রথযাত্রা হোক বা না হোক, অনুব্রত মণ্ডল কথা দিয়েছিলেন ১৪ ডিসেম্বর বর্ধমানের চারটি এবং বীরভূমের ১৯ টি ব্লকে কীর্তনে রাম গান করবেন তৃণমূল কর্মী এবং কীর্তনীয়ারা। যেমন কথা তেমন কাজ বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতির। বিকেলে শুরু হওয়া কীর্তন চললো জেলার নানা প্রান্তে। নিজে এলাকায় না থাকলেও তাঁর সিদ্ধান্তের নড়চড় হয় না, এমনটা বললেন কিছু অনুগামী।
কিন্তু রাম নাম কই? লোহাপুর এলাকায় দেখা গেল, 'জয় রাধে' ধ্বনি তুলে অনেকটা প্যারোডি গেয়ে চলেছেন তৃণমূল কর্মীরা , কোথাও বা হিন্দী গানের সুরে খোলের তাল মিলিয়ে। কীর্তনীয়ারা সাধারণত নামাবলী গায়ে দেন বা ধুতি পাঞ্জাবি পরেন, গলায় থাকে তুলসীকাঠের মালা, কিন্তু এই নাম সংকীর্তনে খোল বাদকের পায়ে দামি সাদা স্নিকার, পরনে ফেডেড ডেনিম জিন্স, রঙিন পাঞ্জাবির ওপর বাজার চলতি মোদী জ্যাকেট, গলার কাছে উঁকি দিচ্ছে সোনার হার!
ভক্তিরসের প্লাবন আনা নামগান নয়, শাসকদলের ক্ষমতার আস্ফালনই দেখা গেল কীর্তনে। দলীয় পতাকা, মুখ্যমন্ত্রীর ছবি, সব থাকলেও দলের পরিচিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতা কর্মীদের কিন্তু দেখা মেলেনি সর্বত্র, কোথাও বা কীর্তন শুরুতে তাঁরা হাজিরা দিয়ে চুপচাপ সরে পড়েছেন। ইলামবাজার ব্লকের এক সংখ্যালঘু তৃণমূল নেতা বললেন, "এটা দাদার নির্দেশ তাই আমরা ব্যবস্থা করে দিয়েছি, কিন্তু আমাদের যে সমস্যা আছে এটা ওঁরা জানেন।"
আরও পড়ুন: জয় শ্রীরাম বলাচ্ছেন অনুব্রত, কী করবে বিজেপি?
ফলে খুব বেশি ভীড় কোথাও না হলেও কীর্তন হলো, কিন্তু রাম নাম সর্বত্র হলো না, যা হওয়ার কথা ছিল। চেষ্টা অবশ্য হয়েছিল কয়েক জায়গায়, তাও কীর্তনীয়া ঠিক সুর-কথা জুড়তে না পারায় খেই হারিয়ে খোলে চাঁটি মেরে "দিদি জিন্দাবাদ, কেষ্টদা জিন্দাবাদ" স্লোগান দিয়ে বসলেন।
কিন্তু যে বিজেপিকে রুখতে অনুব্রতর দু'কোটি টাকার এই খোল খঞ্জনির অভিযান, সেই বিজেপির বীরভূম জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বললেন, “এটা আমাদের নৈতিক জয়, আমাদের হিন্দুধর্মের কর্মসূচী এবং হিন্দুত্ববাদে মানুষের আগ্রহ দেখে তৃণমূল বাধ্য হলো খোল করতাল নিয়ে হরিনাম করতে।"
আর অনুব্রত? তিনি এখন আর বিজেপির জেলা রাজ্য নেতাতে সন্তুষ্ট নন, একেবারে অমিত শাহ-নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে যুঝবেন বলে চ্যালেন্জ ছুড়ছেন। পরিশেষে, রাম রথের বিরোধীতায় বিমান বসুর লাল রথ বের হলো, অনুব্রতর রাম কীর্তনও হলো, কিন্তু রাম রথ কই? সবাই তো সেই রথের দিকেই চেয়ে ছিলেন।