জয় শ্রীরাম বলাচ্ছেন অনুব্রত, কী করবে বিজেপি?

বিজেপি তাদের জয় শ্রীরাম হাইজ্যাক হওয়া দেখে যথেষ্টই বিব্রত। ১৪ ডিসেম্বর বিজেপির রথযাত্রা শুরু হওয়ার কথা রামপুরহাট থেকে, এবং ঠিক সেদিনই শুরু অনুব্রত মণ্ডলের রাম কীর্তন।

বিজেপি তাদের জয় শ্রীরাম হাইজ্যাক হওয়া দেখে যথেষ্টই বিব্রত। ১৪ ডিসেম্বর বিজেপির রথযাত্রা শুরু হওয়ার কথা রামপুরহাট থেকে, এবং ঠিক সেদিনই শুরু অনুব্রত মণ্ডলের রাম কীর্তন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

তবে কি অনুব্রত বিজেপি কে ভয় পাচ্ছেন? (ফাইল ছবি)

সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে একটাই প্রশ্ন, রাম তুমি কার? মোদীর না দিদির? কারন বীরভূম তৃনমূলের জেলা সভাপতি, যিনি পুলিশকে বোমা মারার নির্দেশ দিয়ে প্রচারের আলোয় এসছিলেন, তিনি গত সপ্তাহে এক দুপুরে বোলপুরের ডাকবাংলো মাঠে চার হাজার কীর্তনদলের হাতে খোল করতালের সেট তুলে দিয়ে বললেন, ১৪ ডিসেম্বর জেলা জুড়ে রাম নাম কীর্তন শুরু হবে। এর আগে হনুমান পুজো শুরু করে তিনি বিতর্ক তুলেছিলেন, এবার রাম নাম সংকীর্তনের ডাক।

Advertisment

বিজেপি তাদের জয় শ্রীরাম হাইজ্যাক হওয়া দেখে যথেষ্টই বিব্রত। ১৪ ডিসেম্বর বিজেপির রথযাত্রা শুরু হওয়ার কথা রামপুরহাট থেকে, এবং ঠিক সেদিনই শুরু অনুব্রত মণ্ডলের রাম কীর্তন। বলেই দিলেন, "বিজেপির আগে আমরা ঘরে ঘরে রাম নাম পৌঁছে দেব, যিনি রাম, তিনিই নারায়ণ। এই নামগানে জেলা শুদ্ধ হবে, দল শুদ্ধ হবে।"

আরও পড়ুন: খোল করতালে বিপুল টাকা ব্যয় অনুব্রতর, তৃণমূলের প্রচারে কীর্তনীয়ারা

গত ৩১ অক্টোবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলায় প্রকাশিত হয় অনুব্রতর এই খোল করতাল পর্বের কথা, সেই মতন বুধবার বীরভূমের ১৯ টি ব্লক এবং বর্ধমানের চারটি ব্লকের কীর্তনদলকে ডেকে তাদের হাতে খোল করতাল তুলে দিলেন অনুব্রত। নবদ্বীপ এবং বহরমপুরে তৈরী এসব সরঞ্জাম পেয়ে খুশী কীর্তনীয়ারা। তাঁদের স্পষ্ট বক্তব্য, বাড়ি বাড়ি কৃষ্ণ নাম শুনিয়ে যে মাধুকরী পান, তা দিয়েই তাঁদের জীবন চলে। সেখানে মাথাপিছু প্রায় পাঁচ হাজার টাকার সরঞ্জাম না চাইতেই পাওয়াটা বিরাট প্রাপ্তি।

Advertisment

তবে রামনাম কীর্তন কি তারা করেন? ইলামবাজারের কীর্তনীয়া ভক্তদাস বলেন, "কখনও করিনি তো, কী বিষয়টা বুঝতে পারছি না।" একই কথা অন্য কীর্তনীয়াদের। তাঁরাও বুঝছেন না কিভাবে কোন পদে জয় শ্রীরামের নাম তাঁদের জুড়তে হবে। কীর্তন শিল্পী সুমন ভট্টাচার্য বলছেন, "এই সরঞ্জাম শিল্পীদের কাজে লাগবে, তবে রাজনীতি এসবের সাথে না জড়ানোই ভালো।"

তবে কি অনুব্রত বিজেপি কে ভয় পাচ্ছেন? মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে রাজ্যের বিজেপি নেতাদের প্রসঙ্গ উড়িয়ে দিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহর সাথে টক্করে নেমে তাঁকে কীভাবে নাকাল করা যায়, সে হিসেব কষছেন অনুব্রত।
বিজেপি সূত্রে জানা গেছে, ১৪ ডিসেম্বর তারাপীঠে কপ্টারে নেমে তারা মায়ের পুজো দিয়ে রামপুরহাটে এসে সভা করে রথযাত্রার সূচনা করবেন শাহ। কিন্তু রামপুরহাটে কোনও সরকারী মাঠ একাজে দেওয়া হবে না বলে প্রশাসন জানিয়ে দেওয়ায়, শেষে বাধ্য হয়েই রেলের মাঠকে শাহর সভার জন্য বেছেছে বিজেপি। দলের নেতা শমীক ভট্টাচার্য নিজে এসে দেখে গেছেন পরিস্থিতি।

আরও পড়ুন: অনুব্রতর পাঁচনের পাল্টা সায়ন্তনের বড়ি, কথায় সরগরম রাজ্য-রাজনীতি

রথযাত্রাকে কটাক্ষ করে অনুব্রত বলছেন, "আষাঢ় মাসে রথ হয়, এটা আবার কোন রথ? এ তো শেষযাত্রা! তার জন্যই খোল করতাল বাজবে।" এসব দেখে বিব্রত পুলিশও, কারণ শাহর নিরাপত্তার দায়িত্বে যে জেড ক্যাটাগরী বাহিনী, তারা উচ্ছৃঙ্খলতা দেখলে চুপ করে থাকবে না। আবার ওদিকে খোল করতালের মহড়া নিয়ে রথকে ধাওয়া করার মেজাজে রয়েছেন তৃণমূল কর্মীরা, ফলে যথেষ্ট চিন্তায় পুলিশ। বোলপুরের প্রাক্তন সাংসদ ডা: রামচন্দ্র ডোম জানালেন, "ঠিক বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার বর্ষপূর্তির আগের দিন তৃণমূলও যেভাবে জয় শ্রীরামের ধ্বনি তুলতে শুরু করলো, এতে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আরও বাড়বে।"

কিন্তু প্রায় দু'কোটি টাকার এই খোল করতালের জন্য অর্থ এলো কোথা থেকে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু। অনুব্রতর সাফাই, সব দলের ব্লক সভাপতিরাই যোগাড় করেছেন। অতএব শীতের রাতে এখন বীরভূমের গ্রামে খোল করতালের শব্দ, যেন কেঁদুলি মেলা শুরু হলো।

অস্বীকার করার উপায় নেই, শাসকদলের সংখ্যালঘু নেতা কর্মীরা যথেষ্ট বিব্রত এসব দেখে। কিন্তু তার চেয়েও বেশি বিপাকে বিজেপি। জয় শ্রীরাম স্লোগান যদি তৃণমূল তোলে, তবে বিজেপির কী থাকবে, সেটাই দেখার।

Birbhum anubrata mondal bjp tmc