Advertisment

'দল কোনও ব্যাপার নয়, ২৪-য়ের ভোটে আমিই জিতব', বিস্ফোরক অর্জুন, জল্পনা আরও বাড়ল

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে অর্জুন সিংয়ের একান্ত সাক্ষাৎকার।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Bjp Mp arjun singh may join tmc, rumour may true within few hours

বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং। ছবি- পার্থ পাল

পাট নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও জুট কর্পোরেশনের কমিশনারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই সরগরম রাজ্য রাজনীতি। জোর গুঞ্জন, অর্জুনের এই গোঁসা আদতে তাঁর ঘরওয়াপসির সলতে পাকানো। যদিও তা নিয়ে কিছু খোলসা করছেন না এই দোর্দদণ্ডপ্রতাপ নেতা। রাজ্য বিজেপির দুর্বলতা, একের পর এক নির্বাচনে হার, তাঁর তৃণমূলে ফেরার সম্ভাবনা ও পাট শ্রমিকদের স্বার্থ নিয়ে অর্জুনের মুখোমুখি হয়েছিলেন দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিনিধি সুইটি কুমারী।

Advertisment

প্রশ্ন: ব্যারাকপুর লোকসভার অন্তর্গত ৭টি বিধানসভার মধ্যে ২১শের ভোটে ৬টিতেই হেরেছে বিজেপি। ২৪শের ভোটের আগে আপনি কী নিজের ভবিষ্যত নিয়ে সন্দিহান?

অর্জুন সিং: দুর্বল প্রার্থী নির্বাচনের কারণেই বিজেপি হেরেছে। যাঁরা টিকিট পেয়েছেন তাঁদের বেশিরভাগই সক্রিয় রাজনীতিতে ছিলেন না। বাংলা এমন একটি রাজ্য যেখানে সবাই রাজনৈতিকভাবে সচেতন এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। যদি আমার ব্যাপক সমর্থন না থাকত, আমিও জিততাম না। আমার বিরুদ্ধে ১৬৫টি মামলা রয়েছে। আমার পরিবারের অর্ধেক সদস্য রাজ্য ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আমি কোনও ধরনের চাপের মধ্যে নেই। তবে আমার সমর্থকদের অনেকেই জেলে থাকতে পারছেন না। দল যদি লড়াই না করে, তাহলে অর্জুন সিংয়ের পক্ষে কি একা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব? আমার মনে হয়, নির্বাচনের পরে দলগতভাবে যথেষ্ট লড়াই সম্ভব হয়নি। অনেক কর্মীই নিজেদের সেই সময় হেয় বলে মনে করেছেন। ভোট-পরবর্তী হিংসায় ২৬ হাজার মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছেন। আমরা তাঁদের যথেষ্ট সাহায্য করতে পারিনি। অনেকে তাঁদের চাকরি হারিয়েছে। আর মামলা লড়তে আদালতের টাকারও প্রয়োজন আছে।

প্রশ্ন: ২০২৪-এর ভোটে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির লড়াই কী তাহলে কঠিন হবে?

অর্জুন সিং: সাংগঠনিকভাবে বাংলার বিজেপি খুবই দুর্বল। সম্প্রতি আসানসোলে উপনির্বাচনে যা দেখা গেল তাতে সেটাই প্রমাণ হচ্ছে। সেখানে প্রায় ৯০০ ভোট কেন্দ্রে বিজেপির কোনও এজেন্টই ছিল না। বাংলায়, যদি ভোট কেন্দ্রে এজেন্ট না থাকে, তাহলে সেটা ভোটের দিনই কার্যত হারের সামিল। কারণ আপনি কারচুপি বন্ধ করতে পারবেন না। আপনি আধাসামরিক যতই বাহিনী বা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করুন না কেন এখানে এইধরণের কাজই ভোটে হয়ে থাকে। ২০২৪ সালে আমি জিতবই, দল কোনও ব্যাপার না। আমি গতবার দলে (বিজেপি) যোগ দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে নির্বাচনে জিতেছিলাম এবং প্রাক্তন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদীকে পরাজিত করেছিলাম।

প্রশ্ন: তৃণমূলে ফিরতে চান বলে জল্পনা চলছে।

অর্জুন সিং: আমি যদি তৃণমূলে যোগ দিতে চাই, কেউ আমাকে আটকাতে পারবেন না। আমি যদি না চাই, তাহলে কেউ আমাকে জোর করে যোগ দেওয়াতে পারবেন না। পাটকলের জন্য আমার লড়াই গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্যের ২১টি সক্রিয় পাট ইউনিয়ন সর্বসম্মতভাবে আমার অবস্থানের প্রশংসা করেছে।

প্রশ্ন: আপনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আপনার অবস্থান নরম করেছেন…

অর্জুন সিং: আমার একমাত্র ফোকাস আমার ভোটাররা, ভালো রাজনীতিবিদরা সেটা করেন। আমি আওয়াজ তুলেছি বলে (পাটকলের জন্য) আমার দলের অনেকেই প্রশংসা করেছেন। ব্যারাকপুরকে একসময় ম্যানচেস্টারের সঙ্গে তুলনা করা হত। পশ্চিমবঙ্গে ৬২টি পাটকল ছিল। ২০২১-২২ পর্যন্ত শুধু ব্যারাকপুরে ২০টি ছিল৷ এখন, মাত্র 14টি মিল সচল রয়েছে৷

