মাত্র তিনদিনের ব্যবধান, তার মধ্যে আরও এক তৃণমূল কর্মীকে খুনের অভিযোগ উঠল এ রাজ্যে। রবিবার রাতে আরামবাগের হরিণখোলা এলাকায় এক তৃণমূল কর্মীকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠল। নিহত কর্মীর নাম শেখ মুখতার (৪০) বলে জানা গিয়েছে। এ ঘটনায় ইতিমধ্যেই দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই ওই কর্মীকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন নিহতের স্ত্রী। আবারও দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ ওঠায় স্বভাবতই অস্বস্তিতে পড়ল শাসক শিবির।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সদস্য ছিলেন মুখতার। তাঁর দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। তাঁকে পিটিয়ে মারা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান পুলিশের। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট মিললেই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে মত এক পুলিশ আধিকারিকের। এ ঘটনায় ৩৪ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। ধৃত দুই ব্যক্তির মধ্যে একজনকে শেখ আখতার বলে চিহ্নিত করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন, রথযাত্রায় বিড়ম্বনা, তাই পদযাত্রায় ভরসা বঙ্গ বিজেপির
এদিকে, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই মুখতারের এই পরিণতি বলে অভিযোগ তুলেছেন দলের একাংশ ও নিহতের স্ত্রী। মুখতারের স্ত্রী সায়রানা বেগমের অভিযোগ, "কয়েকজন তৃণমূল কর্মী আমাদের ঘরে ঢুকে আমার স্বামীকে নিয়ে যায়। ওরা সকলেই লাল্টুর লোক। যিনি তৃণমূলেরই কর্মী। পরে মুখতারের দেহ উদ্ধার করা হয়।"
যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন লাল্টু। তাঁর দাবি, "ঘটনার সময় আমি ছিলাম না। কেন আমার লোকেরা ওকে মারবে? ওর মৃত্যুর ঘটনায় আমরা জড়িত নই।"
সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, এলাকায় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী রয়েছে। একটি গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছেন পুরশুড়ার প্রাক্তন বিধায়ক পারভেজ রহমান ও অন্য পক্ষের নেতা বর্তমান বিধায়ক মহম্মদ নুরজামান। পারভেজের ঘনিষ্ঠ ছিলেন মুখতার।
যদিও মুখতারের মৃত্যুর কারণ হিসেবে কোনও যোগই খুঁজে পাননি বলে দাবি করেছেন প্রাক্তন বিধায়ক। তাঁর বক্তব্য, "আমার কিছু বলার নেই। পুলিশ তদন্ত করছে।" অন্যদিকে বর্তমান বিধায়কের মন্তব্য, "জানি না কীভাবে এ ঘটনা ঘটল। পুলিশ তদন্ত করবে। আমরা দলীয় কর্মীদের শান্তি বজায় রাখার কথা বলছি।"
এদিকে, আরামবাগে তৃণমূল কর্মীর মৃত্যু নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে পারদও চড়েছে। শাসকদলকে বিঁধতে আসরে নেমেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। আরামবাগে ‘গণতন্ত্র বাঁচাও আন্দোলন’ কর্মসূচিতে দিলীপ বলেছেন, "অস্ত্র সরবরাহকারীদের আস্তানা হয়ে দাঁড়িয়েছে আরামবাগ। বোমা তৈরি হচ্ছে এখানে। এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে তৃণমূল। কয়েকজন স্থানীয় নেতা এত ক্ষমতাবান হয়েছেন যে, তাঁরা নিজেদের লোককেই মারছেন।"
এ ঘটনা প্রসঙ্গে এক তৃণমূল নেতা বলেন, "দলের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উন্নয়নে বিশ্বাস করেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, হিংসার পিছনে বিজেপি রয়েছে। ওরা আমাদের নাম নিয়ে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।"
Read the full story in English