মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলায় শান্তি রক্ষার আহ্বান জানিয়ে বীরভূম ছেড়েছেন কী ছাড়েন নি, তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের আস্তিন থেকে বেরিয়ে পড়লো সেই পাঁচন। জানিয়ে দিলেন, এবার পাঁচন এবং গোলাপ উভয়েরই ব্যবহার শুরু হবে। অনুব্রতবাবুর বিতর্কিত মন্তব্য বারবার সংবাদ শিরোনামে এসছে। কখনও ভোটের আগে "চড়াম চড়াম", কখনও "গুড় বাতাসা", কখনও "উন্নয়নের দাঁড়িয়ে থাকা", এমন হরেক ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যর তালিকায় আপাতত সর্বশেষ সংযোজন পাঁচন।
বীরভূমের গ্রাম্য ভাষায় পাঁচন হলো সেই লাঠি, যা দিয়ে গরু তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু প্রয়োজনে কাউকে তা দিয়ে দিব্যি আক্রমণ বা আঘাত করা যায়। দলের মুরারইয়ের এক নেতা অনুব্রতকে রুপোর পাঁচন উপহার দিয়েছেন, বাসাপাড়ায় দলীয় সমর্থকরা তাঁকে দিয়েছেন পিতলের তৈরি এক কৃষকের মূর্তি। গরুকে পাঁচনের বাড়ি মারা সেই স্মারক দেখিয়ে অনুব্রতর ঘোষণা, "এমনভাবে জেলার জমি ঊর্বর করব। এবারে কোথাও কোমরে বাড়ি পড়বে, কোথাও পায়ে বাড়ি পড়বে, কোথাও পশ্চাদ্দেশে বাড়ি পড়বে, মিলেমিশে কিছু তো বাড়ি পড়বে, না হলে মাটি কী করে ভালো হবে? আর ঠিক সময়ে বাড়ি বাড়ি গোলাপ ফুল পৌঁছে যাবে, কেউ বুঝতেই পারবে না।"
আরও পড়ুন: অনুব্রতর পাঁচনের পাল্টা সায়ন্তনের বড়ি, কথায় সরগরম রাজ্য-রাজনীতি
অনুব্রত কখনই নিছক কথার কথা বলেন না জানেন সকলেই, সর্বশেষ তাঁর "উন্নয়ন দাঁড়িয়ে থাকার" ঘোষনায় গত পঞ্চায়েত ভোটে গোটা রাজ্যই প্রভাবিত হয়েছিল, গোটা রাজ্যেই মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দিয়েছে তৃণমূল, এমন অভিযোগ বিরোধীদের। কিন্তু লোকসভা ভোটে এভাবে লড়াই সম্ভব নয় বলেই কি কৌশল বদল করছেন অনুব্রত? অনুব্রতর সাফ জবাব, তাঁর দায়িত্বে থাকা বীরভূম এবং বোলপুর, দুটো লোকসভা আসনেই কয়েক লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জিতবে তৃণমূল। কিন্তু তাহলে কেন পাঁচনের দরকার পড়ছে, এই প্রশ্ন উঠেছে তৃণমূলের অন্দরেই।
বিজেপির বীরভূম জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়ের এই ঘোষনা শুনে মন্তব্য, "ও যদি মানুষকে পাঁচন মারে, আমরাও ডাং (বড় পোক্ত লাঠি) বের করে জবাব দেব।" বোলপুরের প্রাক্তন সাংসদ তথা সিপিআই (এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা: রামচন্দ্র ডোম বলেন, "বোলপুরে ডা: শরদীশ রায়, সোমনাথ চ্যাটার্জি ও আমি সাংসদ হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছি। আমরা কী কাজ, কেমন কাজ করেছি, এলাকার মানুষই তা জানেন। আমাদের কিন্তু ভোটে জিততে পাঁচন, গোলাপ, ডাং, এসব কোন কিছুরই দরকার পড়ে নি। আসলে মানুষের সাথে যারা বিশ্বাসঘাতকতা, অপরাধ করেন তাঁদেরই এভাবে মানুষকে ভয় দেখাতে হয়। আমাদের বিশ্বাস, মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারলে এসব হুমকির উপযুক্ত জবাব দেবেন।"
তবে পাঁচন যন্ত্রর ব্যবহার কবে শুরু হয়, এ নিয়ে অবশ্যই উদ্বিগ্ন জেলার পুলিশ মহল। পুলিশ সূত্রে খবর, ১৯ জানুয়ারি কলকাতায় ব্রিগেড সভার পর থেকেই শাসক দল 'জমি চাষ' শুরু করবে, কিন্তু তার জেরে আইনী সমস্যা তৈরী হলে পুলিশ কী করবে? নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে বিভিন্ন জেলার আইন শৃঙ্খলা নিয়ে নজরদারি শুরু করে দিয়েছে। ফলে বিরোধীদের পাশাপাশি পাঁচন নিয়ে যথেষ্ট দুশ্চিন্তায় জেলা পুলিশও।