দুর্গাপুজোর সময় বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ ও সহ-সভাপতি জেপি নাড্ডা কলকাতায় আসতে পারেন। দিল্লিতে অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন রাজ্য বিজেপির শীর্ষ কর্তারা। সূত্রের খবর, ওই বৈঠকেই পুজোর সময় কলকাতায় আসার ব্যাপারে কথা দিয়েছেন অমিত শাহ। জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যে যেন কোনওরকম বিতর্ক দানা না বাঁধে তা নিয়েও নির্দেশ দিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি। সম্প্রতি শোভন-বৈশাখী ও দেবশ্রীকে নিয়ে যে ভাবে দলের মধ্যে কাদা ছোড়াছুঁড়ি চলেছে তা নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁদের বিরক্তির কথা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের রণকৌশল নিয়েও চর্চা হয়েছে বৈঠকে।
বুধবার রাতে অমিত শাহর সঙ্গে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়দের বৈঠক হয়। সম্প্রতি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন কলকাতায় প্রাক্তন মেয়র তথা বিধায়ক শোভন চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের দিল্লিতে যোগদানের সময় সেই দফতরে হাজির হয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক তথা অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়। শোভন ও বৈশাখীর যোগদানের পর থেকেই দলের রাজ্য নেতাদের একাংশ প্রতিদিন কার্যত নিয়ম করে বিতর্কিত মন্তব্য করতে থাকেন। সূত্রের খবর, এদিনের বৈঠকে অমিত শাহ স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, কারও বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য দল যেন বিড়ম্বনায় না পরে। রাজনৈতিক মহল মনে করে, শোভন-বৈশাখী নিয়ে দিলীপ ঘোষ, জয়প্রকাশ মজুমদার, জয় বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অন্য নেতাদের মন্তব্যের জন্য দলকে যথেষ্ট বিপাকে পড়তে হয়েছে। সামগ্রিক ভাবে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে বিজেপি নেতৃত্বকে। এই ধরনের পরিস্থিতি যেন আর সৃষ্টি না হয় তার জন্য কড়া দাওয়াই দিয়েছেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব।
আরও পড়ুন: বিজেপিতে যোগ দিতে চান অনুব্রত মণ্ডল! চাঞ্চল্যকর দাবি বিজেপি সাংসদের
এদিকে দুর্গাপুজোকে হাতিয়ার করে জনসংযোগ বৃদ্ধি করতে তৎপর বঙ্গ বিজেপি। কলকাতায় পুজো কমিটিগুলোতে এখনও তেমন ভাবে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়নি পদ্মশিবির। তবে হাল ছাড়তে নারাজ গেরুয়া শিবির। রামনবমী, জন্মাষ্টমী, হনুমান জয়ন্তী-সহ নানা ধরনের ধর্মীয় উৎসব গেরুয়া শিবিরের শাখা সংগঠনগুলো এ রাজ্যে পালন করছে। কিন্তু দুর্গাপুজো বাঙালির সব থেকে বড় উৎসব সে সম্পর্কে জ্ঞাত রয়েছে গেরুয়া বাহিনী। তাই দুর্গাপুজোর সময় কলকাতার বড় পুজোর উদ্বোধনে অমিত শাহ উপস্থিত থাকতে না পারলেও কলকাতায় যেন আসেন তার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে বঙ্গ বিজেপি। সূত্রের খবর, অমিত শাহ শারদোৎসবে বাংলায় আসার ব্যাপারে কথা দিয়েছেন। পাশাপাশি আসতে পারেন জে পি নাড্ডাও। পুজোর উদ্বোধন না হলেও জনসংযোগ কর্মসূচি থাকবে সেই সময়।
আরও পড়ুন: বিজেপি কর্মী খুনে ‘ফেরার’ অভিযুক্ত হাজির অনুব্রতর বৈঠকে! ছবি ফাঁস করে দাবি অনুপমের
বিজেপির লক্ষ্য, ২০২১ সালে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে জয় লাভ, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে, এনআরসি ইস্যুতে বিজেপি যে কিছুতেই পিছু হটবে না তা এদিনের বৈঠকে রাজ্য নেতৃত্বকে ফের জানিয়ে দিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বরং নির্দেশ দিয়েছে এনআরসি নিয়ে জোরদার প্রচার করতে। বিষয়টি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে আরও বেশি সজাগ করতে। কারণ, বিজেপি মনে করে বাংলায় এনআরসি নিয়ে চরম বিরোধিতা করতে শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিধানসভা ভোট যত এগিয়ে আসবে তত বেশি বিরোধিতা বাড়বে। তাই এনআরসি কেন প্রয়োজন, তা ব্যাখ্যা দিয়ে সাধারণকে বোঝাতে হবে বাংলার বিজেপি নেতৃত্বকে। এছাড়া বিধানসভা নিয়ে মুকুল রায় দলের শীর্ষ নেতৃত্বে একটি রিপোর্ট দিয়েছে। জানা গিয়েছে, লোকসভা ভিত্তিক কতগুলো বিধানসভা আসনে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে, পাশাপাশি কত বিধানসভায় কম ভোটে পিছিয়ে রয়েছে বিজেপি, এই রিপোর্ট নিয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।