তাঁর মায়ের শ্রাদ্ধে সম্প্রতি পাত পড়েছিল ১০ হাজার জনের। মুখ্যমন্ত্রী জেলায় এসে বলে গিয়েছেন, বীরভূমে তিনি একজনকেই চেনেন, তাঁর নাম কেষ্ট মণ্ডল। প্রতিপক্ষ বিজেপি নেতার চোখে তিনিই নাকি বীরভূমের জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপার। বীরভূমের ভোট মেটার পর এহেন অনুব্রত মণ্ডল এখন নজর দিয়েছেন পাশের বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে। সেখানে তাঁর প্রধান লক্ষ্য প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খানকে পরাজিত করা, যে সৌমিত্র কিছুদিন আগেও ছিলেন জোড়াফুলের যোদ্ধা।
বিতর্ক আর অনুব্রতের সহাবস্থান অবশ্য প্রায় নিয়মে পরিণত হয়েছে। নির্বাচনের প্রাকলগ্নে বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতির বিস্তর তর্জনগর্জনের প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন ২৮ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত তাঁকে নজরবন্দী থাকার নির্দেশ দিয়েছিল। বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তাঁর মোবাইল ফোনও। কিন্তু তাতে থোড়াই কেয়ার! দিনভর তাঁর অনুগামীদের ফোন থেকেই জেলার সর্বত্র হরেক কিসিমের নির্দেশ পাঠিয়েছেন কেষ্ট। নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি যখন বাড়ির একতলায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন, দোতলা থেকে তখন নানুর, ইলমবাজার সহ বিভিন্ন অঞ্চলে কীভাবে ভোট করতে হবে, তার গাইডলাইন পৌঁছে গিয়েছে নির্বিঘ্নে।
অবশ্য নির্বাচনের বেশ কিছুদিন আগেই কীভাবে ভোট করাবেন, তার আভাস দিয়েছিলেন কেষ্ট। যে শিক্ষক-শিক্ষিকারা নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করেন, তাঁদের উদ্দেশ্যে তাঁর আব্দার ছিল, বেশি নয়, মাত্র ৫০০-৬০০ টা ভোট করতে দিতে হবে। এছাড়া, ভোটের আগেই বিরোধীদের নকুলদানা আর জল খাওয়ানোর দাওয়াই তো ছিলই। তবে এবারের সুর যেন ঈষৎ নরম। অন্তত ২০১৬ সালে যেভাবে চড়াম চড়াম ঢাক বাজানো বা ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে নিজের পুরনো দল কংগ্রেসের কর্মীদের হাত কেটে নেওয়ার কথা বলেছিলেন, তার তুলনায় তো বটেই।
দলের সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রীর সমর্থন অবশ্য সবসময়ই পেয়ে এসেছেন কেষ্ট। সমর্থন না বলে বরং বলা যায় সস্নেহ প্রশ্রয়। দলের জেলা সভাপতির কু-কথা প্রসঙ্গে মমতা একবার বলেছিলেন, "ওর শরীর খারাপ। সর্বক্ষণ অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে চলতে হয়। মাথায় অক্সিজেন কম যায়।" কয়েকদিন আগেও বীরভূমে এসে বলেছেন, "জেলায় আমি একজনকেই চিনি - কেষ্ট। যার যা সমস্যা, ওকে গিয়ে বলবে।"
অনুব্রতের সর্বশেষ মাস্টার স্ট্রোক অবশ্য নিজের জেলা থেকে বহুদূরে যাদবপুর কেন্দ্রে বিজেপি-কে কার্যত প্রার্থীহীন করে দেওয়া। সদ্য তৃণমূলত্যাগী বিজেপি প্রার্থী অনুপম হাজরা কেষ্টকাকুর বাড়িতে এসে মাছ-ভাত আর পোস্ত খেয়ে গিয়েছেন। ভাইপোর হাত ধরে অনুব্রতও বলেছেন, ভুল বুঝতে পারলে দলে ফিরিয়ে নেবেন। পরদিন সাংবাদিক বৈঠক করে অনুপম অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি অনুব্রতর মায়ের মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করতেই গিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কী আর ড্যামেজ কন্ট্রোল হয়!
অনুব্রত এমনই। নিজে কখনও নির্বাচনে লড়েন নি। সম্ভবত, দরকার হয়নি। কিন্তু বীরভূমে তৃণমূলের সব প্রার্থীই আসলে তাঁর প্রার্থী। বিষ্ণুপুরে ভোট জেতার ছক সাজানোর ফাঁকে কেষ্ট তাই বলছেন, ''৪৪ টা সভা করেছি। প্রতিটিতে ১ থেকে দেড় লক্ষ লোক। সব কটা আসনেই জিতব।''