মণিপুর বিতর্কে উত্তাল সংসদ। বুধবারই বিরোধীদের অভিযোগের পাল্টা জবাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "মণিপুরের হিংসা অবশ্যই নিন্দনীয়, কিন্তু তার থেকেও বেশি নিন্দনীয় সেই পরিস্থিতি নিয়ে রাজনীতি করা। সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে।"
এদিন শুরু থেকেই রাহুলের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে কার্যত দিশেহারা হয়ে পড়ে পদ্মশিবির। রাহুল এদিন তার ভাষণের শুরুতেই ভারত জোড়ো যাত্রার কথা উল্লেখ করে তাঁর ভাষণ শুরু করে মণিপুর ইস্যুতে মোদীকে নিশানা করেন। ‘অহঙ্কারী রাবণের’ সঙ্গে মোদীকে তুলনা করে রাহুল বলেন, “বিজেপি মণিপুরে ‘ভারত মাতা’কে হত্যা করেছে।”এর পাশাপাশি রক্ষাকর্তাকে হত্যাকারী বলেও উল্লেখ করেন রাহুল গান্ধী। কংগ্রেস সাংসদ এদিন সংসদে দাবি করেন সেনাবাহিনী চাইলে মণিপুরে একদিনে শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু দেশের মোদী সরকার সেখানে শান্তি চান না। মণিপুরে বিজেপির রাজনীতি ‘ভারত মাতাকে’হত্যা করেছে।
যদিও বুধবার সংসদে কংগ্রেসের বিরুদ্ধেও তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁর আক্রমণের নিশানায় ছিল কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। অনাস্থা প্রস্তাব ইস্যুতে লোকসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে শাহ কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এবং তাঁর রাজনৈতিক ব্যস্ততাকে তীব্র কটাক্ষ করেন। শাহ বলেন, ‘এই কক্ষে আমাদের একজন নেতা আছেন। যাঁকে ১৩ বার রাজনীতিতে আনা হয়েছে। তবে, প্রতিবারই তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। আমি একবার তাঁকে আনা দেখেছি, যখন তিনি বুন্দেলখণ্ডের এক গরিব মহিলার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। তাঁর নাম ছিল কলাবতী। কিন্তু, আপনি তাঁর জন্য কী করেছেন? মোদী সরকার তাঁকে বাড়ি, রেশন, বিদ্যুৎ দিয়েছে।’
এর আগে কংগ্রেস বুধবার বিধি ২৬৭ মেনে মণিপুর হিংসা নিয়ে আলোচনার দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু, সেই দাবি পূরণ না-হওয়ায় প্রতিবাদে রাজ্যসভা থেকে ওয়াক আউট করে। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, ‘আমাদের কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী সংসদে আসতে প্রস্তুত নন। সরকার আমাদের কথা শুনতে নারাজ। এই কারণে আমরা প্রতিবাদে কক্ষ থেকে ওয়াকআউট করছি।’ তার মধ্যেই বুধবার রাজ্যসভায় পাশ করিয়ে নেওয়া হয় ডিজিটাল ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষা বিল, ২০২৩। এই বিল, কর্পোরেশন এবং সরকার কীভাবে ভারতীয় নাগরিকদের তথ্য এবং ব্যক্তিগত ডেটা সংগ্রহ আর ব্যবহার করতে পারে তার পদ্ধতিগুলো তৈরির ছাড় দিয়েছে। গত ৭ আগস্ট, ২০২৩-এ বিলটি লোকসভায় পাস হয়েছিল।
শাহর দাবি, কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের ওপর দেশবাসীর অগাধ আস্থা রয়েছে। গত ৯ বছরে ৫০টিরও বেশি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর, পাশাপাশি, ইউপিএ জমানায় দেশ কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সাক্ষী হয়েছে। শাহের দাবি, বিজেপি বর্তমানে পরিবারবাদ, দুর্নীতি এবং তোষণের রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। প্রধানমন্ত্রী কোনও ছুটি না-নিয়ে দিনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৭ ঘণ্টা ধরে কাজ করেন। আর, সেই কথা মাথায় রেখে বিরোধীদের প্রতি শাহ ‘ভারত ছাড়ো’ স্লোগান দেন।
বুধবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলছেন দুর্নীতি ভারত ছাড়ো, রাজবংশ ভারত ছাড়ো, তুষ্টিকরণের রাজনীতি ভারত ছাড়ো। এই অনাস্থা প্রস্তাব এমন এক সময়ে আনা হয়েছে যখন জনগণ বা সংসদকক্ষের সরকারের প্রতি অবিশ্বাস নেই। প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে দিনে ১৭ ঘণ্টা কাজ উত্সর্গ করছেন। তাই অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে স্রেফ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য।’
যদিও এদিন মণিপুর নিয়ে আলোচনার মাঝেই উঠে আসে রাহুলের উড়ন্ত চুমু’র প্রসঙ্গ। রাহুল গান্ধী বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির উদ্দেশ্যে ‘ফ্লাইং কিস’ ছুড়েছেন অভিযোগে সংসদে বিতর্ক শুরু হয়। তবে দলের একাধিক মহিলা সাংসদ স্পিকারের কাছে এই মর্মে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। রাহুলের বিরুদ্ধে "অরুচিকর" আচরণ এবং "অনুপযুক্ত" অঙ্গভঙ্গির অচিযোগ আনা হয়।
বিতর্কের মাঝেই সংসদে আজ জবাবি ভাষণ দেশেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বৃহস্পতিবার সংসদে এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের জবাব দেবেন। বিকাল ৪টেয় বক্তব্য রাখবেন তিনি। বুধবার, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং মোদীর সংসদে উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন। রাহুলের হত্যাকারীর বিরুদ্ধে কী জবব দেবেন মোদী সারা দেশের নজর এখন সেদিকেই।
আজ সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অনাস্থা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তার জবাবি ভাষণ পেশ করবেন। বিকাল ৪টেয় অনাস্থা প্রস্তাবের জবাব দেবেন মোদী।
এর আগে, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধীরা মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে। অনাস্থা প্রস্তাবের সমর্থনে মাত্র ১২৬টি ভোট পড়ে। যেখানে ৩২৫ জন সাংসদ এর বিপক্ষে ভোট দেন।
এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বৃহস্পতিবার লোকসভায় ভাষণ দেবেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বুধবার সংসদে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী অনাস্থা প্রস্তাবের জবাব দিতে বৃহস্পতিবার সংসদে উপস্থিত থাকবেন।”
এদিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও নিশ্চিত করেছেন যে প্রধানমন্ত্রী অনাস্থা প্রস্তাবের জবাব দিতে বৃহস্পতিবার সংসদে উপস্থিত থাকবেন। বিরোধী জোটের সদস্যরা ২৬ শে জুলাই মণিপুর ইস্যুতে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে। লোকসভায় মোদী সরকারের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। কাজেই ২০১৮ সালের মত এবারেও বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব বাতিলের সম্ভাবনা রয়েছে।
লোকসভায় মণিপুর ইস্যুতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের প্রতিক্রিয়ায়, কংগ্রেস সাংসদ কে.কে. সুরেশ বলেন, “কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অতীতের ঘটনা নিয়ে কথা বলেছেন। আমরা মণিপুরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করছি। তিনি মণিপুর সম্পর্কে কিছু বলেননি বা মণিপুরে শান্তি ও সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনতে কেন্দ্র কী পদক্ষেপ নিচ্ছে সেই তথ্য সংসদে পেশ করা হয়নি’।
আজ বিকেল ৪টেয় সংসদে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের জবাব দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার আগে বুধবার বিরোধীদের আক্রমণ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।