বুধবার সংসদে কংগ্রেসের বিরুদ্ধেও তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁর আক্রমণের নিশানায় ছিল কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। অনাস্থা প্রস্তাব ইস্যুতে লোকসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে শাহ কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এবং তাঁর রাজনৈতিক ব্যস্ততাকে তীব্র কটাক্ষ করেন। শাহ বলেন, 'এই কক্ষে আমাদের একজন নেতা আছেন। যাঁকে ১৩ বার রাজনীতিতে আনা হয়েছে। তবে, প্রতিবারই তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। আমি একবার তাঁকে আনা দেখেছি, যখন তিনি বুন্দেলখণ্ডের এক গরিব মহিলার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। তাঁর নাম ছিল কলাবতী। কিন্তু, আপনি তাঁর জন্য কী করেছেন? মোদী সরকার তাঁকে বাড়ি, রেশন, বিদ্যুৎ দিয়েছে।'
এর আগে কংগ্রেস বুধবার বিধি ২৬৭ মেনে মণিপুর হিংসা নিয়ে আলোচনার দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু, সেই দাবি পূরণ না-হওয়ায় প্রতিবাদে রাজ্যসভা থেকে ওয়াক আউট করে। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, 'আমাদের কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী সংসদে আসতে প্রস্তুত নন। সরকার আমাদের কথা শুনতে নারাজ। এই কারণে আমরা প্রতিবাদে কক্ষ থেকে ওয়াকআউট করছি।' তার মধ্যেই বুধবার রাজ্যসভায় পাশ করিয়ে নেওয়া হয় ডিজিটাল ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষা বিল, ২০২৩। এই বিল, কর্পোরেশন এবং সরকার কীভাবে ভারতীয় নাগরিকদের তথ্য এবং ব্যক্তিগত ডেটা সংগ্রহ আর ব্যবহার করতে পারে তার পদ্ধতিগুলো তৈরির ছাড় দিয়েছে। গত ৭ আগস্ট, ২০২৩-এ বিলটি লোকসভায় পাস হয়েছিল।
শাহর দাবি, কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের ওপর দেশবাসীর অগাধ আস্থা রয়েছে। গত ৯ বছরে ৫০টিরও বেশি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর, পাশাপাশি, ইউপিএ জমানায় দেশ কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সাক্ষী হয়েছে। শাহের দাবি, বিজেপি বর্তমানে পরিবারবাদ, দুর্নীতি এবং তোষণের রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। প্রধানমন্ত্রী কোনও ছুটি না-নিয়ে দিনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৭ ঘণ্টা ধরে কাজ করেন। আর, সেই কথা মাথায় রেখে বিরোধীদের প্রতি শাহ 'ভারত ছাড়ো' স্লোগান দেন।
আরও পড়ুন- স্মৃতি ইরানিকে প্রকাশ্যে সভার মধ্যেই রাহুল গান্ধীর উড়ন্ত চুমু! তুমুল হইচই লোকসভায়
বুধবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলছেন দুর্নীতি ভারত ছাড়ো, রাজবংশ ভারত ছাড়ো, তুষ্টিকরণের রাজনীতি ভারত ছাড়ো। এই অনাস্থা প্রস্তাব এমন এক সময়ে আনা হয়েছে যখন জনগণ বা সংসদকক্ষের সরকারের প্রতি অবিশ্বাস নেই। প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে দিনে ১৭ ঘণ্টা কাজ উত্সর্গ করছেন। তাই অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে স্রেফ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য।'
আরও পড়ুন- মণিপুরের হিংসা লজ্জাজনক, কিন্তু তা নিয়ে রাজনীতি আরও লজ্জাজনক, সংসদে বিরোধীদেরকে তোপ শাহর
এসবের মধ্যেই লোকসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে শাহ তাঁর বক্তব্যে বিরোধীদের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী 'ভারতের মর্যাদা বাড়াতে' কাজ করছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, 'মোদী সরকারের আমলে ইন্টারনেটের দুনিয়া ভারতের ২৩১ শতাংশ অগ্রগতি ঘটেছে।' ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য তুলে ধরার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের কৃষকদের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন। শাহ বলেন, 'আমাদের দেশের কৃষকদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে- একদিকে, ইউপিএ সরকার ছিল যারা ৭০,০০০ কোটি টাকার ঋণের ললিপপ দেখিয়েছিল। আর, অন্যদিকে সেই সরকার যারা ২ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকা কৃষকদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি সম্মানের সঙ্গে পাঠিয়েছে। আমি স্পষ্ট জানতে চাই যে এটি ভর্তুকি নয়?' শাহ বলেন, 'মোদী সরকার এমএসপিতে (ন্যূনতম সহায়ক মূল্য) সর্বাধিক পরিমাণে চাল সংগ্রহ করেছে। যদি এমন একটি সরকার থাকে যে এমএসপিতে সর্বাধিক পরিমাণে চাল সংগ্রহ করেছে, তবে তা হল নরেন্দ্র মোদীর সরকার।'