আবারও গোঁসা অর্জুনের। ফের দলবদল, ঘরওয়াপসি। এবার পদ্ম ছেড়ে জোড়া-ফুলে অর্জুন। চটকল শ্রমিকদের ইউনিয়ন করে রাজনীতিতে হাতেখড়ি। তারপর হাত পতাকা নিয়ে কাউন্সিলর। সেই সনয়ই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলবে যোগদান। ঘাস-ফুল প্রতীকের বিধায়ক হিসাবে বিধানসভায় পদার্পন। সেখান থেকে সোজা লোকসভায়। তবে, ঘাস-ফুলের হয়ে নয়, পদ্ম প্রতীকে দিল্লি যাত্রা হয় অর্জুনের। ঠিক তিন বছরের মাথায় আরও একবার দল পাল্টালেন ব্যারাকপুরের সাংসদ। গন্তব্য পুরনো দল তৃণমূলে। একাধিকবার দলবদল করলেও ভোটে জেতা কার্যত অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন অর্জুন সিং।
একনজরে অর্জুনের চমকপ্রদ রাজনৈতিক জীবন-
১৯৬২ সালের ২রা এপ্রিল অর্জুন সিং জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা সত্যনারায়ণ সিং ছিলেন কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মী। হাত প্রতীকেই ভাটপাড়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তিনবার জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন।
চশমা-ই-রহমত উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা করেছেন ষাটোর্ধ্ব রাজনীতিবিদ অর্জুন সিং। এরপর ভর্তি হন নৈহাটির ঋষি বঙ্গিমচন্দ্র কলেজে। কিন্তু, চটকল শ্রমিকদের আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়ায় কলেজের পড়া শেষ করতে পারেননি তিনি। চটকলের মজদুর হয়ে তিনি কাজ করেছেন।
১৯৯৫ সালে ভাটপাড়া পুরসভার কাউন্সিলর নির্বাচিত হন অর্জন। সেই তাঁর ভোট রাজনীতির হাতেখড়ি।
১৯৯৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা হয়। এর কিছুদিন বাদেই কংগ্রেস ছেড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠিত দলে যোগ দেন অর্জুন সিং। ২০০১ সালের বিধানসভা ভোটে ভাটপাড়া থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হন তিনি। ভোটে পরাজিত করেন সিপিএমের প্রার্থী রামপ্রসাদ কুণ্ডুকে। ২০০১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তৃণমূলের হয়ে ভাটপাড়ার বিধায়ক ছিলেন অর্জুন সিং। জিতেছেন মোট চারবার।
২০০৪ সালের লোকসভা ভোটে ব্যারাকপুর কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন অর্জুন সিং। তবে, সিপিএমের তড়িৎবরণ তোপদারের কাছে হেরে যান তিনি।
তৃণমূল কংগ্রেসের 'হিন্দি সেল'-এর সভাপতি ছিলেন অর্জুন সিং। এছাড়াও তিনি জোড়া-ফুলের তরফে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খন্ড এবং পাঞ্জাবের 'ইনচার্জ' ছিলেন।
ভাটপাড়া পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন অর্জুন সিং।
২০১৯-এর লোকসভা ভোটে ব্যারাকপুর কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রার্থী পদ দাবি করেছিলেন অর্জুন। তবে, দলের নেত্রী এই রাজনীতিবিদের সেই দাবিকে মান্যতা দেননি। ব্যারাকপুর থেকে প্রার্থী করা হয় দিনেশ ত্রিবেদীকেই। ফলে গোঁসা হয় অর্জুন সিংয়ের। ভোটের আগে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-তে যোগদান করেন তিনি। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে ব্যারাকপুর থেকে বিজেপি প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি এবং জয়ী হন।
আরও পড়ুন- অভিষেকের অফিসে ঢুকলেন অর্জুন, আজই ফুলবদলের জোরাল সম্ভাবনা
বিজেপি সাংসদ অর্জুনের বিরুদ্ধে পুলিশের খাতায় একাধিক মামলা রয়েছে। এর বেশিরভাগই তাঁর বিজেপিতে যোগদানের প্রথম দু'মাসের মধ্যে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের গণনার আগে ব্যারাকপুর পুলিশ অর্জুনকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করেছিল। সিং এরপর সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন এবং আদালত তাঁকে স্বস্তি দেয়। তাঁর বাড়িতেও বোমা হামলা হয়েছিল এবং তাঁর গাড়িটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অভিযোগ, রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের কর্মীরা পাথর, বোমা এবং ইট ছুঁড়ে হামলা চালিয়েছিল। অর্জুন-পুত্র পবণ সিংকেও গাড়িতে হামলার শিকার হতে হয়েছিল বলে অভিযোগ ছিল।
বিজেপির দাবি, নির্বাচনের পরেও, সাংসদ অর্জুন সিং-এর বিরুদ্ধে হিংসা অব্যাহত ছিল। তাঁর বাসভবনে সাত রাউন্ড গুলি চালিয়ে হামলা চালানো হয়েছিল। এছাড়া তাঁর অফিসের কাছেও দুটি বোমা মারা হয়েছিল।
এরমাঝে ভাটপাড়া পুরসভার কর্তৃত্ব হারান অর্জুন।
একুশের ভোটে ভাটপাড়ায় তাঁর ছেলে পবন সিং জিতলেও গোটা বাংলায় বিজেপির ঝরাশায়ী অবস্থা হয়। ভোটের পর পরই তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়া একাধিক নেতারই ঘরওয়াপসি ঘটে। দলের বঙ্গ শাখার থেকে মুখ ফেরান কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও। একেরপর এক বিধানসভা ও লোকসভা উপনির্বাচনে ও হারেন গেরুয়া প্রার্থীরা। পুরসভা ভোটে বিপর্য হয় বিজেপির।
এরই মধ্যে চটের দাম নিয়ে অর্জুন সিং কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন। বড় আন্দোলনের হুমকি দেন মন্ত্রী পিযূস গোয়েলের দফতরের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হতে থাকে। অবস্থা বেগতিক বুঝে অর্জুনকে দিল্লিতে ডেকে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। মেনে নেওয়া হয় অর্জুনের দাবি। প্রত্যাহার করা হয় বর্ধিত দাম।
কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হল না। ফের দলবদল করে তৃণমূলে নাম লেখালেন অর্জুন সিং।