প্রশ্ন: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাঁচা পাটের দামের ঊর্ধ্বসীমা শিথিল করলে সংশ্লিষ্টদের একাংশ উপকৃত হবে, কিন্তু চাষিরা নয়।

অর্জুন সিং: জুট কমিশনার কর্তৃক নির্ধারিত প্রতি কুইন্টালের দাম সাড়ে ৬ হাজার টাকাই পাটকলগুলি বন্ধের একমাত্র কারণ। এতে বিশাল ক্ষতি হচ্ছে। বাজার মূল্য প্রায় ৭ হাজার ২০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল, তার বদলে দেওয়া হচ্ছে ৬,৫০০ টাকা। কোন মূল্যই বেঁধে দেওয়া উচিত নয়। আমার প্রশ্ন আপনি যদি কৃষকদের পক্ষে হন তবে পাট চাষিরা কেন ভর্তুকি পাচ্ছেন না? সরকার কেন মিলগুলি থেকে সব পাট কিনতে পারছে না? এখানে রহস্য-সম্পর্ক রয়েছে। এর ফলে প্লাস্টিক শিল্পের পথ প্রশস্ত হচ্ছে। সরকার মনে করলেই জুট কর্পোরেশনকে আরও শক্তিশালী করতে পারে এবং মিলগুলি থেকে সব পাট কিনতে পারে। এতে কৃষক ও মিল উভয়ই বাঁচবে। বোর্ডটি বর্তমানে সাদা হাতির মতো কাজ করছে যা আদতে কোনও কাজে আসছে না। সরকারের উচিত পাট কর্পোরেশনকে বার্ষিক মূল্য নির্ধারণের অনুমতি দেওয়া। কর্পোরেশনের সব জায়গায় অফিস আছে, কিন্তু পরিকাঠামো নেই বললেই চলে।

প্রশ্ন: আপনি বলেছিলেন যে এই ইস্যুতে টিএমসি-র আরও আক্রমণাত্মক হওয়া উচিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা করেছেন তা কি আপনি সমর্থন করেন না?

অর্জুন সিং: ১৩ই ডিসেম্বর একটি বৈঠকে, বস্ত্রমন্ত্রকের সচিব ভারতের পাট কমিশনারকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, তিনি কিসের ভিত্তিতে প্রতি কুইন্টালের দাম ৬.৫০০ টাকা নির্ধারণ করেছেন। আমি জোর দিয়েছি যে তারা পাবলিক ডোমেনে মিটিংয়ের কার্যবিবরণী প্রকাশ করুক। একটা অশুভ জোট কাজ করছে। পাটকল শ্রমিকদের হয়ে কথা বলার কি কেউ নেই? শুধু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী কেন, আপনার সম্মানিত কাগজের মাধ্যমে আমি অসম, বিহার এবং ওডিশার মুখ্যমন্ত্রীদেরও পাট কমিশনারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একত্রিত হতে বলতে চাই। এই সিদ্ধান্ত কীভাবে পাট শিল্পকে ধ্বংস করবে সে বিষয়ে তাঁদের ভারত সরকারকে চিঠি দেওয়া উচিত। আমি লোকসভাতেও এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছি। পাট কমিশনারের উদ্দেশ্য জানতে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে একটি ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করা হোক।

প্রশ্ন: রাজ্য সরকার ২০২০ সালের ডিসেম্বরে কাঁচা পাটের প্রতি কুইন্টালের দাম ৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করার সুপারিশ করেছিল, যা কমিশনার দ্বারা নির্ধারিত প্রতি কুইন্টালের চেয়ে কম…

অর্জুন সিং: সেটি একটি অস্থায়ী সিদ্ধান্ত ছিল। কারণ ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পরে ২০২০ সালে দাম প্রতি কুইন্টাল পাটের দাম ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল। যার ফলে ৬০ হাজার হেক্টর পাট ক্ষেত ধ্বংস হয়েছিল এবং অর্ধেক পাট গাছের ক্ষতি হয়েছিল। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে, এতে কোনও সন্দেহ নেই। একথা বলতে চাই যে, আমার জন্ম পাটকল এলাকায়, সারা জীবন এখানেই কাটিয়েছি। শ্রমিকদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। আমি পাট শ্রমিকদের পক্ষে কথা বলি। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও এই ইস্যুটিগুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার আবেদন করছি।

প্রশ্ন: এর আগে, আপনি বস্ত্র মন্ত্রকের বিরুদ্ধে রাজ্যের পাট শিল্পকে ধ্বংস করার চেষ্টার অভিযোগ করেছেন।

অর্জুন সিং: আমি জুট কর্পোরেশনের কমিশনারের পদক্ষেপেরে বিরুদ্ধে মন্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। ওনার এইসব নিয়ে কোনও ধারণা নেই। পীযূষ গোয়েল রাজ্যসভা থেকে জিতে মন্ত্রী। তিনি কীভাবে বুঝবেন পাটকলের কী হয় এবং এই শিল্পের হালহকিকত। কমিশনার মন্ত্রককে বিভ্রান্ত করছেন। একদিকে, এতে পাটজাত পণ্যের পরিবর্তে প্লাস্টিকের জিনিসকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদী) পাটকে পরিবেশবান্ধব বলে প্রচারের আহ্বান জানিয়েছেন।

Read in English

bjp Mamata Banerjee Arjun Singh Barrackpore General Election 2024 2024 General Election
Advertisment