সামনে মানুষের পর্যাপ্ত ভিড়, সবাই তাঁর ব্লক থেকে এসেছেন। বাজনা বাজিয়ে মিছিল করে চলেছেন তাঁর ভাষণ শুনতে। পুলিশ এসকর্ট, পাইলট, নিরাপত্তারক্ষী পরিবৃত অনুব্রত মণ্ডলের কনভয় সে মিছিলে আটকে গেল। অনেকক্ষণ আটকে থেকে কালো গাড়ির কাঁচ দিয়ে অনুব্রত দেখলেন, তাঁর ছবি দেওয়া প্ল্যাকার্ড নিয়ে মানুষের মিছিল চলছে। অবশেষে মঞ্চে উঠে শুনলেন তাঁর 'অভিভাবক মন্ত্রী' আশীষ ব্যানার্জি বলছেন, "এমন নেতা আর কে আছেন, যাঁর কথা শুনতে এত মানুষের ভিড় হয় যে আমাদের মন্ত্রীদের গাড়িও আটকে যায়?"
সব দেখে শুনে যে যারপরনাই উৎফুল্ল অনুব্রত, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মঞ্চে দলের নেতা সুদীপ্ত ঘোষ অনুব্রতর গলায় শাল জড়িয়ে সম্বর্ধনা দিতেই এক চুল না সরে সেই শাল ছুড়ে ফেললেন পেছন দিকে, যে দৃশ্য দেখে শ্রোতাদের মাঝে গুঞ্জন উঠল, "এ তো কাকা পুরো রজনীকান্ত স্টাইল!"এরপর ফুল সহ যা যা দিয়ে তাঁকে সম্মান জানানো হলো, সব হাত ঘুরিয়ে পেছনে চালান করলেন। বুধবার ছিল তাঁর কাছেও কিঞ্চিৎ উৎকণ্ঠার দিন। সিউড়িতে অমিত শাহর বদলে স্মৃতি ইরানি, সঙ্গে অনুব্রতর দলের একদা নেতা মুকুল রায়, যে মুকুল রায় তাঁর রাজনৈতিক উত্থানের প্রতিটি অঙ্ক জানেন। কিন্তু সে সভা কার্যত ভণ্ডুল হয়ে গেল, খবর এল, বিজেপির কোন নেতা-নেত্রী আসছেন না।
শুনে মুচকি হেসে অনুব্রত বললেন, "ওদের লোক নাই, জন নাই, লজ্জায় নেতারাও নাই।" এরপর বিরাট তোফা এলো আশীষবাবুর কাছ থেকে। বীরভূমে দল পরিচালনায় প্রভূত সাফল্যের পরে অনুব্রতকে দেওয়া হয়েছিল নদীয়ার দায়িত্ব, এবার মালদাতেও দল পরিচালনার দায়িত্বে অনুব্রত। জেলার গন্ডী ছেড়ে বেরিয়ে তাঁর ভোকাল টনিক এবং অঙ্কে দলের দুর্বলতা কাটাতে পারবেন, এই বিশ্বাস দলনেত্রীর।
আরও পড়ুন: শাহকে মালা পরানো গেল না, মন খারাপ রাজ্য বিজেপির
তাই চেনা অনুব্রত ওরফে 'কেষ্ট' অনেক বদলে যাচ্ছেন। বদলে যাচ্ছে কথাবার্তা, আদব কায়দা সবই। অনুব্রত আসলে জানেন, পুলিশকে বোমা মারার হুমকি, উন্নয়নের দাঁড়িয়ে থাকা, বা পাঁচনের ব্যবহার, কোনটাই রসিকতা নয়। যে সময় যেখানে যে জিনিসটা দরকার, তিনি সেটাই দেন। বীরভূম তাঁর দাওয়াই গিলে এখন বিরোধীহীন। নদীয়ায় দায়িত্ব নিয়ে অনুব্রত বীরভূমে জানিয়ে গেলেন, "ওখানে দুটো আসন, দুটোই জিতব লক্ষাধিক ভোটে!"
বীরভূম এবং নদীয়ার হাবভাব, সংস্কৃতি পুরোটাই আলাদা, ফলে তার প্রভাব যেমন পড়ছে, তেমন আচার আচরণও পাল্টে যাচ্ছে। তবে একটাই বিরাট মিল, বীরভূমে চার হাজার খোল করতাল বিলি করা অনুব্রত এবার কীর্তনের জেলায় কীর্তনিয়াদের আপনজন হয়ে ঢুকে পড়েছেন। ফলে বীরভূমের কর্মীরা অনেকে বলছেন, "দাদা কিন্তু অনেক বদলে যাচ্ছেন।" অনেকেই বলছেন সেকথা, ২০১৫ সালেও নিচুপট্টির 'কেষ্ট' যেমন ছিলেন, এখন তাঁর হাবভাব কথাবার্তা সব বদলে চরম রাশভারি হয়ে উঠছে। আর শাল পেছন দিকে ছোড়াটা সেই বদলে যাওয়া 'কেষ্টর' বদলানোর ছবি।