২১শে বাংলা জয়ের লক্ষ্যে বিভোর পদ্ম বাহিনী। কিন্তু, সংগঠনে অন্তর্দ্বন্দ্ব চরমে। বুথ কমিটি থেকে রাজ্য বিজেপির মূল সংগঠন বা দলের বিভিন্ন মোর্চার কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করেই সেই ছবি ক্রমশ প্রকট হচ্ছে। এর মাঝেই নবমীর সকালে বিজেপির সর্বভারতীয় সংগঠনের সম্পাদক অনুপম হাজরার একটি পোস্ট বঙ্গ বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্বেই যেন সিলমোহর দিল। একই সঙ্গে ওই পোস্টেই দলের বিবদমান নেতাদের উদ্দেশে চরম হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন বোলপুরের প্রাক্তন সাংসদ। এইভাবে চললে আগামী বছর দল বাংলায় ক্ষমতায় নাও আসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
দলের অনেকেই বিজেপি ক্ষমতায় আসছে ধরে নিয়ে 'অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী' হয়ে গিয়েছেন। আর এতেই দলের অভ্যন্তরে অন্তর্দ্বন্দ্ব বাড়ছে। যা দলের তৃণমূল স্তরের নেতাদের মনোবলে আঘাত হানছে। মনে করছেন অনুপম হাজরা। সোশাল মিডিয়া পোস্টে গেরুয়া বাহিনীর নেতাদের উদ্দেশে অনুপমের বার্তা, 'নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিবাদ, ঝগড়া মিটিয়ে একতা বজায় রাখলেই ভাল। এতে বুথস্তর অব্দি কার্যকর্তারাও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে লড়ার মনোবল পাবেন।'
নেতৃত্বের মধ্য়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বা ঘরোয়া কোন্দল বজায় থাকলে ২১শে বিজেপির বাংলা জয়ের লক্ষ্য কার্যত স্বপ্নই থেকে যেতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন প্রাক্তন সাংসদ। তাঁর ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ, 'আমরা যদি এই লড়াইয়ে বাইচান্স হেরে যাই, তাহলে তৃণমূলের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য বাংলার বাইরে, অন্যকোনও রাজ্যে আমাদের নতুন কোনও বাসস্থান খুঁজতে হবে।' এই পরিস্থিতি দাঁড়ালে বুথস্তরের কর্মীদের অবস্থা কী হতে পারে তারও ব্যাখ্য়া দিয়ে নেতাদের সজাগ করার চেষ্টা করেছেন অনুপম হাজরা। পোস্টে তিনি লিখেছেন, 'সব থেকে দুরাবস্থা হবে বুথস্তরের কার্যকর্তাদের। যাঁরা হচ্ছেন এই লড়াইয়ে আমাদের সৈনিক, যাঁরা নিজেদের প্রাণ অব্দি দিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন সারা বছর!!!' একেবারে শেষে তাঁর পরামর্শ, 'তাই সংযত হোন, নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিবাদ লড়াই বন্ধ করুন!!!'
বিগত লোকসভা ভোটে বাংলায় ব্যাপক সাফল্য পেয়েছিল বিজেপি। শুরু হয় পশ্চিমবঙ্গ দখলের প্রস্তুতি। কিন্তু, দলের নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের জেরে ক্রমশ সেই স্বপ্ন ফিকে হচ্ছে। গত শুক্রবারই, ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার সব জেলা সভাপতি ও কমিটি বাতিল করা হয়েছে। বঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এই ঘোষণা করেন। পরবর্তী ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত বিজেপির জেলা সভাপতিরাই দলের মোর্চার দায়িত্ব সামলাবেন বলে জানানো হয়েছে। অথচ, দলের এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কিছুই জানতেন না বলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার কাছে দাবি করেছিলেন বিজেপির রাজ্য যুব মোর্চার সভাপতি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ।
সপ্তমীর এই ঘটনার পরই অষ্টমীর দিন বিজেপি যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করে সংগঠনের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে যান সৌমিত্র খাঁ। অবশ্য তার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন তিনি।
আরও পড়ুন- জেলা যুব মোর্চার সভাপতিদের পদ বাতিল দিলীপের, জানেনই না সৌমিত্র
অষ্টমীর সকালে যুব মোর্চার শীর্ষ নেতাদের নিয়ে তৈরি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ‘বিজেওআইএম ওয়েস্টবেঙ্গল অফিসিয়াল’ থেকে বেরিয়ে যান সৌমিত্র। লেখেন, 'শুভ মহাষ্টমী। সকলে ভাল থাকবেন। আপনাদের খুবই সহযোগিতা পেয়েছি আমি। আমি চাই বিজেপিকে সরকারে আনতেই হবে। তাই হয়ত আমার অনেক ভুল ছিল যে কারণে দলের ক্ষতি হচ্ছিল। তাই আমি ইস্তফা দেব। সকলে ভাল থাকবেন। যুব মোর্চা জিন্দাবাদ, বিজেপি জিন্দাবাদ, মোদীজি জিন্দাবাদ।' দিলীপ ঘোষ দলের যুব মোর্চার সমস্ত জেলা কমিটি ভেঙে দেওয়ার প্রেক্ষিতেই সৌমিত্রের এই সিদ্ধান্ত বলে বিজেপি সূত্রে জানা যায়।
অথচ তার কিছুক্ষণের মধ্যেই ফের গ্রুপে যুক্ত হন তিনি। লেখেন, 'তোমাদেরকে ছেড়ে থাকা সম্ভব নয়। তাই আবার ফিরে এলাম। তৃণমূলকে হঠানোর জন্য সব কিছু ত্যাগ করতে রাজি আছি। জয় শ্রীরাম। জয় মা দুর্গা। বিজেপি জিন্দাবাদ। মোদী জিন্দাবাদ।' বিজেপির যুব মোর্চার কমিটি ঘিরে এই সংঘাত রীতিমতো চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে গেরুয়া শিবিরে।
তবে, বঙ্গ বিজেপির অভ্যন্তরের এই দ্বন্দ্বের মাঝেই অনুপম হাজরার ফেসবুক পোস্ট বিতর্কে নয়া ইন্ধন জোগাল বলেই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন