বগটুইয়ের ঘটনায় বিরোধীদের কাঠগড়ায় অনুব্রত মণ্ডল। হত্যাকাণ্ডের মামলায় ধৃত রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেনের মুখেও ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব। তবে কে বা কারা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে তা স্পষ্ট করেননি তিনি। তৃণমূলের অন্দরেও নানা গুঞ্জন। এর মধ্যেই বিস্ফোরক দাবি করলেন বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি। যা ঘিরে অনুব্রতকেই পাল্টা আক্রমণ করেছেন তৃণমূল বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৃহস্পতিবার একটি মুচলেখা প্রকাশ্যে আসে, যা গতবছর জুন মাসের ১০ তারিখ বিধায়কের তরফে জেলা সভাপতিকে লেখা। ওই মুচলেখায় উল্লেখ রয়েছে যে, রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি পদ থেকে যেন আনারুল হোসেনকে আগামী পঞ্চায়েত নির্বচান পর্যন্ত সরানো না হয়। ওটি আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বলে দাবি করেছেন অনুব্রত মণ্ডল। পাশাপাশি বলেন, 'আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের লিখিত অনুরোধেই আনারুলকে রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি পদে বহাল রাখা হয়েছিল।'
কেন হঠাৎ আনারুলকে পদে বহাল রাখা নিয়ে মুচলেখা দিতে হয়েছিল বিধায়ককে? কেষ্টর দাবি, 'কিছু একটা খবর পেয়েছিলাম বলেই আনারুলকে সরাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আশিসবাবুর অনুরোধে তাকে রেখে দিতে হয়। তাছাড়া বিধানসভা এলাকাটা আশিসবাবুই কন্ট্রোল করতেন। তাই ওকে একটা লিখিত দিতে বলেছিলাম। এই বিষয়টি তিনিই বলতে পারবেন।'
বিশ্লেষকদের মতে, আনারুলকে সাংগঠনিক পদে বহাল নিয়ে বিতর্ক উঠতেই এখন রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকেই দায় ঠেলছেন অনুব্রত মণ্ডল। যদিও অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন আশিসবাবু। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'বিধানসভা নির্বাচনের পর একটা সাধারণ সভা হয়েছিল। সেখানেই আনারুলকে সরানোর কথা বলেছিলেন অনুব্রত। কিন্তু অঞ্চল সভাপতিরা অনুরোধ করেন এখনই কাউকে পদ থেকে সরাবেন না। সেই জন্যই ওঁর কথামতো আমি একটা লিখিত দিয়েছিলাম। তবে, কাকে সরানো হবে, না হবে সেটা তো সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত। যেটা ঠিক করবেন জেলা সভাপতি।' আনারুল কী দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল? জবাবে বিধায়ক বলেছেন, 'বলতে পারব না।'
বগটুইকাণ্ডের জেপি নাড্ডকে জমা করা বিজেপির কেন্দ্রীয় দলের রিপোর্টেও অনুব্রত মণ্ডলের নাম রয়েছে। যা নিয়ে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই রিপোর্ট জমার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই আনারুলের দলীয় পদে থাকা নিয়ে বিস্ফোরক দাবি করলেন বীরভূমের দোর্দদণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা। সেই দাবি ঘিরে আপাতত ভিন্ন মেরুতে অবস্থান করছেন জোড়া-ফুলের বিধায়ক ও জেলা সভাপতি।
স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তি বেড়েছে তৃণমূলের। এপ্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, 'একটি লেখা সামনে এসেছে। বিধায়ক বলেছেন তাঁরই লেখা। তবে সেটি গত বছরের। সেই সময়ের প্রেক্ষিতে লেখা ওই চিঠি নিয়ে এখন বিতর্ক উঠছে। জেলার বিষয়, তাই সবার সঙ্গে কথা বলেই পুরো বিষয়টি দেখতে হবে।'
বিজেপির রাজ্য মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, 'দল যে তাঁর পাশে নেই তা ক্রমশই স্পষ্ট হচ্ছে বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতির কাছে। তাই এখন নানা কথা বলে দায় এড়াবার চেষ্টা করছেন তিনি। এতে দোষ লঘু হবে না।'