"আগে কুড়ে ঘরের চাল ছাওয়ানো হতো কলমা খড়, লঘু খড় দিয়ে। এখন হাই লিঙ্ক খড়, তাই ছেড়ে ছেড়ে পড়ে যাচ্ছে।" দলের বোলপুরের সাংসদ তথা একদা প্রিয় "ভাইপো" অনুপম হাজরার বহিষ্কার সম্পর্কে মুখ খুলে এমনই উপমা দিলেন অনুব্রত মন্ডল। শনিবার বিকেলে বোলপুরে দলের বীরভূম জেলা কমিটির সভায় অনুব্রত বলেন, "অনুপমকে বহিষ্কার করেছে দল, বেশ করেছে!"
এবার যে নতুন মুখ খোঁজা শুরু হয়েছে বোলপুরের জন্য, সেকথা জানিয়ে অনুব্রত বলেন, "আমরা বসছি এ বিষয়ে।" পাশে বসা মন্ত্রী আশীষ ব্যানার্জিকে নিয়ে অনুব্রতর মন্তব্য, "আশীষদাও আছেন সে কমিটিতে, আমরা খুব তাড়াতাড়ি বসছি।"
অনুপম হাজরা গত লোকসভা নির্বাচনে কিভাবে দলের প্রার্থী হলেন, এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে দলের মধ্যেই। আগে তৃণমূলের সদস্য হওয়া দূরের কথা, কোনো সামাজিক কর্মসূচীতেও যাঁকে মানুষ কোনোদিন দেখেন নি, তিনি কিভাবে কার মারফৎ দলের প্রার্থী হয়েছিলেন তা নিয়ে আলোচনা করে, যিনি বা যাঁরা দলের জেলা নেতাদের "টপকে কাজ করছেন" তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও তুলেছেন তৃণমূল কর্মীরা। এক্ষেত্রে সকলের অনুমান, এক শিল্পী, যিনি সরাসরি দলনেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, তিনিই অনুপমকে সাংসদ বানাতে মরিয়া ছিলেন। অথচ আগে কখনোই দলের জেলা নেতাদের এ বিষয়ে অবহিত করা হয়নি।
আরও পড়ুন: ছিল তিন, হলো দুই; বোলপুরের তৃণমূল তারকাদের বৃত্তান্ত
অনুপম হাজরা সাংসদ থাকাকালীন বোলপুরের আগামী তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে অসিত মালের নাম ঘোষনা করে ফেসবুক পোস্ট লিখেছিলেন, সেই অসিত মালই কি প্রার্থী? অসিত মালের সামনে বসে এ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান অনুব্রত। জানান, ৬ ফেব্রুয়ারি সভা করবেন।
তৃণমূলের অন্দরে প্রশ্ন, বোলপুরের প্রার্থী স্থানীয়ভাবে দলের জেলা নেতারা বাছলে কি নেত্রী অনুমোদন দেবেন? না সেই কলকাতার কোন "চাপিয়ে দেওয়া" মুখকেই জেতাতে হবে? এ নিয়ে রীতিমত সংশয়ে পড়েছেন জেলার তৃণমূল নেতাকর্মীদের একাংশ।
নেতাদের বিশ্লেষণ, নানুরের একটা অংশ ছাড়া পুরোটাই ঠিক আছে, তবে লাভপুরে বিজেপি, ও কেতুগ্রাম-আউশগ্রামে সিপিএম আবার মাথাচাড়া দিয়েছে, এবং ইলামবাজারে দলের মধ্যে বিরোধ মিটছে না। লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলাম অসুস্থ। দীর্ঘদিন তাঁকে একপাশে সরিয়ে রেখে যাঁরা এলাকার ক্ষমতা দখল করছেন তাঁরা একদা বামদলের নেতা ছিলেন, ফলে বোলপুর এলাকার দলের ভেতরে সমস্যা সম্পূর্ণ কাটেনি। এ অবস্থায় একমাত্র অনুব্রতর "দাওয়াই" ভরসা করেই মাঠে নামতে হচ্ছে বোলপুরের তৃণমূল নেতাদের।