গতকাল ২২ ছিল, আজ ২৩। ২৪ ঘণ্টায় একটি লোকসভা আসন বাড়িয়ে নিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি। মুখে মুখে। পুরুলিয়া সফরে গিয়ে তিনি এদিনের দলীয় সভা থেকে ধ্বনিভোটে পাশ করিয়ে নিলেন সেখানকার লোকসভা আসন। এবং ১৯-এর বিধানসভা ছাড়িয়ে ২১-এর লোকসভা ভোটের দামামা বাজিয়ে সরকার ওপড়ানোর ডাকও দিয়ে এলেন তিনি।
দুদিনের রাজ্য় সফরের শেষদিনে বৃহস্পতিবার সকালে তারাপীঠে পুজো দেন অমিত শাহ। তারপর সেখান থেকে হেলিকপ্টারে চড়ে পৌঁছে যান পুরুলিয়ায়। সেখানে জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে তুলোধোনা করেন অমিত শাহ। বক্তব্য়ের প্রথম থেকেই চড়া সুরে তৃণমূলের উদ্দেশে আক্রমণ শাণাতে শুরু করেন তিনি। তাঁর ভাষণ থেকে মনে হচ্ছিল এ যেন কোনও নির্বাচনী জনসভা। তিনি বলেন, “তৃণমূল সরকারকে উপড়ে দিন। পরিবর্তনের আওয়াজ কলকাতায় মমতার কানে পৌঁছে দিন। সন্ত্রাস চালিয়ে সরকার টিঁকবে না। সমস্ত বাংলায় হিংসা চলছে। তারামাকে বলেছি বিজেপি কর্মীদের শক্তি দিন। বাংলার সরকারকে গদিচ্য়ুত করতে প্রার্থনা করেছি।’’ পরিবর্তনের কথা বলতে গিয়ে ত্রিপুরার উদাহরণ টেনেছেন অমিত শাহ। তিনি বলেন, “ত্রিপুরায় বলেছিলাম, চলো পাল্টাই। বাংলায় উন্নয়ন স্তব্ধ, চারিদিকে দুর্নীতি, চিটফান্ড ও সিন্ডিকেটের সরকার চলছে। তাই পরিবর্তন চাই বাংলায়।’’
আরও পড়ুন বন্দে মাতরমের ব্যবহারই দেশভাগের জন্য দায়ী: অমিত শাহ
বাংলায় উন্নয়নের বদলে মাফিয়ারাজ চলছে বলে অভিযোগ করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। তিনি বলেন, “এখানে বালি ও কয়লা মাফিয়া, গরুপাচার অবাধে চলছে। বাংলাদেশ থেকে ড্রাগ ঢুকছে। অবৈধ অনুপ্রবেশ ঘটছে বাংলাদেশ থেকে। এসব রুখতে তৃণমূল সরকারকে ফেলে দিতে হবে। তাহলে মাফিয়া নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।’’
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে ফেডারেল ফ্রন্ট গঠন করা নিয়ে আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে জোট করতে একাধিকবার বৈঠক করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। এ নিয়েও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি অমিত। তিনি বলেন, “প্রথমে বাংলা সামালান। তারপর দেশব্য়াপী জোট করবেন।’’
রাজ্য়ে উন্নয়ন হচ্ছে না বলে তীব্র বিষোদ্গার করেন তিনি। তাঁর মতে, রাজ্য় উন্নয়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে না। তার ফলে পিছিয়ে পড়ছে বাংলা। বঞ্চিত হচ্ছেন রাজ্য়বাসী। কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণ করছে না রাজ্য়। তাঁর অভিযোগ, “কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া ৩ কোটি ৬০ লক্ষ কোটি টাকা দিয়ে কী করেছে রাজ্য়, তার হিসেব দিতে হবে। পুরুলিয়ার মানুষ ২ টাকা কেজি দরে নিয়মিত চাল পাচ্ছে না। জল আনতে যাচ্ছে ৫ কিলোমিটার দূরে। আর উন্নয়নের ঢাক পেটাচ্ছে রাজ্য়।’’
বুধবার কলকাতার সভার পর এদিন জনসভাতেও বাংলার মণীষীদের সম্পর্কে প্রশংসার বন্য়া বইয়ে দিয়েছেন অমিত শাহ। রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, জগদীশ চন্দ্র বসু একে একে সবার নাম করেছেন তিনি।
পঞ্চায়েত ভোট প্রসঙ্গে অমিত বলেন, সন্ত্রাস করে রাজ্য়ের ২ কোটি মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি তৃণমূল। ওই নির্বাচনে আমাদের ২০ জন কর্মী খুন হয়েছেন।
অমিত শাহের বক্তব্য়ের পাল্টা জবাব দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়। তিনি বলেন, “এককথায় বলা যায় শূন্য় কলসী বাজে বেশি। রাজনৈতিক মূর্খরা তাঁকে বলছেন, আর তাঁদের কথায় তিনি নাচছেন। তাঁর নাচা বন্ধ হয়ে যাবে। আগে বিজেপি থাকুক।’’
তৃণমূল মহাসচিবের পাল্টা অভিযোগ, “চার্টার্ড প্লেনে আসছেন, এত টাকা কোথা থেকে আসছে। বন্দে মাতরমকে ভাগ করে, বঙ্কিমকে ভাগ করে রাজনীতি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। হঠাৎ দেখছি বঙ্কিমচন্দ্র, রামকৃষ্ণদেবকে নিয়ে নেমে পড়েছেন। বাংলার উন্নয়ন থামানোর চেষ্টা করছে।’’