মন্দির পরিচালন পর্ষদের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে চলা হল এর মধ্যে অন্যতম। পাশাপাশি, বাইক রয়েছে এবং স্মার্ট ফোন ব্যবহারে দড় এমন যুবকদের সংগঠিত করার নিদানও দিয়েছিলেন তিনি। এইসব বিষয়ে দলীয় নেতারা কতটা কাজ করেছেন সংখ্যাতত্বের ভিত্তিতে এদিন বিবরণ জানতে চান অমিত শাহ। এরপর কোন কোন এলাকায় আরও কাজ করতে হবে অথবা কী বিশেষ পদক্ষেপ প্রয়োজন, সে বিষয়েও পরামর্শ দেবেন শাহ।
তবে কলকাতার লালবাজারে বিজেপি-র রথযাত্রা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্য ও স্বরাষ্ট্র সচিব এবং পুলিশের ডিজি-র সঙ্গে বিজেপি প্রতিনিধি দলের বৈঠক রয়েছে বলে দিলীপ ঘোষ অমিত শাহর বৈঠকে যোগ দেননি। পাশাপাশি, কৈলাশ বিজবর্গীয়ের মতো রাজ্যের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় নেতাও রথ বৈঠকের জন্য দিল্লির বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন না। জানা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে দলের রথযাত্রার কর্মসূচিকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে বলেই দিলীপ ঘোষ ও কৈলাশ বিজয়বর্গীয়কে এদিন দিল্লির বৈঠক থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন- মধ্যপ্রদেশে কমল নাথেই ভরসা রাহুলের, রাজস্থান-ছত্তিসগড়ে দায়িত্ব নিচ্ছেন কারা? সিদ্ধান্ত আজই
উল্লেখ্য, চলতি মাসের মাঝামাঝি অর্থাৎ ১৫ ডিসেম্বর থেকে দু'দিনের বৈঠকে দলের জেলা স্তরের যুব নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন অমিত শাহ। ২০১৯ সালের ভোট প্রক্রিয়ায় গেরুয়া শিবিরের যুব প্রজন্ম অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করবে বলে মনে করছে দল। এছাড়া, একটি হোয়াটসঅ্যাপ প্রচারের কথাও বিবেচনা করে দেখছে বিজেপি। এর মাধ্যমে সাধারণ ভোটারদের জানানো হবে যে মোদী সরকার সমাজের বিভিন্ন অংশের জন্য কী কী উন্নয়নমূলক কাজ করেছে।
সবমিলিয়ে সেমিফাইনালে জোর ধাক্কা খেয়ে বিজেপি যে আদাজল খেয়ে ফাইনালের দুর্গ রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়ছে তা স্পষ্ট। কিন্তু গেরুয়া শিবিরের এই ততপরতা আদৌ কতটা কাজে লাগবে তা বলবে আগামী।
Read the full story in English