মণিপুরের হিংসা নিয়ে বিরোধীদের লাগাতার দাবির কাছে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হল মোদী সরকার। বর্তমানে মণিপুরে লাগাতার হিংসা ইস্যুতে বিরোধী দলগুলো এবং ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরোধ অব্যাহত। যার জেরে সোমবার তৃতীয় দিনের মত অচলাবস্থা অব্যাহত ছিল সংসদে। বিরোধীরা কক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে বিবৃতি দাবি করেছেন। অচলাবস্থা কাটাতে শেষ পর্যন্ত লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানান যে সরকার লোকসভায় মণিপুরের হিংসা নিয়ে আলোচনা করতে রাজি। এই ব্যাপারে অমিত শাহ বলেন, 'আমি এই (মণিপুর) ইস্যুতে সংসদে আলোচনার জন্য প্রস্তুত। আমি বিরোধীদের অনুরোধ করছি, এই বিষয়ে আলোচনা করতে দিন। এটা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে দেশ এই সংবেদনশীল বিষয়ে সত্যটা জানতে পারে।' কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী তথা লোকসভার উপনেতা রাজনাথ সিং গতরাতে অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে বিরোধীদের অন্তত তিন জন সদস্য- কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, টিএমসির সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডিএমকের টিআর বালু-কে ফোন করার পরে মুখ খুললেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। রাজনাথ সিং-ও লোকসভা বলেছেন, 'আমরা সংসদে আলোচনার জন্য প্রস্তুত।'
এর আগের দিন, বিরোধীরা সংসদ চত্বরের ভিতরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্লোগান দিয়েছিলেন। বিরোধীদের দাবি, প্রধানমন্ত্রীকে মণিপুরের ঘটনায় সংসদে ভাষণ দিতে হবে। এনিয়ে হট্টগোল চলতে থাকায় লোকসভা এবং রাজ্যসভা উভয়কক্ষই মুলতুবি করে দেওয়া হয়। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা খাড়গে বলেছেন, 'আমাদের দাবি প্রধানমন্ত্রীর সংসদে এসে বিবৃতি দিন। আমরা সেই বিবৃতি নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত। আপনি বাইরে কথা বলেছেন, কিন্তু ভিতরে নয়। এটা সংসদের অপমান। এটি একটি গুরুতর বিষয়।'
শিবসেনা সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনিও দাবি করেছেন যে প্রধানমন্ত্রী মোদীর মণিপুরের বিষয়ে কথা বলা উচিত। প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর কি কোনও জবাবদিহি করার দায়িত্ব নেই? তিনি সংসদের বাইরে ৩৬ সেকেন্ডের একটি বিবৃতি দিয়েছেন। কিন্তু, তিনি সংসদের মাধ্যমে দেশকে বলছেন না কেন? মুখ্যমন্ত্রীকে এখনও বরখাস্ত করা হয়নি। কেন মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী এখনও মণিপুর সফর করছেন না?'
সমালোচনার জবাবে, বিজেপি সাংসদ সুধাংশু ত্রিবেদী বলেন, 'রাজস্থান এবং পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিষয়ে বিরোধীদের নীরবতা বিরক্তিকর। আরও বেদনাদায়ক যে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী তাঁর নিজের মন্ত্রীর কথা শুনছিলেন না। তিনি বিরোধী নেতাদের অন্যান্য রাজ্যে মহিলাদের হিংসা-সংক্রান্ত বিষয়ে নীরব থাকার বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং সংসদে মণিপুর ইস্যুতে বিতর্ক থেকে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তোলেন। অথচ, নিজের রাজ্যের ব্যাপারে নীরব থাকেন।' কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ সিং প্যাটেল বলেছেন, 'বিরোধীদের অজুহাত দেওয়া উচিত নয়। প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই (বর্ষা) অধিবেশনের আগে সংবেদনশীলতা এবং দৃঢ়তার সঙ্গে মণিপুর নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। এটা ভুল যে আমরা প্রধানমন্ত্রীর নামে অজুহাত দিয়ে (সংসদে মণিপুর ইস্যুতে) আলোচনা শুরু করিনি।”
আরও পড়ুন- সুপ্রিম কোর্টে বিরাট ধাক্কা! রামনবমীতে রাজ্যে হিংসায় এনআইএ তদন্ত বহাল
এদিকে বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদে বিশৃঙ্খলার সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে দেখা করেন। যখন মণিপুরে মেইতি এবং কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত সংঘর্ষ চরমে, তখন একদল পুরুষ দুই মহিলাকে নগ্ন করে রাস্তা দিয়ে হাঁটিয়েছে। সেই ভিডিও গত সপ্তাহে প্রকাশের পর দেশব্যাপী ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। তারই মধ্যে সংসদে বর্ষাকালীন অধিবেশন শুরুর একদিন পরে মণিপুরে ভয়ানক এক ধর্ষণের ঘটনার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। যা বিরোধীদের প্রতিবাদের আগুনে ঘি ফেলে দেয়। মণিপুর ইস্যুতে সংসদে বিরোধীদের বিক্ষোভ চরমে ওঠে।