প্রাক্তন কাউন্সিলর ও বিজেপির যুব নেতা মণীশ শুক্লা হত্যার পর অর্জুন সিং বলেছিলেন, "ও আমার ঢাল ছিল।" অর্জুনের সবসময়ের সঙ্গী ছিলেন মণীশ। ঘটনার দিনও হাওড়ায় দলের কর্মসূচিতে দু'জনই হাজির ছিলেন। এই ঘটনা শুধু নয়, নানা দিক থেকে ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ কি চক্রব্যূহে আটকে যাচ্ছেন? ঘটা করে ভাটপাড়া পুরসভা বিজেপি দখলে নিয়েছিল। দায়িত্বে ছিলেন অর্জুন সিংয়ের ভাইপো সৌরভ সিং। ওই পুরসভা হাতছাড়া হওয়ার পর থেকে ব্যাংক কেলেঙ্কারির অভিযোগ, ঘনিষ্ঠদের গ্রেফতার, তাঁদের বাড়িতে তল্লাশি, খোদ সাংসদের বাড়ি ও অফিসে তল্লাশি। নানা ঘটনায় বিপর্যস্ত দোর্দন্ডপ্রতাপ সাংসদ।
তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে নানা ক্ষেত্রে চাপ বেড়েছে উত্তর ২৪ পরগনার 'দাবাং' নেতা অর্জুন সিংয়ের। ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপি সাংসদ নির্বাচিত হলেও নানা দিক থেকে সমস্যা বাড়তে থাকে অর্জুনের। গুঞ্জন ছড়িয়েছিল তিনি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিতে চলেছেন। বিজেপির আরেক শীর্ষ নেতা মুকুল রায়ের মতো অর্জুনকেও বারে বারে বলতে হয়েছে তিনি তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন না।
কয়েকটি ঘটনায় স্পষ্ট অর্জুন সিংয়ের ওপর চাপ ক্রমশ বাড়ছে। সাংসদের বাড়িতে একাধিকবার ব্যারাকপুর পুলিশ হানা দিয়েছে। শেষমেশ দীর্ঘ সময় ধরে তল্লাশিও চলেছে। পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে কলকাতায় বড়বাজারে তাঁর সংবাদ মাধ্যমের দফতরেও। নরিসংহ ব্রডকাস্টিং প্রাইভেট লিমিটেডের নথিপত্র খতিয়ে দেখছে পুলিশ। মণীশ শুক্লা ছিলেন তাঁর ডান হাত। টিটগড়সহ আশপাশের এলাকার দায়িত্ব ছিল এই মণীশের হাতেই। মণীশ ছিলেন এই বিজেপি সাংসদের ছায়াসঙ্গী।
ভাটপাড়া-নৈহাটি সমবায় ব্যাংক ও ভাটপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যান রিলিফ ফান্ড নিয়ে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এক্ষেত্রেও নাম জড়িয়েছে অর্জুন সিংয়ের। আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে ব্যাংক কর্তা ও ঋণগ্রহীতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সম্প্রতি ওই কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতার করা হয়েছে অর্জুন সিংয়ের 'ভাইপো' বলে পরিচিত সঞ্জিত সিংকে। দীর্ঘ দিন ধরে ব্যারাকপুর গোয়েন্দা পুলিশ তাঁকে খুঁজছিল। সোমবার অর্জুন ঘনিষ্ঠ বিজেপির জেলা সম্পাদক বিজয় মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে তল্লাশি করে ব্যারাকপুরের গোয়েন্দা পুলিশ। অর্জুন যখন তৃণমূলের বিধায়ক ছিলেন তখনও ছায়াসঙ্গী ছিলেন বিজয়বাবু।
অর্জুন সিং একাধিকবার অভিযোগ করেছেন বিজেপি করেন বলেই তার ওপর প্রতিহিংসামূলক আচরণ করা হচ্ছে। মণীশ শুক্লা খুনের ঘটনায় তৃণমূল ও পুলিশের দিকে নিশানা করেছেন অর্জুন সিং। তৃণমূল পাল্টা অভিযোগ করেছে। পুলিশ ওই ঘটনার তদন্ত করছে। অভিজ্ঞমহলের মতে, ঘটনা পরম্পরায় ক্রমশ কোনঠাসা হয়ে পড়ছেন অর্জুন। তাঁর কথাতেই তা অনেকটা পরিস্কার।
মহাভারতে দ্রোণাচার্যের চক্রব্যূহে বধ হয়েছিলেন অর্জুনপুত্র অভিমন্যু। বীর অভিমন্যু সেদিন চক্রব্যূহ থেকে বের হতে পারেননি। ১৬ বছরের পান্ডববীরকে ঘিরে ফেলেছিল কৌরব সেনা। ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং রাজনীতিতে এখন অনেকটাই অভিজ্ঞ ও পোক্ত। তৃণমূলের বিধায়ক থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েই সাংসদ হয়েছেন। ছেলে পবন ভাটপাড়ার বিধায়ক। তিনি এখন দলের রাজ্য সহসভাপতি। রাজনৈতিক মহলের মতে, অর্জুন কি সত্যি চক্রব্যূহে? নাকি তিনি লোকসভার লড়াইয়ের মতো এসব বাধাও অতিক্রম করবেন অনায়াসে? আগামী দিন এসব প্রশ্নের জবাব মিলবে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন